ই-কমার্স কোম্পানিগুলো বিখ্যাতদেরও ‘বিপদে’ ফেলে দিচ্ছে

10

দেশের ই-কমার্স কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার প্রচার কৌশলে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জড়িয়ে ফেলে তাদেরও ‘বিপদে ফেলে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এ ধরনের কোম্পানিতে লগ্নি করার আগে তা কতটা নিরাপদ হবে, তা সবাইকে ভেবে দেখারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
একের পর এক ই কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানো ও প্রতারণার অভিযোগ আসতে থাকায় গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ই-বিজনেস বলুন আর যেটাই বলুন, কতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে- ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ এর মধ্যে কীভাবে যেন আমাদের বেশ কয়েকজনের নামও জড়িত করে ফেলেছে। একজনের নাম তো বলতেই হয়- প্রখ্যাত নিউরো সার্জন এম আলী। তিনি তো আমার কাছে এসে কেঁদে কেঁদে বলেছেন, তিনি কিছুই জানতেন না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (এম আলী) একজন প্রখ্যাত ডাক্তার। টেলিমেডিসিন কীভাবে প্রসার করা যায় সে বিষয়ে ধামাকার সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। এখন তার নামটি ধামাকায় দিয়ে সেই বেচারা বিপদেই পড়েছেন আমরা দেখছি।’
ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি বছর তিনেক আগে যাত্রা শুরু করে বিরাট ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে দ্রæত মানুষের নজরে আসে। মোটরসাইকেল, গাড়ি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রের মত দামি পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে দ্রæত তারা গ্রাহক টানতে থাকে।
ইভ্যালির পথ ধরে আরও অনেকগুলো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এই মহামারীর মধ্যে ব্যবসা শুরু করে দ্রæত পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এখন প্রতারণার অভিযোগ আসছে।
অল্প দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বেচে দেওয়ার অশায় অনেকে লাখ লাখ টাকার পণ্যের অর্ডার করেছিলেন এসব কোম্পানিতে। কিন্তু তারা এখন পণ্যও পাচ্ছেন না, অগ্রিম হিসেবে দেওয়া তাদের টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মালিকরা ইতোমধ্যে গ্রাহকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সরকারের তদন্তে তাদের শত শত কোটি টাকার দেনায় থাকার তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইভ্যালি একটা, আরও কয়েকটা মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। কীভাবে তারা তাদের কমিটমেন্ট পূরণ করবে এটা আমার এখন জানা নেই। আমরা মনে করি, তারা যে কমিটমেন্ট জনগণকে দিয়েছে, তা যদি পূরণ না করে, তবে আইন অনুযায়ী আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং করতেই হবে।’
তবে গ্রাহকদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এ ব্যাপারে লগ্নি করেন, ইনভেস্ট করেন, তার আগে বুঝে-শুনে করবেন। আপনারা প্রতারিত যাতে না হন। আপনারা নিজে চিন্তা করবেন, এই যে প্রলোভন আপনাদের দেখাচ্ছে এটা বাস্তবসম্মত কি-না, প্রতারিত হওয়ায় সম্ভাবনা কি রকম সেটাও যেন যাচাই করে ইনভেস্ট করেন।’ খবর বিডিনিউজের
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই বার্তাটা দিতে চাই, যারা প্রতারণা করবেন তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে বের করবে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা আমরা করব। কেউ যদি প্রতারণার উদ্দেশ্যে করেন। আমাদের কাছে খবর আসছে, এগুলো তদন্তে কমিটি কাজ করছে।’
ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এক মামলায় আসামি হওয়ার পর সোহেল রানা নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক সম্প্রতি পালিয়ে গিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে দেশে ফেরানোর অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেগুলো সিস্টেম অনুযায়ী চলে আসবেই। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, যারা লোভনীয় মুনাফার কথা বলছেন, যে গাড়ির দাম ১০০ টাকা, বলছে ৫০ টাকায় দেবে, এগুলো বাস্তবসম্মত কি না, সেগুলো দেখে-শুনে ইনভেস্ট করার জন্য অনুরোধ করছি, যেন কেউ প্রতারিত না হয়।’
ই-কমার্সের অনুমোদন যারা দিচ্ছেন, তাদের দিক থেকে কোনো দুর্বলতা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এটা জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমার কথা হল, যদি কেউ প্রতারণা করেন, আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা প্রতারিত হচ্ছেন, প্রতারণার শিকার হওয়ার আগেই বারবার চিন্তা করে ইনভেস্ট করবেন, এটা হল আমাদের রিকোয়েস্ট।’