উন্নয়নকামী দেশে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণা জরুরি

12

 

বর্তমান যুগ, নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করার যুগ। সময়োপযোগী উদ্ভাবিত তথ্যপ্রযুক্তির কৃতকৌশল দিয়ে দেশকে টিকিয়ে রাখার যুগ। তা দিয়েই দেশকে এগিয়ে নেয়ার যুগ। উন্নয়নের ধারায় টিকে থাকার জন্য, দেশকে অগ্রসর রাখার জন্য একটি জাতি কতটুকু সেই সক্ষমতা অর্জন করেছে তার অবস্থা জানা তাই দরকার। এই নিয়ে প্রশ্ন তোলাও জরুরি। জরুরি এই জন্য যে এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রবল হাওয়ায় তথা , তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে একটি দেশ, উন্নয়নকামী দেশ হতে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পূর্বশর্ত হল জাতির ভবিষ্যৎমুখিতা; চিন্তা, চেতনা ও মননশীলতায়। জাতীর চিন্তা, চেতনা ও প্রাজ্ঞতাকে ভবিষ্যতমুখী সময়ের চাহিদায় রাখতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত একমুখী মানসম্মত শিক্ষা । যা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের বরাদ্দ দিতে হয়। সেই মহা আয়োজনে যেন বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার ব্যাপ্তি ঘটাতে পারে। তা মানসম্মত হওয়ার জন্য নিশ্চিত ব্যবস্থা করতে প্রাজ্ঞময় দূরদর্শিতার প্রয়োজন। অতীতমুখী হওয়ার চেয়ে ভবিষ্যতমুখী বেশি হওয়ার জন্য।
এখন থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে, লৌহ সভ্যতার পূর্বে লেখা উদ্ভাবন করতে পারায় বড় বাঁচা বেঁচে যায় মানুষ। মানুষের অর্জিত নানা ধারণা ও জ্ঞানগুলোকে লেখা উদ্ভাবনের কারণে আর মস্তিষ্কে রাখার দরকার হল না,মুখস্ত করার শ্রম থেকে মুক্তি মিলল। মানুষের স্মৃতিধর হওয়ার গুরুত্বও কমে গেল; মানব মস্তিষ্কের বাইরে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও তথ্য রাখা সম্ভব হল বলে। জ্ঞানতথ্য ও অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে পারায়। এতে সহজে মানব মস্তিষ্কের বাইরে তথ্যজ্ঞান শুধু সংরক্ষণ করা সম্ভব হল তা শুধু নয়, জ্ঞানতথ্যের সঞ্চালন ও উদ্ভাবন পূর্বের তুলনায় সহজতরও হল। এতে যুগোপযোগী প্রায়োগিক জ্ঞানের উদ্ভাবন ও সঞ্চালন হতে থাকে, দীর্ঘকাল কার্যকর বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা দিয়ে।
এখন আর কাগজ-কালির লেখালেখিতে তথ্যজ্ঞান সংরক্ষণ করতে হয় না, সঞ্চালনও করতে হয় না। কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় তা সংরক্ষণ ও সঞ্চালন করা শুরু হয়েছে। ফলে জ্ঞানের বিস্তার ও উদ্ভাবন হাজারগুণ বেড়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন ও সহজতর সংস্করণ বা নতুন কৃতকৌশলের দ্রæত বিকাশ ও বিস্তার হতে থাকে। তাই আগে হাজার বছর সময় নিয়ে যে পরিমান জ্ঞান অর্জিত হত শতবছরে সেই একই পরিমান জ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণা দিয়ে অর্জিত হওয়া শুরু হল। আবার এখন সেই শত বছরের সমপরিমান জ্ঞান এক দশকে অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। অন্য কথায় প্রতি দশ বছর অন্তর অন্তর পৃথিবীর জ্ঞান কাঠামো ও প্রযুক্তির ধরন বদলে যাচ্ছে। জ্ঞানের পুরাতন রাজ্য ছেড়ে নতুন তথ্যজ্ঞান রাজ্যে প্রবেশ করতে হচ্ছে পৃথিবীকে। উন্নয়নের বিকাশের পথে প্রতি দশ বছর অন্তর একটি করে বড় ধাপ অতিক্রম করতে হচ্ছে উন্নত দেশকে। উন্নয়নকামী দেশকে তা সম্ভব করার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এই ধাপ অতিক্রমের মূল শক্তি ও যোগ্যতা হল বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় এগিয়ে থাকা। নতুন নতুন জ্ঞান সৃজন করা আর নতুন ও সহজতর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা । যা সংস্কারাচ্ছন্ন ও জ্ঞানবিমুখ সমাজে সহজে সম্ভব না। কেননা,সেই সমাজে একটি পরমাণু ভাঙা এবং সে সমাজ হতে মহাকাশ পারি দেয়া সম্ভব হতে পারে, কিন্ত সেই সমাজের সংস্কার ভাঙা তত শ্রম-মেধায় সম্ভব হয় না।
