ইনবক্সে ‘সারপ্রাইজ মেসেজ’ খোলার আগে ভাবুন

40

নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষিকা শবনম মোশফিকা অনি গতকাল রাতে দুই বন্ধুর কাছ থেকে সারপ্রাইজ উইশের বার্তা পান। এরপর সেটা কী তা না জেনেই কৌতূহলবশত একটি বার্তা খুলে দেখেন তিনি। এরপর বুঝতে পারেন যে সেটি একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ভাইরাস। এর পরপরই তথ্য চুরি হওয়ার ভয় থেকে ফেসবুক ও জি-মেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলে ফেলেন তিনি। বোঝার সাথে সাথে আমি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছি। এখন বুঝতে পারছি না যে, পুরোপুরি সেইফ হয়েছি কিনা, নাকি এখনো ভয় আছে, বলেন মিজ অনি।
তবে শুধু অনি নন, এ ধরনের সারপ্রাইজ উইশ-এর বার্তা ফেসবুকের মেসেঞ্জার এবং হোয়াটস অ্যাপে অনেকেই পেয়েছেন। অনেকে এটিকে স্প্যাম বুঝতে পেরে এড়িয়ে গেলেও না বুঝে খুলে দেখেছেন অনেকে। এনিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে কিংবা ট্রল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট দিয়েছেন অনেক ব্যবহারকারী।
কিন্তু আপনিও যদি এ ধরনের বার্তা পেয়ে থাকেন ইনবক্সে, যেটি আপনার কোন বন্ধুর কাছ থেকে এলেও ওয়েবসাইটের ঠিকানা হিসেবে wish4u.com ev my-love.co. লেখা রয়েছে, সেটিতে যেন ভুলেও ক্লিক করবেন না।
এটি আসলে এক ধরনের সফটওয়্যার যেটি আপনার ব্রাউজারে ইন্সটল হয়ে যেতে পারে। এধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যারকে ব্রাউজার হাইজ্যাকারও বলা হয়।
অবশ্য সিআইডি’র ডিজিটাল ফরেনসিকস-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ফাহিম বলেন, ‘এটা সে অর্থে কোন ম্যালওয়্যার না। এটা খুব বেশি ম্যালিশিয়াস বা ক্ষতিকরও না। এটা যে তৈরি করেছে সে সেটা তার কিছু মনিটরি ইনকামের জন্য তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা গুগলে ক্লিকের মাধ্যমে কিছু টাকা-পয়সা পাওয়া যায়, রেভিনিউ জেনারেট করা যায়। আর এটাতে তো অনেকেই ক্লিক করছে, হ্যাপি নিউ ইয়ারের উইশ হিসেবে, এটা থেকে সে কিছু টাকা পয়সা জেনারেট করছে গুগল এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে’।
তবে এই সফটওয়্যার দিয়ে তথ্য চুরির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মি. ফাহিম। তবে এখনো পর্যন্ত এমনটি হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কিন্তু এর প্রস্তুতকারক যদি এই সফটওয়্যারটি রি-ডিজাইন করে তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো ক্ষতি হতে পারে বলে তার আশঙ্কা। বিবিসি বাংলার
হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার বা অন্যকোন মাধ্যমে এ ধরনের মেসেজ এলে সেটা ক্লিক না করাই বুদ্ধিমানের কাজ, বলেন তিনি।
my-love.co ev wish-you.co থেকে যে বার্তা আসছে, তাতে ক্লিক করলে মূলত একটি ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যারের ডাউনলোড সচল করে দিচ্ছে। এই সফটওয়্যার বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় সব ব্রাউজার যেমন ক্রোম, ফায়ারফক্স, অপেরা এবং সাফারির সাথে একীভূত হয়ে যেতে পারে।
