ঈদ উৎসবে নাড়ির টান মানছেনা মানুষ নিষেধাজ্ঞা

18

পাশের দেশ ভারত কাঁদছে। শ্মশান আর গোরস্থানে লাশের সারি। বাতাসে লাশের গন্ধ। সংবাদ মাধ্যম সতর্ক করছে আমাদের দেশে ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সংক্রমণ। সরকার সীমান্ত বন্ধ করেছে, দেশের অভ্যন্তরে শিথিল-কঠোর লকডাউন চলমান রেখেছে, ঈদের বাজার ও নিজ নিজ অবস্থানের বাইরে অন্য জেলায় বা শহরে না যাওয়ার জন্য বারবার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এরপরও ঘোষিত লকডাউন বেশির ভাগ মানুষই মানছে না। নানা নিষেধাজ্ঞার পরও ঝুঁকি নিয়েই ঈদ সামনে রেখে নাড়ির টানে শহর ছাড়তে সাত সমুদ্র পাড়ি দিতেও ছাড়বেনা সাধারণ মানুষ। গ্রামের বাড়ি যেতে মানুষের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ঈদ যাত্রা রোধে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছে সরকার। সেইসাথে আন্তঃজেলা গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, এমনকি ঈদের ছুটি তিন দিন নির্ধারণ করে দিয়ে সব চাকরিজীবীকে কর্ম এলাকায় থাকার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপরও মানুষ ছুটছে। ঘরমুখো মানুষের এই ঢল বন্ধ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দূরপাল্লার বাস না চললেও অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস আর প্রাইভেটকার ভাড়া করে মানুষ ছুটছে গ্রামের দিকে। মধ্যরাতে পিকআপ ট্রাকে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর ছাড়ছে বহু মানুষ। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন জেলায় মানুষের নিজ গ্রামে বিভিন্ন মাধ্যমে যাত্রা তেমন চোখে না পড়লেও ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে যাতায়াতকারীদের ফেরি ও বিভিন্ন নৌপথে ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড় বাড়ছেই। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনে শিমুলিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। যা গতকালের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্বচিত্র শিরোনাম হয়েছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকা শহরের সীমানা পর্যন্ত চলাচল করছে সিটি বাস। প্রতিটি জেলার সীমানা পর্যন্ত ওই জেলার বাসও চলছে। এই সুযোগ নিয়ে অন্যবারের ঈদের চেয়ে এবার আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। যাচ্ছে জেলায় জেলায় বাস পাল্টিয়ে। সব মিলিয়ে চিত্রটি এ রকম, যে দূরপাল্লার বাস-ট্রেন বন্ধ রেখেও মানুষের গ্রামে ফেরা কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশে করোনার সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। শনাক্তের হার ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। সরকারের চলমান বিধি-নিষেধের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। অর্থাৎ যাতায়াতের কারণে যাতে কোনোভাবেই সংক্রমণ না বাড়ে তার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারি বিধি-নিষেধ মানতে নারাজ। সমাজের শ্রমজীবী মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানছে না বা না মানতে বাধ্য হচ্ছে মোটা দাগে পেটের দায়ে, জীবিকার চরিত্রগত কারণে এবং অন্নসংস্থানের বাসনায় কিন্তু সমাজের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের কিছু মানুষ সামাজিক দূরত্ব কেন মানছে না, সেটাও বিবেচনায় নেয়া জরুরি। সরকার পূর্বে ঘোষণা দিয়েছে এবার ঈদে লোকজনকে ঢাকায় আবস্থান করতে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সুস্থ রাখতে এই অনুরোধ করা হয়েছে। এখন আমরা তার উল্টোচিত্র দেখছি। আমাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলার অন্যতম কারণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। অর্থনৈতিক সমস্যার চেয়েও বড় সমস্যা অসচেতনতা। নিজেরা যেমন সচেতন না তেমনিভাবে আরেকজনকে বিপদে ফেলছি। বারবার সরকার বলছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। ঘরে থাকুন, নিজে সুস্থ থাকুন এবং দেশের মানুষকে সুস্থ রাখুন করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর এটাই হলো মূলমন্ত্র। আমরা মনে করি, লকডাউনকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণকে বুঝানো হয়েছে। এখন আর বুঝানোর সময় নেই। সবাইকে ঘরে রাখতে প্রয়োজনে এখন কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর অবস্থান নিতে হবে। বলার আর প্রয়োজন নেই যে, আমরা সবাই একটুখানি সচেতন হলে এবং আপাতত আরো একটু ধৈর্য ধারণ করলে মহামারি করোনা ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত হতে পারব। এতে দেশ ও জাতি দুটিই সুরক্ষা পাবে।