যে উন্নয়নকামী দেশ বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় এগিয়ে থাকে সে জাতি উন্নয়নকামী দেশ হতে উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। প্রথম শিল্পবিপ্লব শুরু হয় বাষ্পীয়ইঞ্জিনের উদ্ভাবন দিয়ে, তখনকার উন্নয়নকামী দেশ ইংল্যান্ডে। সেই তথ্যপ্রযুক্তির কৃতকৌশলে দেশটি এগিয়ে যায়। বিংশ শতাব্দিতে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব ঘটালো বিজ্ঞানচর্চায় ও গবেষণায় প্রাপ্ত নতুন জ্ঞান আর তথ্যপ্রযুক্তির কৃতকৌশল দিয়ে। যার অপর নাম তথ্য বিপ্লব, তা দিয়ে মানুষের দৈহিক আড়ম্বর বেড়ে গেল,দীর্ঘজীবী হওয়া শুরু হল। মানুষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও মননের চর্চায় স্বাধীনতা লাভে করে; তার গভীরতর বুদ্ধিচর্চায় ও সৃজনশীল কাজে। যে কাজ দিয়ে জাতি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। প্রশ্ন সেখানে দেখা দেয়, সেই শ্রেষ্ঠ হওয়ার পথে কোন দেশ বা জাতি থাকে বা থাকতে পারে,সেটা নিয়ে। কোন সঠিক ও স্থায়ী প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব হয়ে উঠে ? সময়ের চাহিদা মিটায়ে,দেশকে টিকায়ে রাখার জন্য, এগিয়ে নেবার জন্য। সেই প্রশ্ন জাগা নিয়ে এই লেখার সূচনা হয়েছিল। না, সব দেশ বা জাতি সেই উন্নয়নের স্রোতধারায় থাকতে পারে না। তার জন্য স্থিতিশীল দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানচর্চা ও মৌলিক গবেষণার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত রাখতে হয়। এই তথ্যবিপ্লবের যুগে ধ্যানে বসে জ্ঞানী হয়ে নতুন জ্ঞান সৃজন ও তথ্যপ্রযুক্তির নব কৃতকৌশল উদ্ভাবন সম্ভব না। বিস্তৃত ও সু² বিষয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়, তা সম্ভব করার জন্য। যাতে নব জ্ঞান সৃজন ও তথ্যপ্রযুক্তির নতুন কৃতকৌশল উদ্ভাবন হয় বা উদ্ভাবনের সম্ভাবনার পথ খোলা থাকে। যা নিশ্চিত করে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা।
অন্য কথায় যে জাতি নব নব জ্ঞান সৃজনে ও নতুন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকার সক্ষমতা রাখে সে জাতি উন্নয়নকামী দেশ হতে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারে। জ্ঞান সৃজনে আর তথ্যপ্রযুক্তির নবকৃতকৌশলে সক্ষম জাতি পূর্বকালের মত শুধু প্রাকৃতিক সম্পদকে দেশের মূল সম্পদ বলে মনে করে না। তথ্য বিপ্লবের এই যুগে, সেই জাতি সম্পদের উৎস করে নেয় মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি, সৃজনশীলতাকে, যাদের ঠিকানা হল মানুষের মস্তিষ্ক। সেই সব উৎসের মস্তিষ্কককে বিকাশমান রাখার সময়োপযোগী ক্ষেত্র হল মানসম্মত শিক্ষায় বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা। তাই বিজ্ঞানচর্চার ও গবেষণার সফলতা বিফলতা দিয়ে জাতিতে জাতিতে বিভেদ তৈরি হয়, বৈষম্য তৈরি হয়। আমরা হয়ত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ভেতর দিয়ে উন্নত ও অনুন্নত দেশের মানুষের মধ্যে সম্পদ ও জীবনযাত্রায় ব্যবধান লক্ষ্য করি। কিন্তু তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি ব্যাপক ব্যবধান