একবার ইন্সটল করা হলে এটি সাধারণত ডিফল্ট ব্রাউজার বা সার্চ ইঞ্জিনের হোমপেইজকে পরিবর্তন করে দেয় এবং এর পরিবর্তে স্পন্সর করা একটি হোমপেইজ ইন্সটল করে দেয়।
এর সাথে সাথে ব্রাউজার স্ক্রিনে প্রচুর পরিমাণে বিজ্ঞাপন, ব্যানার, পপ-আপ মেসেজ এবং কিছু নোটিফিকেশন আসে যার কারণে অনেক সময় নানা ধরনের লিংকে ক্লিক করতে হয়।
তবে আশার কথা হচ্ছে, এই সফটওয়্যারগুলো কম্পিউটার ভাইরাস বা ম্যালওয়ার যেমন র‌্যানসমওয়্যার বা ট্রোজানের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
এগুলো আসে মূলত ইমেইল-এর সাথে যুক্ত হয়ে, ফ্রি ডাউনলোড, স্প্যাম মেসেজ, ফ্রিওয়্যার ও শেয়ারওয়্যার প্ল্যাটফর্ম এবং টরেন্ট থেকে।
যদি কেউ খুলে ফেলে এবং সে যদি তার ব্রাউজারে কোন ধরনের সমস্যায় পড়েন তাহলে কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন মিস্টার ফাহিম।
তিনি বলেন, ‘হাউ টু রিমুভ ডট গাইড’ নামে একটি ওয়েবসাইটে গিয়ে কিছু ধাপ অনুসরণ করে সফটওয়্যারটি আন-ইন্সটল করা যায়।
সাধারণত একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে ডিভাইসে ব্রাউজার হাইজ্যাকার রয়েছে কিনা। কারণ এধরনের সফটওয়্যার থাকলে ডিফল্ট ব্রাউজারে নতুন হোমপেইজ তৈরি হয় বা আগেরটি পরিবর্তিত হয়, ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন বদলে নতুন ধরনের সার্চ ইঞ্জিন আসে, আগে ছিল না এমন কিছু নতুন টুলবারও যোগ হয়।
এর ফলে আমরা যখন কোন কিছু সার্চ করতে যাই তখন তা এমন কিছু ওয়েব লিংকে রি-ডিরেক্ট করা হয় যেখানে হয়তো আমরা কখনোই যেতাম না। ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর ভাইরাস বা সফটওয়্যার- প্রতিনিয়তই এগুলোর বৈশিষ্ট্য বদলায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিস্টার জালাল উদ্দিন বলেন, কোন লিংক নিয়ে সন্দেহ হলে সেটি নিশ্চিত করতে হলে ‘ভাইরাস টোটাল ডট কম’-এ গিয়ে যে লিংক পাঠানো হয়েছে সেটি না খুলে শুধু কপি করে ভাইরাস টোটালে দিলেই সেটি বলে দেয় যে লিংকটি ম্যালওয়্যার কিনা। তবে ম্যালওয়্যার না হলেও যে সেটি নিরাপদ সেটি বলা যাবে না। যেমন আলোচিত ‘সারপ্রাইজ মেসেজ’ সম্পর্কে এই মুহুর্তে ভাইরাস টোটাল বলছে যে এটি ক্ষতিকর নয়। তবে এটি প্রোগ্রামিংয়ে পরিবর্তন করলে বা উন্নয়ন ঘটানো হলে যেকোন মুহূর্তে ক্ষতিকর হতে পারে বলেও মনে করছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা।
আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসের সমস্যা আরো বাড়বে। তখনকার হুমকি ঠেকাতে এখনই আরো বেশি সতর্ক হওয়া দরকার বলে মনে করছেন তারা। এখন এটা আমদের সার্চ বারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। কিংবা আমাদের ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা গুগল সার্চে সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যতে দেখা যাবে যে না বুঝে ক্লিক করার কারণে হয়তো লাখ লাখ টাকাও বেহাত হতে পারে, বলেন মিস্টার জালাল উদ্দিন।