ইটভাটা থেকে অপহৃত ৩ জন উদ্ধার

9

রাঙামাটি ও কাউখালী প্রতিনিধি

রাঙামাটির কাউখালীর তারাবুনিয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে অপহৃত ৩ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। অপহরণের ৫ দিন পর তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাররুফ আহমেদ। উদ্ধারকৃত ৩ জন হলেন মো. জিয়াউর রহমান (২৮), মোসলেম উদ্দিন (৪২) ও আহসান উল্ল্যাহ (৪৫)। তাদের তিনজনের মধ্যে জিয়াউর রহমান স্থানীয় এমএনসি নামক একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপকের ছেলে। অপর দুইজন শ্রমিক।
গতকাল সোমবার উদ্ধার হওয়া ৩ শ্রমিককে গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের তারাবুনিয়া নামক এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় ৮-১০ জনের একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। এই উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মারুফ আহমেদ জানান, ওই তিনজনকে অপহরণের ঘটনায় গত ৩০ ডিসেম্বর মো. ফারুক নামে ইটভাটার এক মালিক বাদি হয়ে কাউখালী থানায় একটি মামলা করেন। অপহৃতদের মুক্তিপণ হিসাবে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে দুর্বৃত্তরা- এমন অভিযোগ ছিল মামলার এজাহারে। মামলা হওয়ার পরপরই গত ৩১ ডিসেম্বর মুক্তিপণের টাকা দেয়ার টোপ দেয়া হয় অপহরণকারীদের। মুক্তিপনের অগ্রিম ৫ লাখ টাকা নিতে রাঙ্গুনিয়ার লিচু বাগান এলাকায় আসলে ক্যমং মারমা ও উক্যওয়াই মারমা নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দু’জন সরাসরি অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে।
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসী বাবু মারমার হেফাজতে অপহৃতরা থাকার তথ্য নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে গতকাল সোমবার ভোরগত রাতে ওসি পারভেজ আলীর দিক-নির্দেশনায় ও ওসি (তদন্ত) মো. আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে পুলিশের ৫টি টিম ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে কাউখালীর ডাব্বুনিয়া এলাকার সম্ভাব্য স্থানটি ঘিরে ফেলে। পুলিশের সবক’টি টিম একত্রিত হয়ে কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের ডাবুইন্যাছড়া দূর্গম ডাব্বুনিয়া ছড়া পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত এই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ডাবুইন্যা’। অভিযানের ফলে অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ায় অপহৃত ৩ জন সেখান থেকে পালিয়ে রাউজান হয়ে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে ইটভাটা মালিকের কাছে চলে যায়। অভিযানে থাকা কাউখালী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল হালিম ৩ শ্রমিক মুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে ফতেয়াবাদ এলাকায় গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে তাদের কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাঙামাটি জেলা সদরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি জানান, এটি রাঙামাটি জেলা ও কাউখালী থানা পুলিশের একটি বড় ধরণের সফল অভিযান। অপহরণকারীরা বড় কোনো দলের সদস্য নয়। তারা গুঁটিকয়েক দুর্বৃত্তের আলাদা একটি চক্র। এদের সহযোগি বাকি দৃর্বৃত্তদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা সক্ষম হবে।
রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে উদ্ধার হওয়া ৩ জনকে হাজির করা হয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) শাহ নেওয়াজ রাজু, রাঙামাটি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কাপ্তাই সার্কেল) রওশন আরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আউয়াল, কাউখালী থানার ওসি পারভেজ আলীসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া ৩ জন জানান, ‘আমাদেরকে ৮-১০ জনের একদল অস্ত্রধারী অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক অপহরণ করে গহিন অরণ্যে নিয়ে জিম্মি করে রাখে। আমাদের মুক্তির জন্য মালিকের (ইটভাটা) কাছে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছিল। অপহরণের পর আমাদের শারীরিকভাবেও নির্যাতন করেছে অপহরণকারীরা। জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জিম্মিদশা থেকে মুক্ত তিনজন।