ইয়াবা ডন সাইফুল করিম বন্দুকযুদ্ধে নিহত

153

দেশজুড়ে আলোচিত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ওরফে হাজি সাইফুল পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার পর নাফ নদীর স্থলবন্দর সীমানা প্রাচীর এলাকায় ইয়াবা উদ্ধার অভিযানের সময় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষায় ‘দেশের এক নম্বর মাদক চোরাকারবারি’ সাইফুল করিম।
টেকনাফ থানার পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের একটি দল মিয়ানমার থেকে আনা ইয়াবা উদ্ধারে গেলে সাইফুলের সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি ছুঁড়ে। তখন পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। এ সময় পুলিশের এসআই রাসেল আহমদ, কনস্টেবল ইমান হোসেন ও মো. সোলেমান আহত হন। একপর্যায়ে সাইফুল করিম গুলিবিদ্ধ হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে প্রথমে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাইফুল করিম মারা যায়। নিহত হাজী সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিংসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
মামলাগুলো হলো, টেকনাফ থানার এফ আই আর নং-১৫/৩৩৬, তারিখ-০৫ মে, ২০১৯; ঘটিকা ধারা-১৯ (ধ)/১৯(ভ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন; টেকনাফ থানার এফ আই আর নং-১৫/৩৩৭, তারিখ-০৫ মে, ২০১৯; ঘটিকা ধারা-৩৬(১) এর ১০(গ)/৪১ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮; ডবলমুরিং মডেল থানার এফ আই আর নং-৫৬, তারিখ-৩০ এপ্রিল, ২০১৯; ধারা-৪ (২) ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন; ২৬ (২)/২৭ (১) ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন; টেকনাফ থানার এফ আই আর নং-৪৩/৬৮২, তারিখ- ০৯ নভে, ২০১৮; ঘটিকা ধারা- ১৯(১) এর ৯(খ)/২৫ ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, টেকনাফ থানার এফ আই আর নং-১০, তারিখ- ০৩/০৫/২০১৯খ্রি: ধারা- ১৯ (অ)/১৯(ভ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন; টেকনাফ থানার এফ আই আর নং-১১, তারিখ- ০৩/০৫/২০১৯খ্রিঃ ধারা- ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) এর ১০ (গ)/৪১, সিএমপি হালিশহর থানার মামলা নং- ১(৫)১৮, ধারা- ১৯৯০ সলের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯ (খ)/২৫/৩৩(১)।
সূত্র জানায়, টেকনাফে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলে শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম আতœগোপনে চলে যায়। পরে সরকার আতœসমর্পণের সুযোগ দিলে প্রথম ধাপে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আতœসমর্পণ করে। তখন থেকে সাইফুল করিমও দ্বিতীয় ধাপে আতœসমর্পণের সুযোগ খোঁজে। কিন্তু বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হওয়ায় সে সুযোগ আর পেলেন না তিনি। এর ফলে দেশের এক শীর্ষ মাদক ইয়াবা স¤্রাটের পতন ঘটে। এই ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুলের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার স¤পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বলেও জানা গেছে। নিহত সাইফুল করিম টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়া এলাকার চিকিৎসক মো. হানিফ প্রকাশ হানিফ ডাক্তারের ছেলে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস জানান, ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ পিস ইয়াবা, ৪২টি শটগানের গুলি ও ৩৩টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ইয়াবা কিং সাইফুল করিম নিহত হওয়ার পর মাদকের কারণে আলোচিত সরকারদলীয় সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির সাথে ইয়াবা ডন সাইফুল করিমের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ছবিগুলো নিয়ে নানা মন্তব্য করছে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। তারা জানতে চেয়েছেন, সাইফুল করিমের গডফাদার বা আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের কি হবে? অনেকেই সাইফুল করিমের মতোই পরিণতি প্রত্যাশা করেন তার সিন্ডিকেটের সব রাঘববোয়ালদের।
গত বছরের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের হালিশহরে এক চালানে ১৩ লাখ পিস ইয়াবাসহ আটক হওয়ার পর কক্সবাজার ও মিয়ানমারের মূল চোরাকারবারিদের নাম বেরিয়ে আসে। তাদের একজন সাইফুল করিম। ১৩ লাখ ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত দুই আসামি রশিদ ওরফে মুন্না ও আশরাফ আলী চট্টগ্রামের আদালতে সাইফুল করিম এবং মিয়ানমারের চোরাকারবারি আবদুর রহিমকে জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে ১৮ কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়টি উঠে আসে।
২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১৫১ জনের মাদক কারবারির তালিকার এক নম্বরে ছিল এই সাইফুল করিমের নাম। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান এনেছিলেন তিনি। দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীকে মাদকাসক্ত করার পেছনে তার ভ‚মিকা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় ১ নম্বর, কক্সবাজারের গডফাদারের তালিকায় ২ নম্বরে ছিল সাইফুলের নাম।
