ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসূচি

38

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতা-নেত্রীর অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে চট্টগ্রামজুড়ে। বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত মুসল্লিরা দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিবাদ জানানোর। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে আরও বড় সমাবেশ আয়োজনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর আন্দরকিল্লা, জমিয়তুল ফালাহসহ বিভিন্ন মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভে ভারতীয় পণ্য বয়কটের দাবি তোলা হয়। এছাড়া ‘বয়কট বয়কট, ইন্ডিয়া বয়কট’, ‘বিজেপির কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’, ‘দ্বীন ইসলাম, দ্বীন ইসলাম, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘নবীর অবমাননা, সইব না, সইব না’- এমন বেশ কিছু স্লোগান দেওয়া হয়।
জুমার নামাজের পর পর নগরের ওয়াসা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, গাউছিয়া কমিটি, মুসল্লি কমিটিসহ নানা ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মুসল্লিদের ঢল নামে। তাছাড়া জুমার নামাজের আগে বিভিন্ন মসজিদে খুতবায় ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের এমন ন্যক্কারজনক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
ওয়াসা চত্বরে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীও একজন ধর্মভীরু মানুষ। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-এমপিরাও প্রায় সময় ইসলামের প্রতি গভীর আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসার কথা তুলে ধরেন। অথচ ভারতে ইসলামের নবীকে নিয়ে এতো গুরুতর অবমাননার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ নীরবতায় দেশবাসী হতাশ।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। সমাবেশে মহানগর ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, চরম ইসলাম বিদ্বেষী, সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী ভারতের বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম বিদ্বেষী নীতি অনুসরণ করছে। সহিংসতাকে উস্কে দিয়ে ভারত থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
মাওলানা রুহী বলেন, ভারতের বিজেপি সরকার কর্তৃক ইসলাম বিদ্বেষী চর্চা, মুসলমানদের গণহত্যা ও দমন-নিপীড়ন নতুন বিষয় নয়। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততোবার ইসলাম ও মুসলমানদের টার্গেট করে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছে। আজ সময় এসেছে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা (সা.) এর বিরুদ্ধে বিজেপি নেতাদের জঘন্যতম অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ভারতকে বয়কট করা।
মসজিদ ভিত্তিক সমাবেশের পর নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলগুলো বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসব সমাবেশ থেকে বক্তারা ভারতের বিজেপি সরকারকে মুসলিম বিশ্বের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের নেতাদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং ইসলাম বিদ্বেষী নীতি এবং বিশ্ব শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকরা ও মানবতা বিরোধী কার্যক্রম থেকে ফিরে আসার দাবি জানান।
এদিকে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা। পাশাপাশি সহিংসতা এড়াতে খুলশীতে ভারতীয় হাই কমিশনারের অফিসের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের মতো ঢাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, ধর্মভীরু মানুষসহ বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও একইভাবে সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। ঢাকায় জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট। সেই সমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে আগামী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।