উত্তর মেরু : বরফের সঙ্গে গলে পড়ছে বিনা পয়সার সুরক্ষা ব্যবস্থা

118

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং এর প্রভবে উত্তর মেরুর বরফ গলতে থাকা বরফ যতটা চিন্তায় ফেলেছে পরিবেশবাদীদের, ততটাই সামরিক বিশেষজ্ঞদের। বরফে ঢাকা অঞ্চলটি বিনা পয়সার সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কার্যকর ছিল। প্রতিকূল প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য একে করে তুলেছিল এক অনন্য সন্ত্রী। কিন্তু বরফের সঙ্গে গলে পড়ছে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, যত বেশি বরফ গলে ভূমি উন্মুক্ত হচ্ছে উত্তর মেরুতে তত বেশি চিন্তিত হয়ে উঠছেন সংশ্লিষ্ট দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
উত্তর মেরু বিষয়ক আলোচনার সবচেয়ে বড় স্থান ‘আর্কটিক ফ্রন্টিয়ার কনফারেন্স।’ সেখানে উপস্থিত হওয়া কূটনীতিকদেড় ভাষ্য থেকে জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় উত্তর মেরুর বরফ গলছে দ্বিগুণ হারে। প্রতি সেকেন্ডে গলে যাচ্ছে ১০ হাজার টনের চেয়েও বেশি বরফ। ফলে উন্মুক্ত হচ্ছে নতুন জলপথ। নতুন জলপথ উন্মুক্ত হওয়ায় চলছে বাণিজ্যিক জাহাজ। চলাচলের এ ই সুক্সগের কারণেই ঝুঁকি বাড়ছে উত্তর মেরুকে নিয়ে।
রাশিয়া কোলা উপদ্বীপে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী নরওয়েও উত্তর মেরুর কাছে তার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। গত অক্টোবরে ন্যাটো ট্রাইডেন্ট জাংকচার নামে উত্তর মেরু কেন্দ্রিক বিশাল সামরিক মহড়া করেছে। এতে অংশ নিয়েছিল ৪০ হাজার সেনা। গত এক দশকে নরওয়েতে এটি ন্যাটোর সবচেয়ে বড় মহড়া। এর ঠিক এক মাস আগেই যুক্তরাজ্য ঘোষণা করে তাদের নতুন ‘উত্তর মেরু প্রতিরক্ষা নীতি। এর আওতায় ১০ বছরে নরয়েতে ৮০০ কমান্ডো মোতায়েনের ঘোষণা দেয় দেশটি। একই সঙ্গে আইসল্যান্ডের কাছে টহল দেওয়ার জন্য টাইফুন জঙ্গি বিমান মোতায়েনেরও ঘোষণা দিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রও অঞ্চলটিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য পাঠাচ্ছে মেরিন সদস্যদের।
তারা উত্তর মেরুর জাহাজ চলাচল পথে টহল জাহাজ পাঠানোরও পরিকল্পনা আছে তাদের। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূ-রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ক্লাউস ডডস মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা দেশগুলোর যে দুশ্চিন্তা দেখতে পারছি তার মূল কারণ উন্মুক্ত হতে থাকা নতুন জলপথ। উত্তর মেরু অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অন্যন্য করে রেখেছিল। কিন্তু বরফ গলে এখন যদি উত্তর মেরু বিশ্বের আর দশটা সাগরের মতোই হয়ে যায় তাহলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে উদ্ভূত সুরক্ষা ব্যবস্থাটি আর কার্যকর থাকবে না।’
এদিকে উত্তর মেরু কেন্দ্রিক তৎপরতায় পাল্টে গেছে নরওয়ের ছোট্ট শহর ট্রমসোর বাস্তবতা। এককালে খুব ছোট একটি বাণিজ্যিক এলাকা ছিল এটি; এখন পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু দেশটির জন্য অপেক্ষা করছে এমন ভবিষ্যত, যা তার ইতিহাসের জন্য বিস্ময়কর। শহরটির মেয়র ক্রিস্টিন রোয়মো জানিয়েছেন, উত্তর মেরুর জলপথ উন্মুক্ত হতে থাকায় ছোট শহরটিতে নিজেদের ঘাঁটি গাঁড়তে চায় বিশ্বের নানা প্রান্তের দেশ। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পাকিস্তান, মরক্কো, সিঙ্গাপুর ও চীনের মতো দেশ।