উত্তরবঙ্গ থেকেই আসে চাটগাঁর ‘রেড চিটাগাং’

361

গোলাকার ও কুঁজো চেহারা। খাটো শিং। ধবধবে লাল রঙ। যে কারণে কেউ কেউ বলেন লাল গরু। চাঁটগার বাজারে মোটা শরীরের ‘রেড চিটাগাং’ জাতের এমন গরুর খ্যাতি বেশ। চট্টগ্রামে এ জাতের গরু একসময় বেশ মিলতো। কালের পরিক্রমায় এমন জাতের গরু পালন কমেছে। বর্তমানে বিলুপ্তির পথে থাকা রেড চিটাগং অল্পস্বল্প মিলছে। তাও গ্রামাঞ্চলে। চাটগাঁর দেশীয় জাতের গরু হলেও উত্তরবঙ্গ থেকে এনেই ‘রেড চিটাগাং’ লালন-পালন করা হয় চট্টগ্রামে। কোরবানি উপলক্ষে এসব গরু বাজারে তোলার আগেই খামার থেকে ক্রয় করেন ক্রেতারা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘এটা শুধু চট্টগ্রামের না বাংলাদেশের সম্পদ ছিল। হয়তো এভাবে এড্রেস করি নাই। এটা আমাদের নিজস্ব জাত। এটাকে অষ্টমুখী লাল বলে। এটার চোখ লাল, ক্ষুর লাল, চোখের ব্রূ লাল, মাঝেল লাল, চামড়া ও কান লাল। দেখতে সুন্দর বলে কোরবানির বাজারে রেড চিটাগাং গরুর কদর আছে। কালারের দিক থেকে এমন গরুর ইকোনমিক ভেল্যু বেশি। এ গরুর মাংস সুস্বাদু। দুধের পুষ্টিগত মান অন্য যেকোনো জাতের গরুর চেয়ে বেশি।’
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, এখনো রেড চিটাগাং গরু কমে আসেনি। সংখ্যা ঠিকই আছে। কিন্তু সঠিকভাবে যত্ন না নেয়ার কারণে অন্য জাতের সাথে কিছু মিশ্রণ হয়ে গেছে। রেড চিটাগাং গরুকে রেড চিটাগাং জাত দিয়েই বীজ দিলে ভালো। অর্থাৎ ভালোর সাথে ভালো বীজ দিলে এটার দুধ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। প্রতিটি রেড চিটাগাং এখন সাড়ে তিন লিটার দুধ দেয়। পরিকল্পনামাফিক যত্ন নেয়া গেলে তিন-চার বছরের মধ্যে আট লিটারের বেশি দুধ দিবে। ধারাবাহিকতা রক্ষা হলে আট বছর পরে কমপক্ষে ১৬ লিটার দুধ দিবে। রেড চিটাগাং গরুর রোগবালাই কম। খাবার খরচ কম। কম খেয়ে উৎপাদন বেশি দিতে পারে। দেশের আবহাওয়ার সাথে এটি সামঞ্জস্য। এ গরু প্রতি বছর একটি করে বাচ্চা দেয়।
বাঁশখালীর জলদী গ্রামের জামাল উদ্দিনের মালিকানাধীন খামার জেবি এগ্রো। এ খামারে রেড চিটাগাং জাতের গরু আছে বেশি। খামার পরিচালনায় থাকা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মোটাতাজা করে পরে বিক্রি করা হয়। ক্রয়ের পর নয়মাস পরিচর্যা করে গরুগুলো কোরবানির ঈদে বিক্রির উপযোগী করা হয়েছে। রেড চিটাগাং গরুগুলো বাজারে নেয়ার আগেই এখানেই কয়েকটি বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামের নামে গরুর নাম হলেও এগুলো উত্তরবঙ্গের কুষ্টিয়া, রংপুর, বগুড়া থেকে এনে লালন-পালন করা হয়। প্রতিটি গরু দুই থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। প্রতিটি গরুর পেছনে প্রতিমাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। কোনো রকম মোটাতাজাকরণ ওষুধ ছাড়াই শুধুমাত্র কাঁচা ও শুকনা ঘাস দুই বেলা ও তিন বেলা কুড়া খাওয়ানো হয়।’
জানা যায়, চট্টগ্রামেই এ গরুর জাতটি টিকিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। চাঁটগাইয়া লাল গরু বা রেড চিটাগাং ক্যাটেল (আরসিসি) জাতটি সংরক্ষণ, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গরুর একটি দেশীয় জাত হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় এ প্রকল্প চলমান আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অন্য কোনো জেলা থেকে চট্টগ্রামে রেড চিটাগাং গরু আনতে হবে না।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মোমিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘এ জাতের গরুর উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এ জাতের দুই ধরনের গরু আছে। দুই রকমই চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে পাওয়া যায়। জাতটা টিকিয়ে রাখতে আমরা চেষ্টা করছি। রেড চিটাগাং ছাড়া অন্য কোনো বীজ দেয়া যাবে না বলে আমরা খামারিদের বলে দিচ্ছি। এ সংক্রান্ত প্রকল্পে কাজ চলমান আছে।’