ইসলামের বিস্ময়কর ঘটনা-১

1533

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী

মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে দামি জিনিস হলো ঈমান। ঈমান মুসলমানের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ দান। এই নুরানী ঈমান মুসলমানের মৃত্যুর পর সংকটময় মুহূর্তে বেহেস্ত হতে হাজির হয় কবরে। ঈমানকে যদি মজবুত করে পরকালে নিয়ে যেতে না পারি তাহলে ইহকালের জীবন ব্যর্থ। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ঈমানকে লালন পালন করার মাধ্যমে সতেজ রাখ। রাসুল (দ.) এর অনুসরণে যেভাবে সাহাবী, তাবেয়ী, তাবেতাবেয়ী ও আল্লাহর আলীগণ ঈমানকে মজবুত করেছিলেন, সেভাবে ঈমানকে মজবুত করতে হবে। তাদের বিস্ময়কর ঘটনাগুলো মুসলনাদের এখনও ঈমানকে সজীব রাখতে সহায়ক বলে কয়েকটি ঘটনা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
জাহান্নামের আগুনের ভয়ে :

ঈমাম জয়নুল আবেদনী (র.) একদিন মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। এমনি সময় সমজিদে আগুন জ্বলে উঠে। সকল নামাজীরা মসজিদ হতে বের হয়ে গেলেও ঈমাম জয়নুল আবেদীন (র.) নামাজরত থাকেন। আগুন ঈমামকে ঘিরে ফেললে কিছুলোক তাঁকে আগুন হতে বের করে নিয়ে আসে। তাঁরা ঈমামের কাছে জানতে চাইল জনাব, পুরো মসজিদে আগুন জ্বলছে, আপনি তা বুঝতে পারেননি ? ঈমাম বললেন, জাহান্নামের আগুনের ভয় আমাকে দুনিয়ার আগুনের উপস্থিতি বুঝতে দেয়নি।
আমরা সৈয়দুনা ঈমাম জয়নুল আবেদীনের মত আল্লাহর ভয় নিয়ে নামাজ পড়তে পারবো না, কিন্তু আল্লাহর ধ্যানের মাধ্যমে নামাজের ঘটনাটা কাটাতে তো পারি।
সাহাবীর ঘোষণায় জঙ্গল খালি :

মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিখ্যাত সাহাবী হযরত উকবা ইবনে নাফে (রা.)’র নেতৃত্বে ঊনিশজন সাথী তিউনিসিয়ায় হাজির হন। এই সাহাবীরা সেখানে একটি টিলার উপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, আমরা আল্লাহর রাসুল মোহাম্মদ (দ.)’র গোলাম। আগামী তিন দিনের মধ্যে সব হিং¯্র প্রাণী এই জঙ্গল হতে বের হয়ে জঙ্গলটি খালি করে দিবে। তিনদিন পর যে হিংস্র প্রাণী পাওয়া যাবে তাকেই হত্যা করা হবে। এক ঘোষণায় তিন দিনের মধ্যে সকল বাঘ, সিংহ, সাপসহ সকল হিং¯্র প্রাণী পালিয়ে যায়। খালি হয়ে যায় চল্লিশ বর্গমাইল জঙ্গল। আল্লাহর রাসুল (দ.)’র সাহাবীর ঘোষণা জীব জন্তুরা পালন করেছে। অথচ আজ বাবা-মায়ের কথা ছেলেরা শুনেনা, ওস্তাদের কথা ছাত্ররা মান্য করে না, আলেমদের কথা আওয়ামগণ মানে না, কারণ আমাদের কাছে ঈমানের জোর কমে গেছে, আমরা সত্য ও ন্যায়ের পথ হতে বিচ্যুত হয়েছি।
নবীজীর দোয়ার বরকতে :
একদিন সাহাবী কাব ইবনে জুহাইর (রা.) আল্লাহর রাসুল (দ.) এর প্রশংসা করে কবিতা পাঠ করলেন। নবীজী আনন্দিত হয়ে নিজের চাদর মোবারক তাঁকে উপহার দিলেন এবং দোয়া করে বললেন, তোমার দাঁত সুরক্ষিত থাকুক। এই বাক্যটি দ্বারা রাসুল (দ.) বুঝিয়েছেন, তুমিতো সুসাহিত্যের অধিকারী, আল্লাহ পাক তোমার সাহিত্যেকে স্থায়ী রাখুক। আল্লাহ তাঁর রাসুল (দ.) এর দোয়া কবুল করেছিলেন, একশত বছর পরও হযরত কাব (রা.)’র একটি দাঁতও পড়েনি এবং মলিনও হয়নি। শত বছর পরও তাঁর দাঁতের দিকে তাকালে মনে হতো তিনি যেন বিশ বছরের যুবক। শরীর ভেঙে গেছে কিন্তু তাঁর চেহারা ইজ্জল ছিল। তা ছিল আল্লাহর নবীর দোয়ার বরকত।
ফেরেস্তারা সাহাবীর লাশ বহন :
হযরত সাদ(রা.) ছিলেন আল্লাহর রাসুল (দ.) এর দীর্ঘ এবং স্বাস্থ্যবান একজন সাহাবী। তাঁর মৃত্যুর পর যখন জানাজা কাঁধে তোললেন তখন দেখাগেল একেবারে ওজন নেই। তা দেখে কয়েকজন মুনাফিক বলাবলি করতে লাগলো, মুনাফিক ছিল বলেই তাঁর জানাজার ওজন নেই। এ কথা আল্লাহর রাসুল (দ.) এর কানে গেলে তিনি বললেন, হুঁশিয়ার হয়ে কথা বল, সাদের জানাজা তোমরা বহন করছো না, করছে ফেরেস্তারা। কোন ব্যক্তি কামিল হলে তাঁর জানাজা মানুষ নয় শুধু ফেরেস্তারাও বহন করেন।
পূর্বের নবীর অনুসরণে মহানবী (দ.)
উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেট মোবারকের উপর হাত বুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (দ.) ! আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আপনি ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, হাত দিয়ে পেট চেপে ধরছেন, অথচ আপনার আঙ্গুল মোবারকের ইশারায় সবকিছু সামনে হাজির করতে পারেন। তারপরও এত কষ্ট আপনি ভোগ করছেন কেন ?
আল্লাহর নবী (দ.) ইরশাদ করলেন, হে আয়েশা ! আমার পূর্বে যত নবী রাসুল দুনিয়াতে আগমন করেছেন, তাঁরা সবাই ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করেছেন। আমি আমার সেই ভাইদের পথ অনুসরণ করতে চাই। আপনি ইচ্ছা করলে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আমার সামনে হাজির হবে। আমি তা চাই না। আমি আমার ভাইদের অনুসরণ চাই।