তৈরি হয় বুদ্ধি, চেতনা ও উপলব্ধির মাত্রাগত মানের স্তর দিয়ে । পুরানো সমাজে সম্পদ শোষণ আর বঞ্চনার বাহ্যিক জীবনযাত্রায় যতই ব্যবধান সৃষ্টি করুক ,জ্ঞান, উপলব্ধি ও মানসিক চেতনায় তেমন কোন পার্থক্য তখন মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয়নি। কারণ তখন সবাই একই ধরনের বিশ্ব ধারণা, বিশ্বাস ও ভাবনার প্রভাব বলয়ে অবস্থান করত। কিন্তু শিক্ষা ও গবেষণায় মনোনিবাস কমবেশি করায় আজ সময়ের পরিক্রমায় একই মানবজাতির মধ্যে তৈরি হয়েছে বৈষম্য, বিভেদ। উন্নত ও অনুন্নত জাতিতে। যেমন কৃষিবিপ্লবে যান্ত্রিকরণের ধাপ পেরিয়ে রাসায়নিক বিজ্ঞান প্রয়োগের ধাপে আসতে পারা ও আসতে না পারায় জাতিতে জাতিতে বিভেদ তৈরি হল। কৃষিবিপ্লবের পরের ধাপ শুরু হল জীবপ্রযুক্তি দিয়ে। এটাতে সক্ষমতা অর্জন ও তা প্রয়োগে সফল উন্নয়নকামী দেশ উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। আর আমরা কৃষিবিপ্লবের যান্ত্রিকতার ধাপ এখনও পুরো অতিক্রম করতে পারিনি।
দেশের সম্পদের যথার্থ ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জন করে, মস্তিষ্কপ্রসূত সম্পদ সৃষ্টিতে ও গবেষণালব্ধ নবজ্ঞান প্রয়োগে নিরন্তর প্রচেষ্টা থেকে উন্নত জাতি হওয়া যায়। এই জন্য মস্তিষ্কজাত জ্ঞান, বুদ্ধি, সৃজনশীলতাকে সম্পদ হিসাবে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়, উন্নত জাতি গঠনে। তাতেই মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার অগ্রগতি সম্ভব হয়, আর উন্নত জাতি হওয়া যায়। যার জন্য মান সম্মত শিক্ষা ও গবেষণাকে জাতীয় আকাঙক্ষার মূল চেতনায় রাখা হয়।
মানসম্মত শিক্ষা আর গবেষণা জাতীয় চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রে না থাকলে, তা কার্যকর করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে, যাই দৃশ্যমান উন্নয়ন করুক না কেন উন্নত জাতি হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। আমরা দেখি পৃথিবীর ৩০ ভাগ মানুষ আমেরিকা ও পূর্বপশ্চিম ইউরোপে বাস করলেও সেসব দেশ বিশ্বের মোট বিজ্ঞানীদের ৮৬% বিজ্ঞানী ধারণ ও পালন করে যাচ্ছে। যার জন্য সেসব উন্নয়নকামী দেশ আজ উন্নত দেশ হয়ে উঠতে পেরেছে। বিজ্ঞানচর্চায় ও গবেষণা লব্ধ নব নব জ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে। সেখানে দেখা যায় পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের শতকরা ৮৬ ভাগ বিজ্ঞানীর বসবাস। আর মৌলিক গবেষণার হিসাবে শতকরা ৯৫ ভাগ গবেষণা এসব দেশে হয়ে থাকে। মানসম্মত শিক্ষা, বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় বিস্তৃতি ঘটানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকায় আর তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়ায় এই সফলতা। তা দিয়ে জাতির অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছে। আর আমেরিকা ও পূর্ব-পশ্চিম ইউরোপের বাইরের দেশগুলোতে থাকে মাত্র শতকরা ১৪ ভাগ বিজ্ঞানী, যেখানে পৃথিবীর অথচ ৭০ ভাগ মানুষ বাস করে। পৃথিবীর ৭০ ভাগ মানুষের দেশগুলোতে সামাজিকভাবে বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটাতে না পারা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারা, গবেষণায় সর্বোচ্চ মনোযোগ রাখতে না পারা এবং চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দিতে না পারা ইত্যাদি বড় বাধা। এই সব বাধায় তাদের অগ্রগতি হয় না, পিছনে পড়ে থাকতে হয়। বস্তুগগত সম্পদে এসবের কোন কোন দেশ চাকচিক্যময় হলেও নির্বস্তুক মস্তিষ্কজাত সম্পদে