ঈদ মোবারক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ্য হোক

101

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

দীর্ঘ এক মাস আত্মশুদ্ধি অর্জনে সিয়াম সাধনার পর আজ না হয় কাল পশ্চিম আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ দেখা দিলেই ঈদের উৎসব শুরু হবে । তবে এবার করোনা ভাইরাস ও সুপার সাইক্লোন আম্ফান পরম আনন্দের ঈদকে অনেকটা ম্লান করে নিরানন্দই করে ছেড়েছে। কারণ এবারের ঈদের যে আয়োজন মুসলমানদের থাকার কথা তার কোনটিই কেউ নিতে পারে নি। ঈদ বাজারের যে মহা আয়োজন তাও ছিল নীরব। শহরের মানুষ চোখবুঝে নাড়ির দিকে পা দিচ্ছেনা। এরপরও আজ চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ উদযাপিত হবে কাল রবিবার। অন্যথায় ঈদ উদযাপিত হবে সোমবার। ঈদ মানে আনন্দ। দীর্ঘ সিয়াম ভাঙ্গার পর পরম তৃপ্তিতে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে সকল মানুষের সাথে উৎসব উদযাপন করাটাই ঈদ। ঈদে আমাদের কামনা থাকে, ঈদে সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় ও নিরাপদ। অন্যান্য উৎসব থেকে এ ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে রয়েছে অপার আনন্দ। ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ঈদগাহে গিয়ে এক কাতারে শামিল হয়ে মহান আল্লাহর কাছে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ঈদের আগের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমান আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার ব্রতে লিপ্ত ছিল। এসময় উপবাস যাতনা সম্ভ্রমের মাধ্যমে অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে সচেষ্ট হয়। রোজার প্রধান লক্ষ্য ত্যাগ ও সংযম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর। দুর্ভাগ্যজনক যে, রমজান সংযমের মাস হওয়া সত্তে¡ও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অধিক মুনাফা করেছে। অবশ্যই প্রশাসনের অধিক সতর্কতার ফলে এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ ভালো অবস্থানে ছিল। তবে ঈদের বাজারের পোষাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতা ও প্রশাসন অনেকটা হাফছেড়ে বেঁচে গেল মনে হয়। এর পাশাপাশি ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ না থাকায় ভোগান্তিও ছিল না। এবার রমজান মাসে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল। ছিলনা মলম পার্টির তৎপরতা, ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা । আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক সমস্যা আছে, আছে অনেক সংকট। তা সত্তে¡ও বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ শরিক হয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে নতুন পোশাক ও উপহার সামগ্রী কিনে দেয়। যারা সারাবছর জীর্ণ পোশাকে থাকে, তারাও ঈদের দিনে সন্তানদের গায়ে নতুন পোশাক পরাতে চায়। ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। এ কারণেই ধনীদের উপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে। কবি নজরুলের উল্লেখিত চরণেও তার ইঙ্গিত রয়েছে। ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই ফিতরা দেয়ার নিয়ম।
ফিতরার উদ্দেশ্য, দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সচ্ছলরা সঠিক নিয়মে জাকাত-ফেতরা দান করলে দরিদ্ররাও ঈদের খুশির ভাগ পেতে পারে। রমজান সংযমের মাস হলেও অনেকে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। দরিদ্র স্বজন বা প্রতিবেশীর প্রতি অনেকে কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থাকেন। এটি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী। ঈদ উদ্যাপনের সময় আমাদের এ কথাটিও মনে রাখতে হবে। তাছাড়া এবার যেহেতু কেনাকাটার জটঝামেলা ছিলনা, সেহেতু ওই অর্থ করোনাকালে আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত ও অসহায় মানুষগুলোর মধ্যে বিতরণ করতে পারাটাই সত্যিকারের ঈদের আনন্দ ভাগ করা যায়। এবার ঈদ এক ভিন্ন পরিবেশে হচ্ছে, এসময় সরকারি ছুটি রয়েছে ৩০ মে পর্যন্ত। এ সময় আমাদের সতর্কতার সাথে চলা ফেরা করা সর্বোপরি ঘরে থেকে পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাবাগি করার স্থির সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। ভুলে গেলে চলবেনা আমরা কঠিন এক দুর্যোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। যার একমাত্র চিকিৎসা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘরে থাকা এবং নিরাপদে থাকা। আমরা আশা করি, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই ঈদুল ফিতরের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেব। ঈদ মোবারক।