যাঁর জানাজায় সত্তর হাজার ফেরেস্তার অংশগ্রহণ :
তাবুকের সফরে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) সকালে সূর্যের আলো অধিক প্রকাশ হতে দেখছিলেন। নবীজীর জানতে ইচ্ছে হলো আজ সূর্যের আলো এত অধিক কেন ? হযরত জিব্রাইল (আ.) নবী (দ.)’র দরবারে হাজির হয়ে বললেন, এই উজ্জ্বলতা সূর্যের আলো নয়, মদীনায় আপনার সাথী মাবিয়া ইবনে মাবিয়া (রা.) ইন্তেকাল করেছেন, তাঁর নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য সত্তর হাজার ফেরেস্তা আল্লাহর পক্ষ হতে অবতরণ করেছে, এ উজ্জ্বলতা তাঁদের জ্যোতির। যে জ্যোতিতে সেদিন বিশ্ব আলোকিত হয়েছিল। হযরত জিব্রাইল সাহাবীর জানাজা নবীজীর সামনে হাজির করলেন। তাবুকে দাঁড়িয়ে মহানবী (দ.) মাবিয়া (র.)’র নামাজে জানাজা পড়ালেন। নামাজের পর রাসুল (দ.)’এর হাতের ইশারায় মাবিয়া (র.)’র জানাজা পবিত্র মদিনায় পৌঁছে গেল।
মহানবী (দ.) এর চুল মোবারকের বরকতে :

কোরবানীর শেষে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) সাহাবী হজতর মু’আম্মার বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রা.) কে ডাকলেন। তিনি নবীজীর সামনে মাথানত করে বসলেন। তাঁর মাথার চুলগুলো মহানবী (দ.) নিজ হাতে মুন্ডন কররেন। প্রিয় নবী (দ.) চুলগুলো হজরত আবু তালহা (রা.) হাতে প্রদান করলেন। হযরত খালেদ ইবনে অলীদ (রা.) তাঁর হাতে হাতে কিছু চুল নিয়ে নিজের টুপির ভিতরে রেখে দিলেন। যুদ্ধে যাওয়ার সময় তিনি টুপিটি মাথায় পরলেন। তিনি জীবনে বড় বড় যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন নবীজীর হাতের স্পর্শের চুলের বরকতে। (চলবে)

লেখক : রাজনীতিক, কলামলেখক