তথা তাদের চিন্তা, চেতনা ও মননের জগত ঊষর বালিময় মরুভূমির মত;যেখানে নব জ্ঞানের কোন বীজ বপন করলে সে জ্ঞানবীজ উদগমিত হতে পারে না,তা শুকিয়ে যায়। ফলে উন্নত দেশগুলোর তথ্যপ্রযুক্তির পুরানো ও অব্যবহার্য হয়ে পড়া মালামাল ও প্রযুক্তিগুলো এই পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে গ্রহন করতে হয়। পুরানো তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে তারা সচল থাকতে পারে বটে, কিন্তু এগিয়ে থাকতে পারে না। এগিয়ে থাকতে হলে তো নতুন জ্ঞানে উদ্ভাবিত সহজতর প্রযুক্তি লাগবে,যা আসে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা থেকে। অনুন্নত দেশে রাজনৈতিক নানা অস্থিরতা থাকে, পশ্চাদপদ চিন্তাধারা থেকে মানুষ মুক্ত হতে পারে না। যার কারণে জ্ঞানগামী সংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। ফলে বিজ্ঞানচর্চার বিস্তৃতি সহজে সেখানে করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে মৌলিক গবেষণার ধারাবাহিকতার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ যেমন দিতে পারে না,তেমনি গবেষণার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করাও সম্ভব হয় না।
তাই একটি দেশ এগিয়ে থাকতে হলে বিজ্ঞান চেতনায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়। পাশাপাশি বিজ্ঞানী সৃষ্টির জন্য, গবেষণায় মনোযোগ ও গুরুত্ব দেয়ার জন্য বড় পরিমানের অর্থের বরাদ্দ দিতে হয়। কেননা, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার সাথে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায় তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শতকরা ৮৭’৫০ভাগ হয়েছে নতুন গবেষণা লব্ধ তথ্য ও কৌশলের কল্যাণে। বাকী ১২’৫০ ভাগ মাত্র এসেছে, বর্ধিত বিনিয়োগের শ্রম দ্বারা। এতে দেখা যাচ্ছে গবেষণায় মেধা ও জনশক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নকামী দেশগুলোর বিপুল ব্যবধানের অনুসঙ্গ রূপে রয়েছে গবেষণা ও উন্নয়নে অর্থ বিনিয়োগের ব্যবধান। এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিল্প উন্নত দেশগুলোতে গবেষণায় জাতীয় আয়ের ৩ ভাগ বিনিয়োগ করে,আর আমাদের মত দেশগুলোতে বিনিয়োগ করে মাত্র ০’৩ভাগ, মুদ্রার মানে যা ২০০ গুণ কম। আবার উন্নয়নকামী দেশের সেই স্বল্পবরাদ্দে গড়ে উঠা দেশীয় স্বল্প সংখ্যক বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সিংহভাগ বিজ্ঞানী-গবেষক বিদেশে তথা উন্নত দেশে নানা কৌশলে পাচার হয়ে যায়। নগদ অর্থ বিদেশে পাচার হওয়ায় যে ক্ষতি হয় তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি ক্ষতি হয় জাতিকে মেধাশূন্য করে বিজ্ঞানী-গবেষকরা বিদেশে চলে যাওয়ায়। যা আরও বেশি বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক।
উন্নয়নকামী দেশে তাই অর্থনৈতিক প্রকৃত মুক্তির জন্য মানসম্মত শিক্ষায় বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প কিছু নেই। এই তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে জাতিকে টিকিয়ে রাখতে, এগিয়ে নিতে একমুখী মানসম্মত শিক্ষায় বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার জন্য দীর্ঘ মেয়াদের মহা পরিকল্পনা প্রয়োজন। সেই মহাপরিকল্পনায় বেশি পরিমাণের অর্থ বরাদ্দ রাখা জরুরি। যেখানে জাতীয় চেতনা ও মনোযোগ কেন্দ্রিভূত থাকবে। যাতে উন্নত জাতি হওয়ার জন্য মেধাশক্তি ও গবেষণার যথাযথ বিকাশ ঘটানো যাবে। আর উন্নত জাতি হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক