ইছানগরে এস আলম সুগার মিলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাকলিয়ায় নির্মাণাধীন কোল্ড স্টোরেজের পর এবার কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর এলাকায় অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলস লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ওই চিনিকলে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর। এতে পুড়ে গেছে কারখানাটির গুদামে রক্ষিত প্রায় এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি। রমজানের পূর্বে এসব অপরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বিকেল পৌনে চারটার দিকে আগুন লাগে কারখানাটিতে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে আগুনের তীব্রতা বাড়ায় পর্যায়ক্রমে ১৬টি ইউনিট অকুস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। প্রাণহানি বা হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, আগুন লাগার অল্প সময়ের মধ্যেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা অনেকদূর থেকে দৃশ্যমান হয়। আগুনের তীব্রতায় আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর কাছাকাছি স্থানে রয়েছে আরও পাঁচটি গুদাম। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো নেভানোর পাশাপাশি আশপাশে আগুনের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তৎপর হয়। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিকভাবে আগুনের কারণ নিশ্চিত করেনি।
কারখানায় কর্মরত কর্মীরা জানান, গুদামে রাখা ছিল সদ্য ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ৭০ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি। এছাড়া আগে থেকেও সেখানে চিনির চালান রাখা ছিল। সব মিলিয়ে অন্তত এক লাখ টন চিনি নষ্ট হয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এস আলম শিল্প গ্রএউপের মালিকানাধীন এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিল দেশের অন্যতম বৃহৎ চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, দেশের বাজারে শীর্ষ কয়েকটি চিনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিল। ২০০৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সুগার মিলে ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পেিরশোধন করা হয়ে থাকে। মিলটির দৈনিক চিনি পরিশোধন ক্ষমতা চার হাজার মেট্রিক টন। কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেকের অদূরে ইছানগর এলাকায় ১১ মেগাওয়াটের এস আলম পাওয়ার প্লান্টের পাশেই এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলটি অবস্থিত। পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ দিয়েই চিনি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নির্বাপন হয়নি।
ঘটনাস্থলে থাকা এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, এ কারখানায় আমদানি করা অপরিশোধিত চিনি পরিশোধন করা হয়। দৈনিক চার লাখ মেট্রিকটন চিনি পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। সুগার মিলের ইউনিট-ওয়ানের গুদামে আগুন লেগেছে। সেখানে এক লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত চিনি ছিল। সেগুলো পুড়ে গেছে। রমজানকে সামনে রেখে অপরিশোধিত চিনিগুলো আমদানি করা হয়েছিল। আগুন যাতে মূল কারখানা এবং পরিশোধিত চিনি যেখানে রাখা হয়, সেখানে ছড়িয়ে না পড়ে সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেখানে আগুন লাগলে রমজানের বাজারে চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, যে গুদামে আগুন লেগেছে, সেখানে কী পরিমাণ পরিশোধিত কিংবা অপরিশোধিত চিনি ছিল, সেটার চূড়ান্ত হিসাব এখনও তাদের হাতে আসে নি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন চিনি ছিল। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর সবকিছু খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য জানানো যেতে পারে।
সুগার মিলে ভয়াবহ অগ্নি-দুর্ঘটনার দু’দিন আগে গত পয়লা মার্চ সকালে নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে এস আলম গ্রæপের নির্মাণাধীন তাজা মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। এতে কোনও প্রাণহানি না হলেও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগ্রাবাদ ও চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের মোট চারটি ইউনিট মিলে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি : চিনিকলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল রাতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা এ কমিটি গঠন করেছেন। নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শাকিলা ফারজানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।