ঈদে প্রতিদিন ট্রেনে চড়বেন ১২৩৬ যাত্রী

45

ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদুল আজহাতেও আগেভাগে টিকিট কিনতে কাউন্টারে ভিড় থাকবে না। কাউন্টার থাকবে ফাঁকা। ঈদে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, সিলেট ও চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে তিনটি ট্রেন। এসব ট্রেনে চড়েই প্রতিদিন ঈদ যাত্রায় চট্টগ্রাম ছাড়বেন ১২৩৬ যাত্রী। সোনার হরিণ এ টিকিট পেতে অনলাইনে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন যাত্রীরা।
ধারণা করা হচ্ছে, সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনলাইনে আগেভাগে টিকিট কেটে বাড়তি দামে যাত্রীদের কাছে তা বিক্রি করবেন কালোবাজারিরা।
গতকাল রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শনকালে ঈদুল আজহায় ট্রেন বাড়ছে না বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘যেভাবে এখন চলছে সেভাবেই ট্রেন চলবে। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা যাতে স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারে, সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশের বড় স্টেশনগুলোতে বেড়া নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।’ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার সাহদাত আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আপাতত তিনটি ট্রেনই ঈদে চলাচল করবে। কাউন্টারে টিকিট না পেলেও অনলাইনে সব টিকিট পাওয়া যাবে। এখন অনলাইনে প্রচুর টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সব ট্রেনেই টিকিট ভালো বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে কম বিক্রি হচ্ছে। গরীব মানুষদের মধ্যে মাছওয়ালা, শাকওয়ালা, কাজের বুয়া সবাই মোবাইল ব্যবহার করছে। প্রয়োজন অনুসারে অনলাইনে টিকিট কাটা সবাই শিখে নিবে। যারা পারবে না তারা হয়তো কম্পিউটার দোকানে যাবে। তবে আগে পরে এ পথেই যেতে হবে সবাইকে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেসে ৪৬৪টি ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩১৮টি টিকিট আছে। এরমধ্যে মেঘনা ও উদয়ন ট্রেনের টিকিটের চাহিদা থাকলেও সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ট্রেনে শতাধিক টিকিট অবিক্রিত থেকে যায়। মূলত সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন মেঘনা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নিয়েই কালোবাজারির পরিমাণ বেড়েছে। সাধারণ মানুষ অনলাইনে টিকিট ক্রয়ে অভ্যস্থ না হওয়ায় প্রতিদিন স্টেশনে এসে ভিড় করে। এর সুযোগ নিয়ে আগেই অনলাইনে টিকিট ক্রয় করে একশ্রেণির পেশাদার ব্যবসায়ী চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রি করছে বলে স্বীকার করেছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, কভিড-১৯ এর কারণে ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে চালু হয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন সেবা। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সক্ষমতার ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করছে রেলওয়ে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে শুধুমাত্র অনলাইনে টিকিট বিক্রি করায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পাড়া-মহল্লার মোবাইল সেবা প্রদানকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল নি¤œ আয়ের মানুষ রেলের টিকিট ক্রয়ে প্রতারণা ও টিকিটের কয়েকগুণ দাম গুণতে হচ্ছে। বিভিন্ন মোবাইল ও কম্পিউটার সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন টিকিট ও অবৈধ পন্থায় টিকিট বিক্রি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে সংগ্রহের বাধ্যবাধকতায় অভিযুক্তরা কয়েকগুণ দামে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে কালোবাজারি ব্যবসা করছে। নির্দিষ্ট সময়ে ও সীমিত সংখ্যক আসনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় অনলাইনে টিকিট পাওয়া না গেলেও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অনলাইনে সংগ্রহ করা টিকিটসহ মো. আরেফিন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। স্টেশন সংলগ্ন একটি মোবাইল ও কম্পিউটার সেবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় অনলাইনে বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছিল আটককৃত ব্যক্তি।
জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজ ভূঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘ট্রেন চালানোর বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। আমরা যেভাবেই সরকার সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই নিরাপত্তা দিব। ৩১ মে ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকেই অনলাইনে কালোবাজারি চক্র সক্রিয় হয়। ইতোমধ্যে আমি একজনকে ধরেছি। কালোবাজারি ধরতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেল প্রশাসনকেও ভূমিকা রাখতে হবে। আমি শতভাগ সজাগ আছি। কালোবাজারি যাতে সক্রিয় হতে না পারে স্টেশনের আশপাশের এলাকায় আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি।’