ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীরা

66

রমজান ও ঈদ বাজারকে ঘিরে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মার্কেটগুলো টার্গেট করেছে তারা। বাজার করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতে নগরীতে ছড়িয়ে পড়েছে এসব ছিনতাইকারীরা। তাদের ‘বস্’দের নির্দেশনায় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ছিনতাইরোধে নগর পুলিশও কঠোর অবস্থানে। পুলিশ গত ১০ দিনে ১৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ‘বস্’ও রয়েছে পাঁচ জন। এক দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতও হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে তালিকাভুক্ত ৫০০ ছিনতাইকারী রয়েছে। তারা ৩০ থেকে ৩৫ গ্রুপে বিভক্ত। এদের মধ্যে ১৩০ জনের মত পেশাদার ছিনতাইকারী রয়েছে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে বর্তমানে জেলে আটক রয়েছে ১৫০ জন। বাকি ৩৫০ জন বাইরে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোতোয়ালী থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার নতুন রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো, রাব্বী আল আহমদ (২৬), মো. আব্দুল মঈন উদ্দিন প্রকাশ অন্তর (২৪) ও সাইদুর রহমান (১৮)। তাদের কাছ থেকে দুইটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৬ মে) নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ অস্ত্রসহ তিন পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো- মো. নুরুল আলম প্রকাশ কালু (৪১), মো. কামাল হোসেন (৩৫) ও মো. জসিম উদ্দিন প্রকাশ জসিম (৩৮)। তারা শতাধিক ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বলে জানান বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মো. আতাউর রহমান। এর আগে ৫ মে বাকলিয়া থানা পুলিশ মো. সিরাজ প্রকাশ হৃদয় (১৯) ও মো. ওমর ফারুক প্রকাশ ডিজে ফারুক (১৯) নামে দুই দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানায়, বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মো. সিরাজ প্রকাশ হৃদয় ও মো. ওমর ফারুক প্রকাশ ডিজে ফারুক দু’জনই দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। তাদের দু’জনের অধীনে রয়েছে ১০টি গ্রæপ। শাহ আমানত সেতু এলাকায় তারা দেড় থেকে দু’শ’ ছিনতাইয়ে জড়িত। এছাড়া বায়েজিদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নুরুল আলম প্রকাশ কালু ওই এলাকার বস্ হিসেবে পরিচিত। তার নির্দেশনা ছাড়া বায়েজিদ এলাকায় কোনও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে না।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাইকারীরা এক প্রকার নিষ্ক্রিয় ছিল। মাঝেমধ্যে ছিনতাইরে ঘটনা ঘটালেও খুব বেশি তৎপর ছিল না। তবে রমজান ও ঈদকে ঘিরে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, ঈদকে সামনে রখে ছিনতাইকারীরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ঈদ মার্কেটকে টার্গেট করেছে। যারা বাজার করতে আসবে তাদের টার্গেট করেই মাঠে নামার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা হবে না। আমরা ছিনতাইরোধে সব রকম কৌশল অবলম্বন করেছি। তারা কোনোভাবেই সফল হবে না।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, প্রতি বছর রমজান ও ঈদে তারা তৎপর হয়ে উঠে। গ্রæপভিত্তিক ভাগ হয়ে ছিনতাই কাজে লিপ্ত হয়। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা বা জমা দিতে যাওয়া লোকজন টার্গেট করলেও রমজান ও ঈদে মার্কেট টার্গেট করে তারা। অভিজাত মার্কেটের আশেপাশে অবস্থান নেয় তিন বা চার জনের গ্রæপ। সুযোগ বুঝে টাকা ছিনতাই করে। নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগও তাদের টার্গেটের মধ্যে থাকে। তাদের টার্গেটের মধ্যে রয়েছে, নিউ মার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, ইউনুস্কো সেন্টার, শপিং কমপ্লেক্স, সানমার ওশান সিটিসহ অভিজাত বিপনিগুলো। এসব মার্কেটের আশেপাশেই তাদের অবস্থান বেশি। তবে রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ মাঝারি মার্কেটও তাদের টার্গেটের বাইরে নয়।
সূত্র জানায়, ছিনতাইকারী গ্রুপের তিন থেকে চার জন সদস্য মার্কেটের আশপাশে অবস্থান করে। মার্কেট করতে লোকজন আসার সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের কাছে প্রাইভেট কারও থাকে। আবার সিএনজি ট্যাক্সিও ব্যবহার করে। কার ও ট্যাক্সি চালকও তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
এদিকে রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক ছিনতাইরোধে পুলিশও কঠোর অবস্থানে। সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান নিজ নিজ এলাকায় ছিনতাই রোধ করতে থানার ওসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদকে ঘিরে ছিনতাইকারীরা যাতে কোনোভাবেই মাঠে নামতে না পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ বাজার করতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। মার্কেটগুলোর সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও মাঠে রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ১০ দিনে ১৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জন বস্ রয়েছে। যারা দেড় থেকে দু’শ’ ছিনতাইয়ে জড়িত। তারা একাধিক গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
বায়েজিদ থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, গ্রেপ্তার হওয়া নুরুল আলম কালু পুরো বায়েজিদ এলাকায় ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে। ওই এলাকার সব গ্রুপ তার নির্দেশনায় কর্মকান্ড চালায়।