উখিয়ার শাহা আলমের যাবজ্জীবন

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

গভীর রাতে চুরি করতে গিয়ে দোকানিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় একজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত আরেক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আ স ম শহীদুল্লাহ এ রায় দেন। দন্ডিত মো. শাহা আলম কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পিঞ্জিরকুল গ্রামের বাসিন্দা।খুনের শিকার মো. ইসহাক চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই গ্রামের বাসিন্দা। কচুয়াই বাজারে ‘আবদুর রহমান স্টোর’ নামে তার একটি মুদির দোকান ছিল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ মার্চ ভোরে দোকানের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা ইসহাককে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে গিয়ে স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পান। তালা ভাঙা ও দরজা খোলা পেয়ে তিনি ভেতরে ঢুকে দেখেন এলোপাতাড়ি কোপানোর কারণে মারাত্মক জখম অবস্থায় ইসহাক কাতরাচ্ছেন। মোয়াজ্জিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাকে দ্রæত হাসপাতালে নিয়ে যান। ২৭ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসহাক মারা যান। এ ঘটনায় তার ভাই মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ শাহা আলমকে খুনের সঙ্গে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। শাহা আলম হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ওই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর আদালতে গ্রেপ্তার শাহা আলম ও পলাতক কামাল হোসেনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি আদালত দÐবিধির ৪৫৭, ৩৮২, ৩০২ ও ৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে আনা অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে।
আসামির জবানবন্দি ও সাক্ষ্যে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার বিবরণ হচ্ছে, ২০১৪ সালের ১১ মার্চ গভীর রাতে দুই ব্যক্তি দরজার তালা কেটে ইসহাকের দোকানে প্রবেশ করে। ঘুমন্ত ইসহাক জেগে উঠলে তারা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। ইসহাককে উদ্ধারের পর আশপাশের দোকানিরা আরও কয়েকটি দোকানের তালা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।
এই বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেলা আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) রুবেল পাল জানান, সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে। এজন্য আদালত শাহা আলমকে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন। দন্ডবিধির ৩৮২ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দন্ডবিধির ৪৫৭ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সব সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। দন্ডিত শাহা আলমকে রায় ঘোষণার পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এপিপি রুবেল পাল।