ঈদবাজারে টাকায় টাকা বিক্রি

17

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ মানে খুশির দিন। ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঈদ সালামির টাকা দেন সবাই। সালামির টাকা মানেই যেন চকচকে নতুন নোট। সালামিতে নতুন টাকার ঘ্রাণ থাকতে হবে এমনটা আশা থাকে সবার মধ্যে। যে কারণে ঈদকে সামনে রেখে নতুন নোটের চাহিদা ও কদর বাড়ে প্রতিবছর। ব্যাংকে নতুন টাকার জন্য যেমন মানুষের ভিড় বাড়ে তেমনি বাইরেও বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হয় নতুন টাকা। জামা-জুতোর মতো ঈদকে সামনে রেখে নতুন টাকাও বিক্রি হচ্ছে। পুরাতন টাকার বিনিময়ে কেনা হচ্ছে ঝকঝকে নতুন টাকা।
ঈদের আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় নতুন টাকা। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে বাজারে নতুন নোট ছাড়ে। করোনার কারণে গত দুই বছরে অবশ্য তাতে কিছুটা ছেদ পড়েছিল। তবে ঈদ উপলক্ষে এবার আবার নতুন টাকার চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা মেটাতে চলতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ১ হাজার, ৫শ, ২শ, ১শ, ৫০, ২০ এবং ১০ টাকার নোট। অন্যবারের মতো এবারও ঈদে নতুন টাকার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারগুলোতে ভিড় বাড়ছে সাধারণ মানুষের। এবারে ১০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরবরাহ কম হওয়ায় হিমশিম অবস্থা ব্যাংকগুলোর। ঈদে প্রিয়জনদের উপহার হিসেবে দিতে সাধারণ মানুষ নতুন টাকার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারগুলোতে ভিড় করছেন। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এবারে ১০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরবরাহ কম হওয়ায় চাহিদামত দিতে পারছেন না তারা।
নগরীতে নতুন নোটের বাজার বসে নিউমার্কেট মোড় ও কোর্ট বিল্ডিংয়ের মুখে। প্রতিদিন ২০-৩০ জন ব্যবসায়ী নতুন টাকার পসরা নিয়ে বসেন সেখানে। ঈদের এই সময়ে সেখানে প্রচুর ক্রেতার ভিড় পড়ে। ব্যবসায়ীরা গড়ে কয়েক লাখ টাকার নতুন নোট বিক্রি করে থাকেন। দুই টাকা নোটের এক বান্ডিল (১০০টি নোট বা ২০০ টাকা) ৩০ টাকা লাভে বিক্রি হয় ২৩০ টাকায়। পাঁচ টাকার এক বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা লাভে ৫৬০ টাকায়। ১০ টাকা নোটের এক বান্ডিল ৮০ টাকা লাভে বিক্রি হয় ১ হাজার ৮০ টাকায়। ২০ টাকা নোটের এক বান্ডিল ১০০ টাকা লাভে বিক্রি হয় ২ হাজার ১০০ টাকায়। ৫০ টাকা নোটের এক বান্ডিল ২৫০ টাকা লাভে বিক্রি হয় ৫ হাজার ২৫০ টাকায়।
নতুন নোটের ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, সবসময় নতুন নোটের ব্যবসা হয় না, ঈদকে সামনে রেখে বিক্রি বাড়ে। সবাই চায় ঈদে নতুন টাকা দিয়ে ঈদ সালামি দিবে। সেজন্য নতুন টাকা কিনতে আসে। তিনি বলেন, পুরাতন ১০০ টাকার নোটের পরিবর্তে যদি ১০ টাকার দুটি নতুন নোট দেওয়া হয় ঐ ১০০ টাকার চেয়ে নতুন নোট পেয়ে হাজারগুণ বেশি খুশি হয় ছোটরা। শুধু ছোট বাচ্চারাই বা কেন, বড়দেরও নতুন নোট ভালো লাগে। এ জন্য ঈদ এলেই কদর বাড়ে টাকার নতুন নোটের। আবার অনেকে যাকাত ফিতরা দিতেও নতুন টাকার ব্যবহার করে থাকেন।
নতুন নোট কিনতে আসা সাইফুল আলম বলেন, ঈদে ঈদ সালামি দিতে হবে। তাই নতুন নোট নিতে আসলাম। ব্যাংকে নোট কিনতে গিয়ে লম্বা লাইন ধরতে হয়, আবার অনেক সময় পাওয়া যায় না। এখানে বিক্রেতাদের কাছ থেকে সহজে কেনা যায়।
জানা যায়, ঈদকে ঘিরে সাধারণ জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রামের জন্য দুই দফায় ১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার নতুন নোট বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা নোটের মোট ১৮ হাজার টাকা বিনিময় করতে পারছেন গ্রাহকরা। এতে দিতে হচ্ছে আঙুলের ছাপ। তবে নগরীর ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছে আঙুলের ছাপ ছাড়াই। গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাত কর্মদিবসে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রতিটি শাখায় পুরুষ ও মহিলা আলাদা কাউন্টারে জনপ্রতি ১০০, ৫০, ২০ ও ১০ টাকা মূল্যমানের এক প্যাকেট করে মোট ১৮ হাজার টাকার নতুন নোট বিনিময় করা যাবে। কেউ ইচ্ছা করলে কাউন্টার থেকে পরিমাণ নির্বিশেষে যেকোনো মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাও নিতে পারবেন। এছাড়া ব্যাংক এশিয়ার অক্সিজেন শাখা, যমুনা ব্যাংকের বহদ্দারহাট শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের হালিশহর শাখা, এবি ব্যাংকের ইপিজেড শাখা এবং প্রাইম ব্যাংকের আইবিবি পাহাড়তলী শাখা থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে।