ঈদে নগরীর নিরাপত্তায় সিএমপির নতুন ছক

13

তুষার দেব

ঈদুল ফিতরের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে শহর ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা নগরীর নিরাপত্তায় কয়েক স্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সিএমপি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের সতর্ক থাকার পাশাপাশি নগরবাসীর সহযোগিতাও কামনা করা হয়েছে। রমজানে ঈদের কেনাকাটার মার্কেটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা শেষে পুলিশ এখন আবাসিক এলাকা ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দিকে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করছে।
নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহম্মদ তানভীর বলেছেন, ঈদের আগে ও পরে সম্ভাব্য নয়দিনের ছুটিতে একেবারে পুরো বাসা বা ভবন খালি করে যেন কেউ চলে না যায়, সেই অনুরোধ থাকবে আমাদের। কেউ না কেউ যেন বাসায় থাকেন। একটি বাসায় নয় দিন কেউ থাকবে না- এটা তো অ্যালার্মিং। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, বাসার সামনে-পেছনে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা এবং ক্যামেরা বসানো। যিনি শহরে একটি বাড়ির মালিক, তার পক্ষে দুটি ক্যামেরা কিনে লাগানো কোনও ব্যাপার নয়। ক্যামেরা লাগালে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। কেউ অপরাধ করলেও আমরা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারব।
নাগরিকদের সহযোগিতা পেলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জনসাধারণকে তো আমাকে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হবে। আমাকে সহযোগিতা না করলে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়াটা খুবই দুরূহ হবে। আমাদের তৎপরতার পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন, আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করব।
সিএমপির পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নগরবাসীকে বাসার বাথরুম অথবা রান্নাঘরে ব্যবহৃত এডজাস্ট ফ্যানের বাইরের অংশে লোহার গ্রিল লাগানো, বাসার জানালার বাইরের অংশে বক্স গ্রিল ব্যবহার করা, বাসার দরজায় অটোলক ব্যবহার, মূল্যবান জিনিস ও টাকা-পয়সা নিরাপদ হেফাজতে রেখে যাওয়া, প্রত্যেক ভবনে সড়কমুখি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এছাড়া পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে বাসার দরজা না খোলা, হকার-ফেরিওয়ালাকে বাসায় ঢুকতে না দেয়া, অপরিচিত লোককে বাসার আশপাশে ঘুরতে দেখলে ছবি তুলে রাখার পরামর্শও দিয়েছে সিএমপি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, দেশে জনসংখ্যার তুলনায় এখনও পুলিশের সংখ্যা কম। এক্ষেত্রে অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজের নানা পেশার মানুষজনকে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা তৈরি হলে, তারাই নিজেদের চারপাশের এলাকায় নজরদারির ব্যবস্থা করবেন। ফলে অপরাধীরা কোনও অপরাধ সংঘটিত করার সাহস পাবে না। ঈদসহ নানা ছুটির সময়ে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সঠিক সময় বলে আমি মনে করি। নিয়মিত সময়ে পাড়া-মহল্লায় নৈশপ্রহরী ও টহল পুলিশের যে কার্যক্রম বহাল থাকে, তা কিছুটা জোরদার করতে কমিউনিটি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ বাড়ালে সহজেই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এবারের পবিত্র রমজান ও ঈদের বাজারে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বেশ ভালোভাবেই তারা সামাল দিতে পেরেছে। এখন ঈদের ছুটিতে ফাঁকা নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের জন্য একমাত্র চ্যালেঞ্জ। এজন্য নগরীতে কেবলমাত্র অপরাধ বিভাগে ৯ শতাধিক অতিরিক্ত ফোর্স মাঠে নামাচ্ছে সিএমপি। পুলিশ সদস্যদের ঈদের ছুটিতে আবাসিক এলাকা ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দিকে বেশি তৎপর রাখা হবে। আর সর্বশেষ ধাপে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা নগরীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সেদিকে নিয়মিত টহল ও নজরদারির পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়া হবে।
নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বদেশকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আদালতে আসামির জামিনের হার খানিকটা বেড়ে যায়। এসময় চুরি ও দস্যুতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিও জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। আর জামিন নিয়ে এসে অনেকেই ঈদের বাড়তি খরচ যোগাতে ফের অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তবে জামিনের হার বাড়লেও তাদের গতিবিধির দিকে পুলিশের নিবিড় নজরদারি থাকবে।
উল্লেখ্য, ৬০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশের মঞ্জুরীকৃত পাঁচ হাজার জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছে সাড়ে চার হাজার। চারটি পৃথক অপরাধ অঞ্চল ও ১৬টি থানা নিয়ে গঠিত সিএমপিতে সরাসরি আইন-শৃংখলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত পুলিশের সংখ্যা আনুমানিক আড়াই থেকে তিন হাজার। ছুটি ও প্রশিক্ষণসহ নানা কারণে গড়ে মোট জনবলের ২০ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকে। এছাড়া নগরীর ৪৬টি কেপিআই (কী ইন্সস্টলেশন পয়েন্ট) এর নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রটোকল ও প্রটেকশনের জন্য দুই শতাধিক পুলিশ সদস্যকে নিয়মিত ব্যস্ত থাকতে হয়। নিরাপত্তাজনিত টহল কার্যক্রমে ডিবি ও ১৬ থানা মিলিয়ে ৮২টি মোবাইল টিম রয়েছে। এর বাইরে পুলিশের কন্ট্রোল রুম, পুলিশ লাইন, বিশেষায়িত ইউনিট বম্ব ডিসপোজাল, সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম, পোশাক ভান্ডার, রেশন স্টোর, আদালতের নিরাপত্তা, আসামি আনা-নেয়া এবং সফররত মন্ত্রী ও বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিরাপত্তার জন্যও পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ করতে হয়। এ কারণে সংকটজনক বা বিশেষ প্রয়োজনে ধারে পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় সিএমপিকে।
এবার ঈদের নিরাপত্তার জন্য এপিবিএন ও শিল্প পুলিশ থেকে অতিরিক্ত ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে এনে রমজান ও ঈদের নিরাপত্তা সামাল দিতে হচ্ছে সিএমপিকে।