ইমরান খানের গ্রেপ্তার বেআইনি মুক্তির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদনের শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল ওই নির্দেশ দেন। আদালত চত্বর থেকে কীভাবে একজনকে গ্রেপ্তার করা যায়, এমন প্রশ্ন রেখেছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আদালত চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি বেআইনি। ইমরান খানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যেই সর্বোচ্চ আদালত থেকে তাকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হলো। খবর বিবিসি, ডন ও জিও নিউজ।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে এক আবেদনের ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ শুনানি নেন। এর আগে, শুনানির এক পর্যায়ে ইমরানকে আদালতে হাজির করার জন্য ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি ) নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় ইমরানকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রধান বিচারপতি তখন ইমরান খানকে বলেন, আপনাকে গ্রেপ্তার করা অবৈধ। তিনি বলেন, আদালত আজ (বৃহস্পতিবার) একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ দেবে এবং আদালত বিষয়টিকে ‘খুবই গুরুত্ব’ দিচ্ছে। এসময় ইমরান খান বিচারকদের বলেন, তাকে হাই কোর্ট থেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাকে ‘লাঠি দিয়ে পেটানো’ হয়েছে।
পাকিস্তানের কিংবদন্তী ক্রিকেটার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই বলছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাই কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ইমরানকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করে এনএবি। পরে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ইমরান খানের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন ২ হাজার বিক্ষোভকারী। গ্রেপ্তারদের মধ্যে পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশিসহ শীর্ষ সাত নেতা রয়েছেন। পুলিশ জানায়, জনশৃঙ্খলা রক্ষা আইনে কুরেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা এবং রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা সদর দপ্তরের ফটক ভাঙচুর করার পর সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদের চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খান সেনাবাহিনীর সহায়তায় জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি সেনাবাহিনীর অন্যতম সোচ্চার সমালোচক হয়ে উঠেছেন।
২০২২ সালের নভেম্বরে একটি বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান। এ হামলার জন্য গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি। তবে সামরিক বাহিনী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিষ প্রয়োগে হত্যার ‘আশঙ্কা’: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, কারাগারে তাকে ধীরে ধীরে বিষ দিয়ে হত্যা করা হতে পারে। বুধবার (১০ মে) তিনি নিজেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জিও টিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে। আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বুধবার ইমরান খান আদালতকে জানান, কর্তৃপক্ষ এমন একটি ইনজেকশন দেয় যা ধীরে ধীরে একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে। তিনি আশঙ্কা করছেন যে তার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।

আমি শুধু দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই : পাকিস্তানের সুপ্রিম কোট দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্তির আদেশ দেওয়ার পর পিটিআই নেতা বলেন, আমি চাই না দেশের কোনো ক্ষতি হোক। আমি শুধু দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এ সময় তিনি পিটিআই সমর্থকদের শান্ত হওয়ার আহŸান জানিয়ে, তাদের সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। ইমরান খানের মুক্তির ঘোষণা গোটা পাকিস্তান ও পিটিআই সমর্থকদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।

যেভাবে এলো মুক্তির আদেশ : ইমরান খানের মুক্তির ঘোষণা গোটা পাকিস্তান ও পিটিআই সমর্থকদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাড়ে ৪টায় তাকে সুপ্রিমকোর্টে হাজির করার আদেশ দেন দেশটির প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল। পরে কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়। এ সময় ইমরান খানের গাড়ির সামনে ও পিছনে ১৫ টি গাড়ির বহর ছিল। সাড়ে ৫টার দিকে আদালতে হাজির হওয়ার পর ইমরান খানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল। এরপর ইমরান খানেক গ্রেপ্তার ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে তাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন তিনি।