ইসলামের দৃষ্টিতে ‘করোনা ভাইরাসে’ করণীয়

592

মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং সালাতু-সালামের হাদিয়া প্রেরণ করছি বিশ্ব জগতের রহমতের নবী মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রতি। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের এক আতংকের নাম ‘করোনা ভাইরাস’ এটা এক মহামারির মত। এই ভাইরাস কি বিজ্ঞানের গবেষণার ফল (কুফল), নাকি অন্য কিছু তা এখন আলোচনার বিষয় নয়। আলোচনার বিষয় হল, আমরা মুসলমানদের করণীয় কি? যে মহামারিতে সারা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আক্রান্ত। এমন মহামারি নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র পক্ষ হতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আযাব। মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ‘বলে দিন দেখতো যদি আল্লাহর শাস্তি আকস্মিক কিংবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আসে তবে জালেম সম্প্রদায় ব্যতিত কে ধ্বংস হবে?’(সুরা: আনআম- ৪৭ নং আয়াত।)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাই মহাগ্রন্থ আল কোরআনে তাঁর নবী (দঃ)কে দিয়ে আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন, আল্লাহর আযাব তখনই আসে, যখন মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়। বর্তমানে কিছু ভাইয়ের বিভিন্ন মিডিয়ায় বলছেন ও লিখছেন যে, আমাদের কিছু হবে না। কারণ আমরা মুসলিম! ভদ্র সুধীগণ কখনো ভেবেছেন, আমরা কি গুনাহে লিপ্ত হইনি? অভিশপ্ত মাদকদ্রব্য, সুদ ও ঘুষের সাথে জড়াইনি? আমরা কতটুকু দ্বীনের বিধান পালন করছি? অতএব এই কথা গুলো বলে দ্বীন কে কাফের ও মুনাফিকদের নিকট হাস্যকরে পরিণত করবেন না। পবিত্র কোরআন বলছে, আল্লাহর শাস্তি আকস্মিকভাবে বা প্রকাশ্যে আমাদের উপর আসবেই। আর জালিমগণ ব্যতিত কেউ ধ্বংস হবে না। এর ব্যাখ্যা হাদিছ দ্বারাই বুঝে নিই। রাসুলুল্লাহ্্ (দঃ) ইরশাদ করছেন, ‘হে মুহাজির সম্প্রদায়, এমন ৫টি জিনিস যা প্রকাশ পাবে, আর আমি তোমাদেরকে সেখানে পতিত হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি। ঐ ৫টি বিষয় হল- যথা :- ১) যখন কোন জাতি প্রকাশ্যে গুণাহ্ তে লিপ্ত হবে (মাদকাসক্ত, ব্যবিচার, অসমাজিকতা ইত্যাদি) তখন তাহাদের উপর তাউন ও অনুরূপ মহামারি কঠিন ভাবে প্রকাশ পাবে। যা এর পূর্বেকার লোকদের নিকট ছিলনা। ২) যখন মানুষ ওজনে কম দেবে, তখন তারা দুর্ভিক্ষ, অভাব আর শাসকদের দ্বারা শোষিত হবে। ৩) যখন মানুষ নিজ সম্পদের যাকাত আদায় করবে না, তখন আল্লাহ্ আকাশ হতে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। যদি ভূমিতে চতুষ্পদ জন্তু না থাকতো তাহলে আকাশ হতে এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়ত না। ৪) যখন মানুষ আল্লাহ্ ও রাসুল (দঃ) এর দেওয়া বিধান হতে দূরে সরে যায়, তখন আল্লাহ তাদের উপর শত্রুকে বিজয় দান করেন। তারা যা কিছু পায় তাই কেড়ে নেয়। ৫) যখন তাদের শাসকগণ আল্লাহর দেওয়া বিধান মতে বিচার করে না, তখন আল্লাহ তাদের মধ্যে মতানৈক্য বৃদ্ধি করে দেয়।(সুনানে ইবনে মাজাহ্ ৪০১৯ নং হাদিস।)
