ইসলাম উদার ও সম্প্রীতির কথা বলে

7

 

দায়িত্বশীল মুসলিম কখনও উসকানিমূলক কথাবার্তা কিংবা অনৈতিক কার্যকলাপ করতে পারে না। সত্যিকার মুসলিমকে অবশ্যই ন্যায়বান হতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবে না। তোমরা ন্যায়বিচার করো, এটা পরহেযগারির অধিকতর নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে পূর্ণ অবগত।’ (সুরা মায়েদা আয়াত: ৮)।
সা¤প্রতিক সময়ে কুমিল্লার একটি পূজামÐপে গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ বুধবার পবিত্র কোরআন অবমাননার একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব মিডিয়ায়। নানুয়ার দিঘীরপাড় পূজামÐপে হিন্দু দেবতা হনুমানের কোলে পবিত্র কোরআন রাখা হয়েছে। অভিযোগ আছে এই জঘন্য কর্মকান্ডটি করেছে ইকবাল হোসেন নামে একজন নামধারী মুসলমান। পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত করে সত্যিকার ভাবে বিচার হোক। এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক অপহিংসায় বিশেষ গুষ্ঠিকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। কুরআন অবমাননার জের ধরে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিলো। যা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। অতীতে এদেশের অনেক এমপি- মন্ত্রী বিশ্ব মুসলমানদের মহা সম্মেলন হজ সহ বিভিন্ন ইসলামিক বিষয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলো। যা একজন সত্যিকার মুসলমানের এরূপ মন্তব্য করা কখনোই সম্ভব নয়। আবার অনেক নাস্তিক মুরতাদ আছে তারা নামে মুসলমান কাজে নয়। এইসব নামদারী মুসলমান যদি কোন ধর্ম বিরোধী অপকর্মে লিপ্ত হয়। সেটার দায়ভার ধর্মপ্রাণ মুসলমান গুষ্ঠি কিংবা ইসলামের পক্ষের শক্তি কেন নেবে? শুধু নামে মুসলমান হলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ কিংবা জান্নাত পাওয়া যাবে না সাথে প্রয়োজন আমলও।
নামে মুসলমান নয়, কাজে কিংবা আদর্শে তথা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সত্যিকার মুসলমান হওয়া চাই। নামধারী মুসলমানরা ইসলামের কিছু বিধান পালন করে আর কিছু পালন করে না। যে ব্যক্তি ইসলামের সকল বিধান মানে না, সে দূর থেকে দর্শকের দৃষ্টিতে মুসলমান; কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত মুসলমান নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যারা কোরআন সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ করে, তারাই প্রকৃত মুসলমান। এরশাদ হচ্ছে- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।’ (সুরা বাকারা : ২০৮)। আল কুরআনে বিভিন্ন স্থানে মহান রাব্বুল আলামিন প্রকৃত মুসলমানের বেশ কয়েকটি গুণ বর্ণনা করেছেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে- ‘যাদের সামনে আল্লাহর কথা স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর ভীত হয়, যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করে, যারা নামাজ কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা হজ : ৩৫)। এ ছাড়াও সুরা মুমিনুনের প্রাথমিক আয়াতগুলোতে আল্লাহতায়ালা প্রকৃত মুসলমানের গুণ এভাবে বর্ণনা করেছেন- ‘যারা নিজেদের নামাজে নম্র, যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত, যারা জাকাত প্রদান করে।’ (সুরা মুমিনুন : ২-৪)।
কুরআনের ভাষায়, নামধারী মুসলমানরা মুনাফিক। সমাজে তারা বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি করে থাকে। প্রায় সময় কোন একটা ইস্যু তৈরি করে একে অপরের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করে। অথচ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সাবধান! এরাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। কিন্তু এদের সে অনুভ‚তি নেই।’ (সুরা বাকারা : ১২)।
আল কুরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা আপনার কাছ থেকে ফেরে তখন তারা দেশের মধ্যে অনিষ্ট ঘটাতে এবং ফসলাদি ও জীবজন্তু ধ্বংস করতে চেষ্টা করে, আল্লাহ বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টি পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২০৫)।
অথচ নামদারী মুসলমানরা প্রচার-প্রোপাগান্ডায় নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে দাবি করে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখনই তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি কোরো না। তারা উত্তরে বলে, আমরাই তো সংশোধনকারী ও শান্তিকামী।’ (সুরা বাকারা : ১১)।
স্বাধীন বাংলা জন্মের পর থেকে এদেশে হিন্দু মুসলিম একসাথে শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান করে আসছে। পরস্পরের সাথে তাদের রয়েছে অনন্য সম্পর্ক। ধর্মের ভিন্নতার কারণে তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দে তেমন কোনো ত্রুটি দেখা যায় না। অনেক এলাকায় পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে একসাথে হিন্দু মুসলিম যার যার ধর্ম পালন করে এসেছে। বেশকিছু কাল ধরে আমাদের এই সুন্দর ঐতিহ্য নষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু নামধারী মুসলমান।
নামধারী কিংবা উগ্রবাদী শুধু মুসলিমদের মাঝে আছে এ কথাটি ঠিক নয়, অমুসলিমদের মাঝেও আছে। যেটার প্রমাণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জয় শ্রী রাম এর নামে মুসলমানদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। একই সাথে মুসলমানদের ঐতিহ্য ও পুরানো স্থাপত্য বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। আরেক পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের অমানবিক নির্যাতন ভুলবার নয়। এমনকি অতীতে স্বাধীন বাংলাদেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কুরবানী নিয়ে কিছু উগ্রবাদ হিন্দু বিরূপ মন্তব্য করেছিলো। তাই বলে পুরো হিন্দু গুষ্ঠিকে দোষারোপ করা হবে সেটাও কিন্তু ঠিক নয়।
লেখক : কলামিস্ট