উত্তরবঙ্গে ইউক্যালিপটাসের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ কেন?

34

বাংলাদেশের একটি সংসদীয় কমিটি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ক্রমশ বাড়তে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছের জায়গায় প্রচলিত ফলজ গাছ রোপণের পরামর্শ দিয়েছে। জাতীয় সংসদের কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ইউক্যালিপটাস গাছের জায়গায় কাঁঠাল, জাম, নিম বা এ ধরনের গাছ রোপণের পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু ইউক্যালিপটাসের রোপণ নিষিদ্ধ করার পরেও গাছটির বিস্তার সেখানে বাড়ছে।
ওই কমিটির সদস্য গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলছেন সরকারের মুজিববর্ষ পালনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলছে। এ আলোচনার সময় কৃষিমন্ত্রী নিজেই ইউক্যালিপটাস গাছ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেন। জনস্বার্থে ও পরিবেশ বিবেচনায় ক্ষতিকর গাছের জায়গায় ফলজ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষ রোপণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান। তখন সদস্যরা সবাই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, তবে গাছ অপসারণ নিয়ে কোনো ইস্যু যাাতে তৈরি না হয় সেজন্য মানুষকে সম্পৃক্ত করে এসব কর্মসূচির পরামর্শ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়কে।
পরে সংসদীয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলাকায় ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে কাঁঠাল, জাম ও নিম গাছ রোপণের সুপারিশ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত আশির দশকে সরকারিভাবে ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি ও পাইনের মতো বিদেশী গাছগুলো বাংলাদেশে আনা হয় এবং বিনামূল্যে বিতরণও করা হয় নানা প্রজেক্টের আওতায়। পরে ২০০৮ সালে এক প্রজ্ঞাপনে ইউক্যালিপটাসের চারা উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং এরপর বনবিভাগও এর উৎপাদন বন্ধ করার নীতি গ্রহণ করে।
রংপুরের সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলছেন, আগে থেকেই ওই এলাকায় ইউক্যালিপটাসের প্রাধান্য রয়েছে। বহু মানুষ নিজের জমিতেও ইউক্যালিপটাস রোপণ করেন।
নীলফামারীতে তিস্তার অববাহিকা বালুময় এলাকা। আবার ঢাকা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে এ গাছের কাঠের চাহিদা অনেক। ফলে ব্যক্তি উদ্যোগে যারা এটি রোপণ করেছেন তারা দেখেছেন ১০/১২ বছরে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে। এটিও এর বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী বলছেন, বিষয়টি নিয়ে গবেষণার দরকার এবং তারা এসব বিষয়ে কাজ করতে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে যাচ্ছেন। তেমন কোনো গবেষণা না থাকায় গাছটির বিস্তারিত ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে এটি যে আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
ফলজ গাছ রোপণের পক্ষে ক্যাম্পেইন করে, এমন একটি সংগঠন ফলদ বাংলাদেশের সংগঠক সঞ্জয় ঘোষ বলছেন বৈজ্ঞানিক কোনো গবেষণা ইউক্যালিপটাসের প্রভাব নিয়ে হয়নি। বরং উত্তরবঙ্গে অনেকে ইউক্যালিপটাসের বাগান করেছেন। তারা মনে করেন দ্রæত লাভের জন্য এটা ভালো। আমরা তাদের বুঝিয়েছি যে এর চেয়ে ফলজ গাছে লাভ বেশি। অনেকে তাতে উদ্বুদ্ধও হয়েছেন।
রংপুরের সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলছেন, বন বিভাগের রিসার্চ সেন্টার থেকে যে তথ্য আসছে তা হলো বাংলাদেশে যেহেতু ব্যাপক বৃষ্টি হয়, তাই মরুময়তা ওভাবে চোখে পড়ে না।
তার মতে ইউক্যালিপটাসের ব্যাপক উপস্থিতি ও বিস্তারের প্রবণতার মধ্যেও উত্তরাঞ্চলে শস্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং একই সঙ্গে আম, লিচুর মতো ফলের উৎপাদনও ব্যাপক বেড়েছে।
তবে রংপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মেজবাউল আলম বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সবসময়ই এ গাছটির বিরোধিতা করছে। লোকাল ভ্যারাইটিকে ক্ষতির মুখে ফেলে এ গাছটি। তাই আমরা সবসময় এর বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নার্সারিতে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। এটি আমাদের ইকো সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর।