চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদে ১০ দিনব্যাপী ৩৭তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিলের নবম দিনে উপস্থিত বক্তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম দেশের নৈতিকতাধর্মী সাংস্কৃতিক চর্চার পাদপীঠ। মাইজভাÐারী, সিরিকোটি ও দরবারে ইছাপুরীসহ অন্যান্য সুন্নি দরবারের মহাত্মা মনীষীগণ এখানে ইসলামী সংস্কৃতির যে মশাল প্রজ্বলিত করে গেছেন, তাতে ঈমান আক্বিদা সুরক্ষার দিশা পাচ্ছেন সর্বস্তরের মুমিন মুসলমানেরা। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) উপলক্ষে জশনে জুলুস, আউলিয়ায়ে কেরাম (রহ) স্মরণে ওরশ মাহ্ফিল এবং মহরম মাসে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল ও হিজরি নববর্ষ পালনের কারণে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঔজ্জ্বল্যই দিন দিন বিকশিত হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিলের মাধ্যমে ইসলাম তথা সুন্নিয়তের সংস্কৃতিকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়ার বাস্তব রূপকার হলেন জমিয়তুল ফালাহর প্রথম খতিব খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (রহ)। আর শুরু থেকেই এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এই দুই কৃতিজনের কীর্তিগাথা যুগ যুগ ধরে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং জমিয়তুল ফালাহ্ সুন্নিয়তচর্চার পাদপীঠ হিসেবে চাটগাঁবাসীর হৃদয়াসনে চিরকাল টিকে থাকবে
গতকাল সোমবার নবম দিন হাজারো দ্বীনদার আহলে বায়তপ্রেমী মানুষের অংশগ্রহণে বেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। গতকালের মাহ্ফিলে সভাপতিত্ব করেন চউকের সাবেক চেয়ারম্যান রাজনীতিবিদ আব্দুচ ছালাম। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনীতিবিদ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। মাহ্ফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বিদেশি আলোচক ছিলেন গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (রহ) এর বংশধর শাহসূফি সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল মনসুর আল জিলানি আল বাগদাদি।
তিনি বলেন, দুনিয়াজুড়ে আজ আহলে বায়তে রাসুলের (দ) চর্চা হচ্ছে। ইমাম হোসাইন (রা) কারবালা প্রান্তরে হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে শাহদাতের সুধা পান করেছেন।
প্রধান অতিথি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জমিয়তুল ফালাহ্’র কারবালা মাহ্ফিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতার প্রতীক। এই মাহ্ফিল অনন্তকাল ধরে ইনশাআল্লাহ টিকে থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুচ ছালাম বলেন, জমিয়তুল ফালাহর কারবালা মাহ্ফিল আমাদের ঈমানি চেতনাকেই শাণিত করছে। এ মাহফিল চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে উজ্জ্বলতর করেছে।
সুফি মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে দুই বছর আমরা এই মাহ্ফিল করতে পারিনি। এজন্য আমরা পেরেশানিতে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে এখন করোনার রেশ ধীরে ধীরে কমছে। একদিন করোনার ভয়কে জয় করে বিশ্ববাসী আবারো প্রাণের স্পন্দন ফিরে পাবে এটাই আমাদের আশা। তিনি আরো বলেন, আমার অনেক বয়স হয়েছে। কতদিন আল্লাহ পাক বাঁচিয়ে রাখেন জানি না। আমি বেঁচে না থাকলেও এ মাহ্ফিল জারি থাকবে, আপনারা এ মাহ্ফিল আগলে রাখবেন। এই মাহ্ফিল নিশ্চয়ই আমাদের জন্য নাজাতের উসিলা হতে পারে।
মাহ্ফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, মহররম মাস কেবল শোক নয়, ত্যাগের চেতনাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এ মহররম মাস।
আলোচক ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার প্রভাষক আল্লামা মীর মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আলকাদেরী, হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রা) ও কুস্তুনতুনিয়া যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনা করেন কাটিরহাট মফিদুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসার প্রভাষক আল্লামা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রিজভি। ‘দেশে দেশে আহলে বায়তে রাসূলের চর্চা প্রসঙ্গ: বাংলাদেশ’ বিষয়ে আলোচনা করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা সৈয়দ হাসান আজহারি। কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। মাহ্ফিলে অতিথি ছিলেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া চিশতিয়া আজিজিয়ার সাজ্জাদানশিন পীরে তরিকত অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আলকাদেরী, শাহজাদা শাহসুফি সৈয়দ মিফতাহুন নূর মাইজভান্ডারী, শিল্পপতি হাজী জানে আলম, ওসি আব্দুল করিম, ব্যবসায়ী-সমাজসেবী মুহাম্মদ আলমগীর পারভেজ। শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহ্ফিলের প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মুহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ আব্দুল হাই মাসুম, মোহাম্মদ দিলশাদ আহমদ, জাফর আহম্মদ সাওদাগর, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুহাম্মদ মনসুর সিকদার, এস এম সফি, মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশিন ও মতোয়াল্লিবৃন্দ, বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিববৃন্দ। মিলাদ কিয়াম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি-কল্যাণ এবং বিশ্বের নির্যাতিত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মুনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি
