উখিয়ায় চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে

48

উখিয়া উপজেলার চিহ্নিত ও শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হঠাৎ গা ঢাকা দিয়েছে। আগের মতো আর তাদের দেখা মিলছে না। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। হাটবাজারগুলো ফাঁকা হয়ে পড়েছে। উপদ্রব নেই ইয়াবা ও মাদক কারবারীদের। বলতে গেলে তাদের মধ্যে এক অজানা ভয়ভীতি কাজ করছে। যার ফলে আত্মগোপনে চলে গেছে ইয়াবা মাফিয়ারা। এদিকে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নবাগত ওসি বলেন, ইয়াবা ও মাদক কারবারীদের এলাকা ছাড়তে হবে।
জানা গেছে, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও তার কোনো প্রভাব ছিলনা সীমান্ত উপজেলা উখিয়ায়। পাশর্^বর্তী টেকনাফ উপজেলায় প্রতিনিয়ত ইয়াবা ব্যবসায়ী কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার কোনো আঁচড় লাগেনি উখিয়ায়। গত বুধবার ইনানী থেকে এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গডফাদাররা আত্মগোপনে চলে গেছে। এছাড়াও উখিয়ায় আগের মতো নানা মডেলের রঙ-বেরঙের মোটরসাইকেলগুলো এখন আর দেখা যায় না।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে দোকানপাট, তরিতরকারি, মাছ ও মাংসের বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। তবে জিনিসপত্রের দাম কমছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা মনে করেন।
উখিয়ার কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বড়ি পাচারের ঘটনাটি দীর্ঘদিনের। এসব ইয়াবা পাচারের ঘটনা দেশব্যাপি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও কার্যত গডফাদাররা তেমন ধরা পড়েননি। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বড় বড় ইয়াবার চালান আটক করলেও অধিকাংশ সময় মালিকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।
প্রশাসন বলছে, বাংলাদেশে চোরাই পথে ইয়াবা পাচারের জন্য মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপিত হয়েছে ৩৭টি কারখানা। মিয়ানমারের বিশাল মাফিয়া সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে এ কারখানাগুলো পরিচালিত হয়। মিয়ানমার ভিত্তিক ১০ ডিলার ওই সব কারখানায় তৈরি করা ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে উখিয়া ও টেকনাফে। রোহিঙ্গারা এদেশে পালিয়ে আসলেও বন্ধ হয়নি ইয়াবা ও মাদক পাচার।
গত বুধবার উখিয়া উপজেলার ইনানী মেরিন ড্রাইভ এলাকা থেকে পুলিশ নজরুল সিকদার নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। তিনি উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের শামশুল আলম সিকদারের ছেলে। এরপর পাল্টে যায় উখিয়ার দৃশ্য। হাটবাজারসহ কোথাও মাদক ব্যবসায়ী গডফাদারদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
গত ২৫ জুলাই উখিয়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নবাগত ওসি আবুল মনসুর উপস্থিত জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইয়াবা ও মাদক কারবারীদের পক্ষে কোনো তদবির করবেন না। তারা দেশ ও জাতির শত্রæ। তাদের কোনো ছাড় নেই। এদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। তিনি এসময় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করে বলেন, যারা ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদেরকে উখিয়া ছাড়তে হবে। ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য উপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান ওসি।
সভার উপদেষ্টা, উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, নবাগত ওসির অদম্য উৎসাহ ও তার দুঃসাহসিক অভিযাত্রার ফলে আশা করা হচ্ছে উখিয়ার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারীরা তাদের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকবে।