ঈদের ছুটিতে ‘ডেঙ্গুর বিপদ’ বাড়ার আশঙ্কা

64

দুই সপ্তাহ পরেই ঈদুল আযহা। এ উপলক্ষে কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফিরবেন হাজার হাজার মানুষ। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী সংখ্যার বাড়ছে দিন দিন। শঙ্কামুক্ত নয় চট্টগ্রাম নগরীও। বাড়ি ফেরা কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তাহলে ছড়িয়ে পড়তে পারে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝেও। এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতন হওয়া না গেলে গ্রাম-শহরে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু জ্বর। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা যায়, চট্টগ্রামে নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ৩৪ জন। এর আগের দিন পর্যন্ত ছিল ১৪৬ জন। অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত ১৮০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত গ্রামে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। তবে সচেতন না হলে ঈদে সেই সংখ্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এ সময় ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মানুষ গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। তার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে গ্রামের বাড়িতে এসেই।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দীকি বলেন, একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে যদি এডিস মশা কামড়ায় এবং সেই মশা অন্যকোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালেও তার ডেঙ্গু জ্বর হবে। তাই পরিবারের কোনো সদস্যের এই জ্বর হলে বাকিদের মাঝে ছড়ানোর শঙ্কা থেকে যায়। তাই আমরা সবাইকে পরামর্শ দিই মশারি ব্যবহার করার জন্য। আর যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে তারা যেন ২৪ ঘণ্টা মশারির ভিতর থাকে। এছাড়াও যারা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছে তাদেরও কমপক্ষে ৮-১০দিন মশারির ভিতর থাকতে হবে। অন্যথায় এই রোগ আরও অনেক লোকের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের সতর্ক করে তিনি বলেন, যারা বাড়িতে ফিরবেন, তাদের কারোর মাঝে ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া বাড়ির আশপাশে যাতে পানি জমতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত নানা কর্মসূচি উল্লেখ করে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিবৃতি প্রদান করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিবৃতিতে তিনি নগরীতে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য বিভাগের চলমান কর্মসূচি নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতি আহবান জানান।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মেয়র বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রামে যাতে এর বিস্তার না ঘটে সেজন্য নগরবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। সময় থাকতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে দাবি করে মেয়র বলেন, বর্ষাকাল এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময়। ভারী বর্ষণ কিংবা থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাড়ির আশপাশ, ফুলের টব, আবর্জনা ফেলার পাত্র , প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, ব্যাটারি শেল, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট এবং নালা-নর্দমায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি এডিস মশার প্রজননের স্থান। জমে থাকা পানি ছাড়া এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তাই বর্ষাকালে কোনো পাত্রেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে চসিক পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে নালা-নর্দমা, ঝোপ-ঝাড়, ডোবা-পুকুর পরিষ্কারসহ মশা-মাছির উপদ্রপ এবং মশার উৎপত্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ ছিটানোর ক্রাস প্রোগাম পরিচালনা করছে।
মেয়র বলেন, নগরবাসীর সার্বক্ষণিক সেবাদানে অঙ্গীকারবদ্ধ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রয়োজনে নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সহযোগিতা নেওয়ার আহবান জানান সিটি মেয়র।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ্বরের উৎস এডিস মশার জন্মস্থান সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চসিক স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে সচেতনতামূলক লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। এসব লিফলেট নগরবাসীর ঘরে ঘরে বিতরণ এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাধ্যমে বিশেষ করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হচ্ছে। এমনকি নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু এনএস ওয়ান, সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে ।
এছাড়া কারও জ্বর ও ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সময়ক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহবান জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, নগরীর প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে বিকাল ২টা পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। এতে কারো গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে নগরীতে চসিকের পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এসব কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা থাকা বাঞ্ছনীয়। এতে নগরবাসী কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ তদারকি কামনা করে। চসিকের চলমান কর্মসূচি তদারকির জন্য কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতি আহবান জানান সিটি মেয়র।