উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে তরুণদের উৎসাহিত করতে হবে

36

দেশে যেভাবে শিক্ষার হার বাড়ছে, সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না, এ অভিযোগ অনেক পুরনো। মনে রাখা প্রয়োজন যে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এ হার কমিয়ে এনেছে। ভারতে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে। এতে বিশ্বজুড়ে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অবস্থা এবং পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি কিংবা আগামী বছরেও হারটি কমবে না। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। তবে বাংলাদেশের চেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান ও দ্বীপদেশ মালদ্বীপে বেকার মানুষের হার বেশি। সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব আবারও দেখা দিয়েছে। যদিও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ অর্থনীতিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের পথ বলা যায় পুরোপুরি রুদ্ধ হয়ে আছে। ফলে বেকারত্বের পরিস্থিতির বিশেষ কোনো পরিবর্তন হবে না, বরং বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় ‘চাকুরি নয়, উদ্যোক্তা হও’ এ ¯েøাগানের প্রতি তরুণদের মনোসামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দেশে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্ততি নেয়। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-যুবক থেকে স্বাক্ষরজানা মানুষও রয়েছে। তাদের নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার মতো যোগ্যতা থাকলেও শৈশব থেকেই তাদের চাকরির পেছনে ছোটার জন্য পরিবার ও সমাজ থেকে উৎসাহিত করা হয়। ফলে পছন্দের চাকরি না পেয়ে অনেকে বছরের পর বছর কর্মহীন জীবনযাপন করে। দীর্ঘ সময় বেকার থাকার ফলে অনেকে হতাশায় ভুগতে থাকে। তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা হলে নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থানেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের তরুণরা যাতে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে পারে, এ জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেয়া দরকার। তবে এটি করতে হবে, সরকারকে। সরকার সুযোগ ও উৎসাহ সৃষ্টি করলে তরুণরা তা গ্রহণ না করার উপায় থাকবে না। আশার কথা সরকার তরুণদের জন্য সেই ব্যবস্থা শুরু করেছে। সম্প্রতি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে তরুণদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০ উদযাপন উপলক্ষে রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষা শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা করতে হবে। যুবসমাজের আত্মকর্মসংস্থান শুরু করার জন্য মূলধন হিসেবে সরকার বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইসিটি ক্ষেত্রটা এখন সব থেকে আধুনিক, সে জন্য যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকার করছে।’ তিনি আরও বলেছেন, সরকার কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন করে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুবসমাজ শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, নিজেরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করবে। সরকার কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, এটি ইতিবাচক। এ ক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি বা স্বল্পশিক্ষিত তারাও যাতে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমাদের তরুণরা যাতে সামনের সারিতে থাকতে পারে, তার জন্য আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা ও চর্চা আরও বাড়াতে হবে। কম্পিউটার প্রযুক্তিবিষয়ক আধুনিক জ্ঞান অর্জন করে বিপুলসংখ্যক কর্মী আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রযুক্তি বা যন্ত্রাংশের অভাবে কোনো দক্ষ বা অদক্ষ কর্মী যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে।