ইসরায়েল মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকতে পারে : জাতিসংঘ

31

বিক্ষোভ দমনের নামে ২০১৮ সালে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ মনে করে, এসব ফিলিস্তিনিকে হত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা যেতে পারে। এমন অনেককে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করেছে যারা স্পষ্টতই সহিংসতায় জড়িত নয়। এদের মধ্যে যেমন রয়েছে শিশু, তেমন রয়েছেন চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিক। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি ৩০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার এবং ড্রোনের ভিডিও ফুটেজসহ প্রায় আট হাজার প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
গাজাতে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস। এদের বেশিরভাগই ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ওই স্থান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষদের উত্তরসূরী। ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ও ইসরায়েলে থাকা পূর্বপুরুষদের ঘর-বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ থেকে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচি শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। এর অংশ হিসেবে ইসরায়েল সীমান্তে প্রতি সপ্তাহে আয়োজিত হতে থাকে বিক্ষোভ কর্মসূচি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কারণে এমন অনেক ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে যাদেরকে গুলি করার সময় তারা কারওর নিশ্চিত মৃত্যুর বা কাউকে গুরুতরভাবে আহত করার ঝুঁকি তৈরি করছিল না বা সরাসরি সহিংসতায় যুক্ত ছিল না।’ ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৮৯ জন ফিলিস্তিনি। এদের মধ্যে ১৮৩ জনের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী দায়ি। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছয় হাজার ১০৬ জন সরাসরি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অপর তিন হাজার ৯৮ জন রাবারের আবরণযুক্ত ধাতব গুলি, টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণের কারণে ছিটকে আসা টুকরোর আঘাতে আহত হয়ে হয়েছে।
প্রতিবেদনের ভাষ্য, ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্নে’ নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৩৫ জন শিশু। আরও রয়েছে তিন জন চিকিৎসাকর্মী ও দুইজন সাংবাদিক, যারা প্রত্যেকে তাদের পেশাগত পরিচয়সূচক পোশাক পরা অবস্থায় ছিলেন। তদন্ত কমিটি মনে করে, ইসরায়েলি স্নাইপাররা সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী, শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করেছে এমনটা মনে করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে। কারণ এরা যে সরাসরি সহিংসতায় জড়িত নয় তা সহজেই আলাদাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচসিআর) সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সভাপতি সান্তিয়াগো ক্যান্টন বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দ্বারা ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার এবং মানবাধিকার আইন ভঙ্গ হওয়ার অভিযোগ বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে।
মানবাধিকার আইন ভঙ্গের এসব ঘটনার মধ্যে কিছু ঘটনা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ইসরায়েলের উচিত এসব অভিযোগের বিষয়ে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা।’