ঈদের পর ব্যাপক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইমরান খান

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

ঈদের পর ব্যাপক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইমরান খান। লাহোরের এক জনসভা থেকে এমন ইঙ্গিত এসেছে। এ লক্ষ্যে তিনি নানা কার্যক্রমও শুরু করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর ব্যাপক আন্দোলন শুরু করতে পারে পিটিআই।
এদিকে শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দেশে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তার ফেরার পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
লাহোরে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে আরও একবার দলের শক্তি প্রদর্শন করল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। এবার রাজধানী ইসলামাবাদে আসতে নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
পিটিআইয়ের বহুল আলোচিত এই সমাবেশে লাহোরের গ্রেটার ইকবাল পার্কে নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠসহ হাজারো মানুষ অংশ নেন। তারা স্লোগানে স্লোগানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি সমর্থন জানান। বিদেশি প্রভুদের ছড়ি ঘোরানোর প্রতিবাদ জানান। সার্বভৌমত্ব ও আত্মসম্মানবোধের প্রতি সমর্থন জানান।
‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ ও গণতন্ত্র পেতে দেশজুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে গোটা জাতির প্রতি আহব্বান জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাকে ক্ষমতাচ্যূত করে যারাই ভুল করুক, তার একমাত্র সংশোধন হলো নতুন নির্বাচন।
মিনার-ই-পাকিস্তানের পাদদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশাল এই সমাবেশে নতুন সরকারকে আক্রমণ করেও বক্তব্য দেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো এই আমদানি করা সরকারকে মেনে নেব না।’ বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকসহ যারা ‘বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব থেকে মুক্তি’ চান, তাদের সবাইকে সর্বত্র প্রস্তুতি নেওয়ার আহব্বান জানান এবং ইসলামাবাদে আসতে তার ডাকের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন ইমরান খান।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি সম্মান জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কোনো সংঘাত চান না। কিন্তু ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ আরও জোরদার হবে। ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ ও গণতন্ত্র অর্জনে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে সক্রিয় থাকবেন, সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে এই শপথ করান তিনি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা ধারণা করছেন, ঈদুল ফিতরের পর ব্যাপক আন্দোলন শুরু করতে পারে পিটিআই।
জাতীয় পরিষদে বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ৯ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। এই অনাস্থা প্রস্তাবের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন তিনি। সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পর বিক্ষোভ প্রদর্শন ও একের পর এক সমাবেশ করছে পিটিআই। দ্রুততম সময়ে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার দলটি।

ফিরছেন নওয়াজ শরিফ : কয়েক দিন আগে শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এরপর থেকেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফের দেশে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নওয়াজ শরিফ হলেন শাহবাজ শরিফের বড় ভাই।
পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, ক্ষমতায় বসেই ভাইকে দেশে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন শাহবাজ। এজন্য নাকি নওয়াজকে কূটনীতিক পাসপোর্ট দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পিএমএল-এন’র এক নেতা বলেছেন, ঈদুল ফিতরের পর লন্ডন থেকে পাকিস্তান ফিরে আসবেন নওয়াজ। দলটির একজন শীর্ষ নেতা এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, দেশে ফিরে আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে চলমান সব মামলা লড়বেন নওয়াজ।
তিনবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নওয়াজ শরিফ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। দুর্নীতির মামলায় প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান তিনি। এরপর চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান ছেড়ে লন্ডন পাড়ি জমান নওয়াজ। চার সপ্তাহের অনুমতি নিয়ে লন্ডন গেলেও আজ পর্যন্ত দেশে ফেরেননি তিনি।
গত মঙ্গলবার শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন পিএমএল-এন নেতা মিয়া জাভেদ লতিফ। বুধবার তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, নওয়াজ শরিফকে ঈদের পরে পাকিস্তানে দেখা যাবে।
লতিফ দাবি করেছেন যে, ৭২ বছর বয়সী নওয়াজ আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী মামলার মুখোমুখি হবেন। তিনি জোর দিয়েই বলেন, পিএমএল-এন আদালতে বিশ্বাস করে এবং তার রায় মেনে নেবেন।