উন্নয়নের জন্য অতীতের মতই পাশে থাকুন: জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

7

পূর্বদেশ অনলাইন
টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের তিন বছর পূর্তির দিনে গত ১৩ বছরের উন্নয়নগাথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; জনগণকে বললেন আগামীতেও আওয়ামী লীগের পাশে থাকতে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর ‘আস্থা রাখার কারণে’।

“পর পর তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিয়ে আপনারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছেন। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি যাতে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে সামিল হতে পারে।

“এজন্য অতীতে যেমন আপনারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে থাকবেন, এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।”

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে টানা এতদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড কারও নেই।

বিগত বছরগুলোর মত এবারও সরকার গঠনের বার্ষিকীতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সরকারপ্রধান। তার এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা হয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তার সরকারের বর্তমান এবং আগামী দিনের সকল কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত বিনির্মাণ।

“অফুরন্ত জীবনীশক্তিতে বলীয়ান তরুণ প্রজন্মই পারে সকল কূপণ্ডুকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন।

“তারুণ্যের শক্তিই পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতের পানে।”

আওয়ামী লীগ সরকারে এসে গত ১৩ বছরে কী কী করেছে, তার মূল্যায়নের ভার জনগণের ওপর দিয়েই শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।”

সেই সাফল্য আর ‘ওয়াদা’ পূরণের দীর্ঘ বিবরণ প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে ‘দুর্বার গতিতে’ এগিয়ে যাচ্ছে, তা অনেকেরই ‘সহ্য হচ্ছে না’।

“দেশ-বিদেশে বসে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাই নানা ষড়যন্ত্র করছে এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার জন্য। মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিদেশে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।”

এ বিষয় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে আমাদের সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না। জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘কঠোর অবস্থান’ নিয়েছে। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না।

“আমরা কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।”
সরকারপ্রধান তার ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ‘সশ্রদ্ধ সালাম’ জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকদের হাতে নিহত পরিবারের সদস্যদের কথা স্মরণ করেন।

এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কথা স্মরণ করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘অগ্নি সন্ত্রাসে’ যাদের প্রাণ গেছে, তাদের স্মরণ করার পাশাপাশি আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

তিনি বলেন, “অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। সামরিক শাসনের যাতাকলে নিষ্পেষণ, গণতন্ত্রহীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিচ্যূতি, ইতিহাস বিকৃতিসহ শাসকদের নানা অপকীর্তি প্রত্যক্ষ করেছে এ দেশের মানুষ। জনগণের সম্পদ লুটপাট করে, তাদের বঞ্চিত রেখে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে রেখেছিল।”

জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি। আমার একটাই লক্ষ ছিল জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।”

দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় ১৯৯৬ সালে। সে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। মাঝখানে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সে প্রচেষ্টায় ছেদ পড়েছিল।”

২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ফিরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি ‘আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধন করেছে। ২০২১ সাল ছিল আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক অভূতপূর্ব স্বীকৃতির বছর। গত বছর আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে এই অর্জন বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের।”

দেশের মানুষের কাছে শতভাগ বিদ্যুত পৌঁছে দেওয়া, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, গ্রামগুলোকে উন্নয়ন ভাবনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, দেশের মানুষের জন্য সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দেওয়াসহ দেশের মানুষের কল্যাণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর।”

মহামারীর সংকট যে এখনও কাটেনি, সে বিষয়েও দেশবাসীকে সতর্ক করেন সরকারপ্রধান। সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”