ইজারাবিহীন ২৯ বালুমহাল

70

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালুমহাল ইজারার ক্ষেত্রে বাংলাসন ধরেই অর্থ বছর গণণা করা হয়। সে হিসেবে ১লা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র বালুমহাল ইজারার অর্থ বছর। চলতি অর্থ বছরের তিনমাস অতিবাহিত হলেও চট্টগ্রামের ৬৮টি বালুমহালের মধ্যে ২৯টি এখনো ইজারা হয়নি। প্রথম টেন্ডাওে ৩৯টি বালুমহালকে বালু উত্তোলনের কার্যাদেশ দেয়া হলেও বাকি ২৯টি বালুমহাল ইজারা দিতে গত ৩০ জুন পুনরায় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। পঞ্চমধাপে আগামী ২০ জুলাই বালুমহালের দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে। বালুমহালগুলো ইজারা না হলে সরকারের রাজস্ব গচ্ছা যাবে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইজারা হয়নি এখনো বলা যাবে। ৬৮টির মধ্যে আমরা প্রথম টেন্ডারে ৪৩টি পেয়েছিলাম। এর মধ্যে ৩৯টিকে কার্যাদেশ দিয়েছি। বাকি চারটি টাকা জমা দেয়নি এজন্য বাজেয়াপ্ত করেছি। টেন্ডার জমা না পড়া ২৫টি এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া চারটি মিলিয়ে মোট ২৯টি বালুমহালের পঞ্চম ধাপে শিডিউল বিক্রি চলছে। আগামী ২০জুলাই এসব দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে। গত অর্থ বছরে কিছু বালুমহাল ইজারাবিহীন ছিল।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৪২৭ বাংলা সনের এক বছরের জন্য ইজারা প্রদানে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে প্রথম ধাপের টেন্ডার আহবান করা হয় গত ফেব্রæয়ারি মাসে। প্রথম টেন্ডারে ৪৩টি বালুমহালের ইজারা সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ৩৯টি বালুমহাল ইজারাদার টাকা জমা দিয়ে বালু উত্তোলনের কার্যাদেশ পেলেও ৪জন ইজারাদার টাকা জমা দেয়নি। যে কারণে চারটি বালুমহাল পুনরায় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। প্রথমধাপে টেন্ডারে অংশ না নেয়া ২৫টি বালুমহালসহ পঞ্চম ধাপে মোট ২৯টি বালুমহাল ইজারার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। গত ৩০ জুন পঞ্চম ধাপের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এবারও ইজারা না হলে ষষ্ট থেকে অষ্টম বার বালুমহাল ইজারায় দরপত্র আহবান করা হবে। এর আগে প্রথম ধাপে টেন্ডার হলেও মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ বার পর্যন্ত টেন্ডার অনুষ্ঠিত হয়নি।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার ইছামতি-৫, কোদালা বালুমহাল, ফটিকছড়ার গজারিয়া খাল বালুমহাল-২, গজারিয়া খাল বালুমহাল-৩, ফনী খাল বালুমহাল, গামারী তলা বিনাজুরী খাল, সর্ত্তার খাল বালুমহাল, লোহাগাড়ার চরম্বা বালুমহাল-১, চরম্বা বালুমহাল-২, সুখছড়ী বালুমহাল, লোহাগাড়া, চরম্ব ও মাইজবিলা বালুমহাল, সাতকানিয়া সোনাছড়ি খাল বালুমহাল, পটিয়া চান খালী খাল বালুমহাল, শ্রীমাই-২ বালুমহাল, রাউজানের সর্ত্তাখাল বালুমহাল-১, ডাবুয়া খাল বালুমহাল-১, ডাবুয়া খাল বালুমহাল-২, রাউজান খাল বালুমহাল, কাঁশখালী খাল বালুমহাল, সর্ত্তা খাল বালুমহাল-২, নোয়াজিষপুর অংশের সর্ত্তাখাল বালুমহাল-৪, ফটিকছড়ি ছড়া বালুমহাল, মিরসরাইয়ের ইসলামপুর বালুমহাল, লক্ষীছড়া বালুমহাল, শুক্র বারইয়ার হাট বালুমহাল, হাটহাজারী সুন্দরী ছড়া বালুমহাল, চন্দনাইশের পৌরসভা অংশে বরগুনী খাল বালুমহাল, বরগুনী খাল বালুমহাল (হাশিমপুর অংশ), বরুমতি খাল বালুমহাল (হাশিমপুর অংশ-২) পঞ্চম ধাপে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এসব বালু মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারিত আছে এক কোটি ৩৭ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৮০ টাকা। এবারো শিডিউল বিক্রি না হলে এ টাকাগুলো সরকারের রাজস্ব ফাঁকি হবে।
কয়েকটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইজারা না হওয়া এসব বালুমহাল থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হলেও প্রভাবশালীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দরপত্র অংশ নিচ্ছেন না। তারা বারবার দরপত্রে অংশ না নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মিত বালু উত্তোলন করছেন। রাজনৈতিক দলের নেতারাই এসব বালুমহালের নিয়ন্ত্রণে আছেন।
চট্টগ্রামের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজমুন নাহার পূর্বদেশকে বলেন, ‘বালু মহালগুলো কি কারণে ইজারা হচ্ছে না সেটা দরপত্র শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে যতটুকু জানি বালুমহালগুলো থেকে এখন বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। বিষয়টি তদারকি করতে উপজেলা প্রশাসনকে জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’