কাগজে কলমে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরের একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। কিন্তু আমদানি-রপ্তানির আড়ালে তিনি মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন। সরকারের সর্বশেষ তালিকায় এক নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে তার নাম উঠে আসে। এমনকি প্রত্যেক গোয়েন্দা রিপোর্টের শীর্ষে সাইফুল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। গত মাসেও দুদকের পক্ষ থেকে তার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসায় স¤পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৩ মে সাইফুলের ছোট ভাই মাহবুব করিম ও রাশেদুল করিমকে টেকনাফের নিজ বাড়ি থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও ৪টি অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ। আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত অনলাইন পোর্টালের স¤পাদক ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে স্থানীয়দের ভয়-ভীতি দেখাতেন তারা। এর আগে গত বছর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে সাইফুলের বড় ভাই মুন্না আটক হন। এসময় জেট করিম নামের অপর এক ভাইও নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে ঘোষণা দেন। রাতারাতি সাংবাদিক বনে যাওয়া সাইফুল করিমের তিন ভাই ও তাদের অনুগত একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সাইফুল করিমের হয়ে প্রচারণার কাজ করতেন। তারা সাংবাদিকতা পেশাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে নিজেরাই ইয়াবা ব্যবসা করতেন। টেকনাফে এখনো এই সিন্ডিকেটের দাপট রয়েছে। এমনকি টেকনাফ থানার পুলিশের ছায়া সঙ্গী হিসাবে সার্বক্ষণিক কাজ করেন ওই সিন্ডিকেটের এক ব্যক্তি, যিনি শীর্ষ পত্রিকার আলোচিত এক সাংবাদিকের ভাই। কক্সবাজার শহরের বসবাসকারী দেশের শীর্ষ দৈনিকের ওই সাংবাদিক তাদের সবকিছু দেখভাল করতেন।

ফটকা কারবারী থেকে মাফিয়া ডন
সাইফুলের হাত ধরেই
দেশে ইয়াবার প্রবেশ
মিয়ারমারের ৩৬টি ইয়াবা কারখানার ডিলার তিনি
রতন কান্তি দেবাশীষ
ফটকা ব্যবসায়ী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক ইয়াবা ডন সাইফুল করিম। টেকনাফে বাড়ি হলেও চট্টগ্রাম শহরেই তার বেড়ে উঠা। মিয়ানমারে ৩৬টি ইয়াবা কারখানার ডিলার ছিল এই সাইফুল করিম। সারা দেশে ইয়াবা পাচার ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল মরণনেশা ইয়াবা। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে ধ্বংস করে সাইফুল করিম হয়েছিলেন অঢেল টাকার মালিক। তিনি কখনো ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মদদে। আবার কখনো নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতেন বিদেশে। হালিশহরের তার বাসাটি ছিল ইয়াবার গোডাউন। তিনিই ইয়াবা ছড়িয়ে দেন দেশজুড়ে। পুলিশ, রাজনীতিকসহ প্রভাবশালীদের সাথে ছিল তার উঠাবসা। তাই কাউকেই থোরাই কেয়ার করতেন না তিনি। মাদকবিরোধী অভিযানকালে তারই ‘গুরু’ দের পরামর্শে পালিয়ে যান দুবাই। সেখান থেকে ইয়াঙ্গুন হয়ে দেশে ফিরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এতে সাইফুল যুগের অবসান ঘটে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর কোরবানীগঞ্জে তার বাবা ডাক্তার হানিফ পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভাল ছিল না। তিনি এমইএস কলেজে পড়াশোনা করতেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া বেশিদূর গড়ায়নি। ১৯৯৭ সালের দিকে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পণ্য বেচাবিক্রিতে সহায়তা করে খরচ যোগাতেন তিনি। ব্রোকারি ছিল তার পেশা। এভাবেই কোন রকম অভাব অনটনে দিন চলতো তার। ওই সময় তার দাদার বাড়ি মিয়ানমার মংডু এলাকার ইয়াবাডন খ্যাত মিয়ানমারের মোস্ট ওয়ান্টেড মগা সুইবিন নামক এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারীর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে তার হাত দিয়েই ইয়াবা ঢুকে বাংলাদেশে। ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে টেকনাফ স্থল বন্দরে এসকে ইন্টারন্যাশনালের নামে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ২০০১ সালের দিকে সরকারের পালাবদলের সাথে সাথে টেকনাফ বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহর সাথে হাত মিলিয়ে তার বোনকে বিয়ে করে টেকনাফ স্থল বন্দর নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এরপর ধীরে ধীরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে সাইফুল করিমের ইয়াবারাজত্ব। প্রথম দিকে বেশির ভাগ ইয়াবা মাছধরার বোটের করে চট্টগ্রামে নিতেন। গাড়ি যোগেও নিতেন। ১৯৯৭-৯৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে ইয়াবার বিশাল বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হন সাইফুল ও তার সিন্ডিকেট। কয়েক বছরের মাথায় চোখের সামনেই সাইফুল