উখিয়া সীমান্তে বছরের পর বছর রাবার উৎপাদন বাড়লেও বাজারে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় উখিয়া ও ঘুমধুম রাবার বাগান কর্তৃপক্ষকে গত দুই বছর ধরে বছরে কোটি টাকারও বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে। শুধু উখিয়া বা ঘুমধুমে নয়, কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে রাবার শিল্প এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে রাবার উৎপাদন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ রাবার উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ মেটানো সম্ভব হলেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাবার আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাবার আমদানিতে নামমাত্র আমদানী শুল্ক বসানো এবং কৃষিপণ্য হলেও রাবার বিক্রির সময় শতকরা ১৫ টাকা ভ্যাট ও ৪ টাকা আয়কর চাপিয়ে দেওয়ার কারণই দেশের রাবার শিল্পের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। ভিয়েতনাম দেশের বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কম দামে রাবার এদেশে বিক্রি করছে।
জানা গেছে, কাঁচা রাবারের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহযোগিতায় গøাসকো রাবার এন্ড কোম্পানী নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ১৯৮০ সালে উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের পার্শ্বে ২৫একর জায়গায় রাবার বাগান সৃজন করে সরকার থেকে দীর্ঘ ৪০ বছরের লীজ নিয়ে।
ওই বাগানের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া থেকে বীজ এনে এ বাগানটি গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০/২৫টি রাবার বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি জানান, গত ৩ বছর ধরে রাবারে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে।
প্রতিকেজি রাবার উৎপাদনে ১৮৮ টাকা খরচ পড়লেও বর্তমানে বাজার দর পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকায় গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি।
শুধু এ বাগানই নয়,বর্তমানে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি রাবার বাগান। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বেসরকারি বাগানগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে রাবার শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসায় প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান বাগানের ম্যানেজার রবিউল।
সরেজমিনে রাবার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের হাজার হাজার গাছে ঝুলছে ছোট ছোট মাটির পাত্র। সেই পাত্রে কাটা অংশ দিয়ে গাছ বেয়ে বেয়ে পড়ছে ধবধবে সাদা দুধের মতো রাবারের কষ। পাত্রে জমা হওয়া রাবারের কষ সংগ্রহ করে শ্রমিকেরা নিয়ে যাচ্ছে কারখানায়।
বাগানের ম্যানেজার রবিউল বললেন, মূলত সারা বছরই রাবার উৎপাদন চলে। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচমাস রাবার উৎপাদনের মৌসুম। মৌসুমে প্রতিদিন উখিয়া ও ঘুমধুমে রাবার বাগান থেকে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি কষ আহরণ করা হয়। বর্তমানে কষ একটু কম। শীতে কষ আহরণ বেশী হয়, আবার বর্ষায় উৎপাদন কমে আসে। এসব কষ আহরণে নিয়োজিত থাকে প্রায় শতাধিক শ্রমিক। বাগান থেকে সাদা কষ সংগ্রহের পর ৭দিনের মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করে শুকনো রাবারে পরিণত করা হয়।
রবিউল বলেন, বাগান থেকে কষ সংগ্রহ করে কারখানায় আনার পরে কষগুলো নির্দিষ্ট পাত্রে ঢালা হয়। এর পর কষের সঙ্গে পানি ও এসিড মিশিয়ে নির্ধারিত স্টিলের ট্যাংক-এ জমা রাখা হয়। সেখানে আলাদা প্লেট বসিয়ে কোয়াগোলাম বা রাবার সিটে পরিণত করা হয়। এরপর রোলার মেশিনের সাহায্যে কষ থেকে পানি বের করে ড্রিপিং শেডে শুকানো হয়। পরে ধুমঘরে তা পোড়ানো হয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে রাবার ৫০কেজি ওজনের বান্ডিল বস্তাভর্তি করে গুদামজাত করা হয়।
তিনি জানান, বাগান থেকে কষ এনে শুকনো রাবার সিটে পরিণত করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ সাতদিন। এভাবে মৌসুমে প্রতিদিন এ বাগান থেকে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিকটন শুকনো রাবার উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
