ইএফডি মেশিনেই ভ্যাট যায় সরকারি কোষাগারে

7

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনলাইনে সহজে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল, নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ানো এবং ইএফডিকে জনপ্রিয় করতে চট্টগ্রামে সফলভাবে তিনটি ভ্যাট মেলার আয়োজন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। আর ভ্যাট প্রদানে স্বচ্ছতা আনতে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে পাওয়া ৫১৯টি ইএফডি মেশিন চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। এ মেশিনের সাহায্যে ভ্যাট দিলে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব। এ কারণে করোনা মহামারির মধ্যে চট্টগ্রামে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে দোকানপাট, মার্কেট-শপিংমল, পর্যটন কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁর কার্যক্রম প্রায় সময় বন্ধ ছিল। এরপরও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যেও এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ১৪। আর এখন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৪। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জুন পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৩ হাজার ১৯৬টি। নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন জমার হার ৭৭ শতাংশ। অনলাইনে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে চট্টগ্রাম শীর্ষে রয়েছে।
ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১-১২ জানুয়ারি প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত ভ্যাট মেলা। এই মেলায় ২ হাজার ৩৭৪টি রিটার্ন জমা পড়েছে, নতুন নিবন্ধন নেন ২৮৪টি প্রতিষ্ঠান এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। পরবর্তীতে গত ১০-১১ ফেব্রæয়ারি দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজিত ভ্যাট মেলায় রিটার্ন জমা পড়েছে ৩ হাজার ২৪৩টি, নতুন নিবন্ধনের আবেদন পড়েছে ৩৪২টি এবং রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। একইভাবে ১০ মার্চ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, চট্টলা, চান্দগাঁও, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পটিয়া, কক্সবাজার ও বান্দরবান এই আটটি দপ্তরে তৃতীয় ভ্যাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার কারণে রিটার্ন দাখিল ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে লক্ষ্য শতভাগে উন্নীত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রাম।
ভ্যাট কর্মকর্তারা জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আগ্রাবাদ, চট্টলা, চান্দগাঁও, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পটিয়া, কক্সবাজার ও বান্দরবান ৮টি বিভাগের আওতাধীন ৮০টি মার্কেট এবং শপিংমলের মধ্যে ৬০ ভাগ দোকান ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। এছাড়া ২০১৯ সালের পূর্বে বিভিন্ন দোকান ও শপিংমল-মার্কেটেগুলো যখন প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় ছিল তখন দোকান প্রতি বছরে ন্যূনতম ভ্যাট পরিশোধ করত ১৮ হাজার টাকা। তবে এখন এনবিআরের নতুন আদেশ জারি হওয়ার পর প্রতি কর মেয়াদের ব্যবসার বিপরীতে ভ্যাট রিটার্নের পরের মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
রাজস্ব আদায় বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অডিট কার্যক্রম, প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম এবং সার্বিক মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার কারণে করোনাকালেও রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। এছাড়া নগরীর বড় বড় শপিংমল ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটে ভ্যাট বুথ স্থাপনের মাধ্যমে সরাসরি সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করছি।