ঈদ বাজারে বড় অফারে ঠকছেন না তো?

24

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদবাজারে চলছে নানা ধরনের অফার। এসব অফারে পণ্যের বেশি মূল্য দেখিয়ে তার উপর দেয়া হচ্ছে ছাড়। বড় বড় নামকরা প্রতিষ্ঠানও এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমন প্রতারণায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার বেশি দামে জুতা, পাঞ্জাবি ও কাপড় বিক্রি করায় চার প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে মূল্যছাড়ের নামে প্রতারণার ‘ফাঁদ’ পেতেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিক্রি বাড়াতে লটারি, বিশেষ ছাড় কিংবা ফ্রি উপহার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন দোকানিরা। নগরীর ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণী বিতানে চলছে বিশেষ ছাড় ও নগদ মূল্যছাড়। কেউ দিচ্ছেন একটা কিনলে একটা ফ্রি। দেয়া হচ্ছে লাকি কুপন, স্ক্র্যাচ কার্ড; যাতে পুরস্কার হিসেবে থাকছে সোনা, হীরা, গাড়ি, ফ্ল্যাট, টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য পুরস্কার। কিন্তু বাস্তবে এমন মূল্যছাড় বা পুরস্কার আদৌ কেউ পান কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই।
গত মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অভিযানে মিমি সুপার মার্কেটের পাশে কেবিএইচ প্লাজার সেলিম পাঞ্জাবি হাউজকে এক লাখ, রাজস্থানকে এক লাখ, ভাসাবি শপিংমলকে ৩০ হাজার এবং আফমি প্লাজার এপেক্স শোরুমের একটি আউটলেটকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। চার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, পণ্যের আগের প্রাইজ ট্যাগের ওপর নতুন প্রাইজ ট্যাগ বসিয়ে ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। পণ্যের ক্রয় ভাউচার দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে জরিমানা করা হয়েছে। কোনো ভোক্তা প্রতারিত হলে অভিযোগ করতে পারেন। আমাদের অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকবে।
ক্রেতা আকর্ষণে প্রায় সবগুলো বড় বড় শপিংমলে নানা অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। মূল্য ছাড়ের ঘোষণাও আছে চটকদার অফার। মার্কেটগুলোতে মাইকিং করে চালানো হচ্ছে অভিনব সব প্রচার-প্রচারণা। পাঞ্জাবী, পায়জামা থেকে শুরু করে ফ্রি পিস বা শাড়িতেও মূল্য ছাড় দিচ্ছে বড় বড় ব্র্যান্ডশপগুলোও। তবে এসব ছাড়ের বিপরীতে কিছু প্রতিষ্ঠান আশ্রয় নিয়েছে বড় ধরনের প্রতারণা। পণ্যের মূল্যে ট্যাগে দাম বাড়িয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে ছাড়। দেড় হাজার টাকার পাঞ্জাবীর দাম বাড়িয়ে করে দেয়া হচ্ছে আড়াই হাজার বা তারও বেশি। আবার বাড়তি দাম থেকে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে। এই ছাড়ের পরও পণ্যের আসল মূল্য থেকে বেশি মূল্য আদায় করছে প্রতিষ্ঠান গুলো। এমন প্রতারণায় ক্রেতাদের মধ্যে ব্র্যান্ডশপ নিয়েও বিরুপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা প্রতিকার পেতে ধারস্থ হচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অধিদপ্তরের অভিযানেও এমন প্রতারণার প্রমাণ মিলছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতিবছর ঈদ এলেই বাজারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি শুরু হয়। এই সময়ে প্রচুর বিক্রি হয় বলে পণ্যের মূল্যের উপর ছাড় দেয়ার কথা। সেটা না হয়ে উল্টো পণ্যের দাম বেড়ে যায় আমাদের দেশে। এখন নতুন করে দেখছি ব্র্যান্ডশপগুলোর ট্যাগের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রতারণা। বেশি দামে ভালো পণ্য কিনতে গিয়ে দেখানেও ভোক্তাকে ঠাকানো হচ্ছে। এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজরদারি আরো জোরালো করা দরকার।
অন্যদিকে ঈদের বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ সাধারণ দোকানদারদের বিরুদ্ধেও। ক্রেতাদের অভিযোগ, একই কাপড়ের দাম আগে কম থাকলেও ঈদ সামনে রেখে দাম বাড়ানো হয়েছে। কাপড়বাজারের মনিটরিং না থাকায় যেমন ইচ্ছে দাম হাকছেন বিক্রেতা। ছিট কাপড় থেকে শুরু করে মহিলাদের শাড়ি, থ্রি পিস, টু পিস, প্যান্টজামা, গেঞ্জি, টি শার্টসহ বিশেষ করে বাচ্চাদের জামাকাপড়ের উপর চড়া দাম চাওয়া হচ্ছে। তার ওপর ভারতীয় ডিজাইনের কাপড়, টিভি সিরিয়ালের দূত শাড়ির সংগ্রহ, কাশ্মীরি ডিজাইন পাকিস্তানি কাপড়ের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পণ্যের গুণগত মানের সাথে দামের মিল নেই।