কোরআন ও হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, আমরা সবাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (দঃ) এর অবাধ্য হয়েছি এবং এর ফল হল আল্লাহর পক্ষ হতে এই আযাব। এই আযাব হতে পরিত্রাণ পাওয়া জন্য আমাদেরকে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে। বেশি বেশি নামাজ, দরূদ ও জিকির করতে হবে। আউলিয়া আল্লাহগণের অনুসরণ করে তাকওয়া ও জুহুদ অন্বেষণ করতে হবে। যখন এই ধরনের মহামারি সৃষ্টি হয়, তখন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয়ভাবে এর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। হযরত ফরওয়াত ইবনে মুসাইক (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (দঃ) আমার একটি জয়গা আছে উহাকে ‘আবইন’ বলা হয়। আমার প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য ওখান হতে আসে। কিন্তু সেখানে কঠিন মহামারি। রাসুলুল্লাহ্ (দঃ) বললেন, সেটি ছেড়ে দাও। কেননা, মহামারির নিকট হওয়াই ধ্বংস হওয়া। (মুসনাদে আহমদ।)
অনুরূপভাবে অপর একটি হাদিসের বর্ণনায় আসছে এভাবে যে, রাসুলুল্লাহ্ (দঃ) ইরশাদ করছেন, যখন তোমরা শুনবে, কোনস্থানে তাউন (এক প্রকার মহামারি) প্রকাশ পেয়েছে, তখন সেখান যাবে না যদি তুমি এমন জায়গায় আছো যেখানে তাউন (এক প্রকার মহামারি) প্রকাশ পেয়েছে তাহলে সেখান হতে বের হবে না। (সহিহ্ বুখারি- ৫৭২৮ নং হাদিছ।)
চিন্তার বিষয় হল, আজ হতে ১৪শ’ বছর পূর্বে যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান এত উন্নতি করে নাই, তখন এটা জানার কোন পদ্ধতি ছিলনা যে, রোগটি ছোঁয়াছে বা মহামারি এবং আক্রান্ত রোগির সংস্পর্শে রোগ ছড়িয়ে যায়। তখন আমাদের প্রিয় রাসুল (দঃ) বলে দিয়েছেন যে, তোমরা ঐ স্থানে যাবে না এবং ঐ মহামারি আক্রান্ত স্থান হতে বের হবে না। কারণ নিজেদের অসচেতনতার কারণে যাতে অন্যরা কষ্ট না পায়। আজকে ‘করোনা ভাইরাসে’র কোয়ারেন্টাইন ফর্মুলা বা থিউরি বা ধারণা আমাদের রাসুল (দঃ) তখনই দিয়েছেন। তাৎক্ষনিক সময়ে কোন মহামারি গ্রাম বা শহর অতিক্রম করতো না, কারণ তখন যোগযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত ছিল। কিন্তু এখন যোগযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে খুব দ্রæত এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই জনসচেতনতার জন্য আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। রাসুল (দঃ) এর নির্দেশ মতই জীবন-যাপন করতে হবে। যেহেতু এই ‘করোনা ভাইরাস’ মহামারিটি দেশ-বিদেশের সকল স্থানে ছড়িয়ে গেছে তাই আমাদেরকে সামাজিক যোগাযোগ ও মেলামেশা ইত্যাদিতে সর্তক হতে হবে। যদি কোন মুমিন মুসলমান এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাকে পাপিষ্ট গুণাহগার ভাবা ও বলা যাবে না। কারণ রাসুল (দঃ) ইরশাদ করেছেন, মহামারিতে মৃত মুসলমানই শহীদ। (সহ্হি বুখারী ৫৭৩২ নং হাদিছ।)
এই জন্য আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, ‘জালিম ব্যতিত কে ধ্বংস হবে?’ মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মৃত হয়ে যায় তাহলে কাফের মুনাফিকদের জন্য তা আযাব আর মুমিনদের জন্য শহিদ। তাই কোনভাবেই বিভিন্ন মিডিয়ায় অপপ্রচার করা যাবে না। আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান হতে সজাগ,সচেতন ও এই দুর্যোগ মহামারিতে অসহায়দের পাশে থাকতে হবে। বিভিন্ন ট্রাস্ট ও সংগঠনগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে হোক বা রাষ্ট্রিয়ভাবে হোক এই মুহ‚র্তে সঠিকভাবে সমাজসেবা করতে হবে।

লেখক: সাজ্জাদানশীন
ওষখাইনীরি নূরীয়া বিষু দরবার শরীফ, চট্টগ্রাম।