‘উঠানামা ১০ টাকা’

62

‘উঠানামা ১০ টাকা’, ‘দশ টাকায় ইচ্ছে হলে উঠেন নয়তো উঠবেন না।’এভাবেই হাঁকডাক করছিলেন বহদ্দারহাট মোড়ে দাঁড়ানো একটি বাসের হেলপার। সাধারণভাবে নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা গাড়িতে সর্বনিম্ন বা উঠানামা ভাড়া ৫ টাকা হলেও বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে হেলপার-কন্ট্রাক্টরদের ভাষা পাল্টে গেছে। তারা কোনো কথা ছাড়াই উঠানামার ভাড়া চাইছে ১০ টাকা। বৃষ্টিাতে পরিবহন সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তারা এমন আচরণ করছে বলে জানান যাত্রীরা।
কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে মহানগর ও আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছে। যার ফলে নগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি কাদা আর পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনের লোকজন।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস এবং হিউম্যান হলারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বহদ্দারহাট থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত যেখানে নিয়মিত ভাড়া পাঁচ টাকা। সেখানে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার অজুহাত দেখিয়ে উঠানামা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। গাড়িতে উঠার সময়ই হেলপাররা বলে দিচ্ছেন, ১০ টাকা দিলে উঠেন, না হলে অন্য গাড়ি দেখেন। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তারা জানান, বৃষ্টি হলেই যে ভাড়া বাড়াতে হবে এমনতো হতে পারেনা।
কিন্তু পরিবহন চালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, এক হাঁটু পানির মধ্যে আমরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি বের করেছি সেটিই তো বড় কথা। আমাদের গাড়ির ইঞ্জিন বা অন্যান্য যন্ত্রাংশের যে ক্ষতি হবে তার দায়ভার নিবে কে? তাই আমরা ভাড়া সামান্য বাড়িয়েছি। রোদ উঠলে আগের নিয়মে চলে আসবে।
এদিকে নগরীতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আগ্রাবাদের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। সড়ক-নালা বৃষ্টির পানিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে পড়েছে। অন্য কোনো উপায় না থাকার কারণে এসব ময়লা পানিতেই চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজি চালকরা।
সড়কে যানবাহন কম থাকার অজুহাতে চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া দাবিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। অন্যসময় রিকশায় যেটুকু যেতে ২০ টাকা লাগত সেখানে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া দাবি করছেন চালকরা।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এজাজ পূর্বদেশকে বলেন, আমি নিয়মিত মনসুরাবাদ থেকে বায়েজিদ এলাকায় যাই। এই পথ যেতে সিএনজি অটোরিকশাগুলো একশো টাকা নেয়। আজ (মঙ্গলবার) বৃষ্টি উপলক্ষে তারা আড়াইশো টাকা দাবি করছে। দুইশো টাকা বলার পরেও নিলো না। এটা কি মগেরমুল্লুক পেয়েছে নাকি? রোদ, বৃষ্টি, ঈদ, পূজা আসলেই ইচ্ছামত ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
সিএনজি অটোরিকশাচালক লোকমান হাকিম বলেন, যে বৃষ্টি আইছে, ভাড়া তো একটু বেশি লওন লাগেই। সারাদিনে যাত্রী পাই মাত্র কয়েকটা। আর এ কয়েকটা ভাড়াতেতো কোম্পানিকে ভাড়া দিতাম পারিনা। সুতরাং এদিক ওদিক কইরা পোষাই লই।
নিউ মার্কেট মোড়ে বৃদ্ধ নুর হোসেন পূর্বদেশকে জানান, এ বৃষ্টির মধ্যে কি কেউ বের হয়? গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো বলে নিউ মার্কেট এসেছি। এখন রিকশা পাচ্ছি না, যা পাচ্ছি তাও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। নিউ মার্কেট থেকে এনায়েত বাজার যেতে ৬০ টাকা দাবি করছে রিকশাচালকরা। যেন মামার বাড়ির আবদার।
রিকশা চালক জাবের হোসেন জানান, আমরা কি সাধে টাকা বাড়াই? এই বৃষ্টিতে তো অনেক কষ্ট করে রিকশা চালাইতে হয়। আবার বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাÐা ও জ্বর লেগে যায়। তার ওপর সব রাস্তায়তো আর একভাবে গাড়ি চালাইতে পারি না। বৃষ্টিতে হলে তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই একটু বেশি ভাড়া চাই। মোট কথা হলো না চাইলে নাকি আল্লাহও দেয় না, আর মানুষ তো মানুষই।
ব্যাংকে চাকরি করা মো. এহসান বলেন, যেখানে একটা গাড়িতে একবারে অফিসে যেতে পারতাম সেখানে তিন-চারটা গাড়ি পাল্টে যেতে হচ্ছে। আবার সময়মত অফিসে ঢুকতে না পারলেও কাজের ব্যাঘাত হয়। নগরের এ সমস্যার সমাধান কবে দূর হবে আল্লাহই ভাল বলতে পারবে।
এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ পরিবহন শ্রমিক সংগঠন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ পূর্বদেশকে জানান, ভাড়া বাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের পরিবহনগুলো রাস্তায় আছে তারা কোনো যাত্রী পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে যাচ্ছে। হয়তো যে এলাকায় একটু পানি উঠছে সেখানে দুই একটাকা বেশি নিতে পারে।
বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর পূর্বদেশকে জানান, এ বৃষ্টির মধ্যেও আমরা অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। কোন গাড়ির বিরুদ্ধে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই সে গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। এর আগেও জনসাধারণের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।