করিম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা কোটি টাকার মালিক বনে যায়। তার এ সিন্ডিকেটে সদস্য ছিল অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন। ইতোমধ্যে তারা হয়ে উঠেন সাইফুল করিমের অনেকটা সমমানের কারবারী। এভাবে বাড়তে থাকে তাদের সা¤্রাজ্য। তাদের আস্তানা ছিলো খাতুনগঞ্জের কোরববানীগঞ্জে অবস্থিত সাইফুল করিমদের ফার্মেসি এবং রিয়াজউদ্দীন বাজারের একটি হোটেল। সেখান থেকেই সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে ইয়াবা বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ধীরে ধীরে তারা চট্টগ্রামের বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে ইয়াবা কারবার শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে সাগর পথে চালান আনলেও ২০০৩ সালের দিকে সড়ক পথেই বেশি ইয়াবার চালান পাচার করতে থাকে এ সিন্ডিকেট। ইয়াবারাজত্ব বাড়ার সাথে সাথে সাইফুল করিম ও তার সিন্ডিকেটের শীর্ষ সদস্যদের জৌলুস ও বিলাসিতা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে একটি রকি জিপ কিনেন সাইফুল করিম। ওই জিপ নিয়ে পুরো চট্টগ্রাম শহর ঘুড়ে বেড়াতেন।
জানা গেছে, ২০০৩ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যাপক ইয়াবার বিস্তার ঘটায় সাইফুল ও তার সিন্ডিকেট। প্রতিদিনই লাখ লাখ ইয়াবা তিনি আনতেন। তিনি এসকে গ্রæপ, এসকে ইন্টারন্যাশনাল নামে দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। মাদকের তকমা আড়াল করতে প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলে হয়েছেন দুই বার সর্বোচ্চ করদাতা (সিআইপি)। তাছাড়া চট্টগ্রাম-ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে তার নামে বেনামে ব্যবসা, জমিজমা রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, তার পাঁচ ভাইয়ের মাধ্যমে স্থানীয় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে নগরীর কাজির দেউরীস্থ ভিআইপি টাওয়ারে অবস্থানরত এক মামার সাথে যৌথভাবে বাণিজ্য পণ্যের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে মাদকের চালান চট্টগ্রাম পাচার করা শুরু করে। উক্ত মাদকের চালান খাতুনগঞ্জ থেকে কৌশলে তার মামা দেশের অন্যান্য জায়গায় পাচার করে দেশব্যাপী বিশাল মাদক সিন্ডিকেট গড়ে কয়েক বছরের মাথায় ফটকা থেকে শিল্পপতি হিসেবে নাম উঠে আসে সাইফুলের।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ইয়াবা কারবার করে কারো রক্ষা নাই। পুলিশের হাতে তাদের ধরা পড়তেই হবে। ইয়াবা কারবারিদের উপর আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। বিদেশে থাকলেতো থাকল, দেশে এলেই ধরা পড়বে। তাদের ছাড় দেয়ার কোন ধরনের সুযোগ নেই। মাদক নিয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।
সূত্র জানায়, সাইফুল ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই নম্বর তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী। মিয়ানমারে অবস্থিত ৩৬ অবৈধ ইয়াবা কারখানায় বাংলাদেশের একমাত্র ডিলার তিনি। এসব কারখানায় যত ইয়াবা তৈরি হত সবই সাইফুলের কাছে পাটানো হত। তিনি চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করলেও টেকনাফ-কক্সবাজারে ছিল তার সিন্ডিকেটের লোকজন। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার পর তার এদেশীয় এজেন্টরা নৌ ও সড়কপথে সেগুলো নগরীতে পাঠিয়ে দিত। মাসে তার সিন্ডিকেট এক কোটিরও বেশি ইয়াবা পাঠাত তার কাছে। হালিশহরে তার বাড়িটি ছিল ইয়াবার গুদাম। আশপাশের আরো কয়েকটি বাসাও ভাড়া নিয়েছিল গুদাম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। লাখ লাখ ইয়াবা বস্তা ভরে রাখা হত গুদামে। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হত। গত বছর র‌্যাব তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে। এসময় তার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইয়াবা ব্যবসা নির্বিঘœ করতে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। ব্যবসা ধরে রাখতে তাদের কোটি কোটি টাকা দিতেন সাইফুল। এমনকি ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি পর্যন্ত উপঢৌকন হিসেবে দিতেন। এক ওসির সাথে কক্সবাজারে যৌথ হোটেলও করেন তিনি। তবে কোন টাকা ছাড়াই ওই ওসি পার্টনার হয়েছেন। পুলিশ, রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করার পেছনে তার মাসিক খরচ ১০ কোটি টাকারও বেশি ছিল বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়মিত কোটি কোটি টাকা দিতেন সাইফুল।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ইয়াবা কারবার করে আসলেও কোন থানায় মামলা বা জিডি নেই তার বিরুদ্ধে। এদিক দিয়ে তিনি ছিলেন খুবই চতুর। গত বছর ৪ এপ্রিল তার বাসা থেকে ১৩ লাখ ইয়াবা ধরা পড়ার পর প্রথমে মামলা হয়। এরপর আরো ৮টি মামলা হয়।
গত বছর মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে তিনি দুবাই পালিয়ে যান। সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করতে থাকেন। সেখান থেকে ইয়াঙ্গুন হয়ে গত শনিবার দেশে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।