ইফতার পর্যন্ত প্রাণে না মারার আকুতিও শুনল না ঘাতকরা

86

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে কুপিয়ে মোরশেদ আলীকে (৩৮) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ বলেছে, ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে।
এদিকে ময়নাতদন্তের পর নিহত যুবকের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে গতকাল জুমার নামাজের পর তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে।
মোরশেদ ওরফে বলী মোরশেদকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পরে রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে। এছাড়া তিনি এলাকায় ‘অন্যায়ের প্রতিবাদকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।
নিহতের ভাই জয়নাল আবেদীন ও আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মোরশেদ ইফতারি কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ ১৫-২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে মোরশেদ আলীর ওপর হামলা চালান। হঠাৎ হামলা ও রোজায় ক্লান্ত মোরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার একপর্যায়ে মোরশেদ হামলাকারীদের আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন, সারাদিনের রোজায় আমি অনেক বেশি ক্লান্ত, আমাকে মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও। এরপরও তারা মোরশেদকে মাটিতে ফেলে বেদম মারধর ও কুপিয়ে চলে যান। স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে আইসিউতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর চিকিৎসকরা রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিল মোরশেদের পরিবার। সেই প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে মোরশেদের বিরোধ চলছিল। হামলাকারীরা চাষিদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনাকারীদের পানির পাম্পের পাশে জোরপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো ও চলমান প্রকল্প দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বাঁধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা। ইজারা পাওয়ার জন্য মোরশেদের পরিবার আবারও আবেদন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষ। এরপর থেকে তাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করছিল চক্রটি।
নিহতের স্বজনরা হামলাকারী মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ ও আবদুল মালেক ছাড়াও হামলার মূল নির্দেশদাতা হিসাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলালের নাম উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল মোস্তফা আলাল, আবদুল মালেকসহ অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হয়। কিন্তু তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের পৃথক টিম। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। অপরাধী যারাই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।