ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘কালো টাকার দেশের তালিকায় সৌদি

46

জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও অর্থ পাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় নতুন করে সৌদি আরব, পানামা ও নাইজেরিয়াসহ সাতটি দেশকে ‘কালো টাকা’র দেশের তালিকায় যুক্ত করেছে ইউরোপীয় কমিশন। বুধবার কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে থেকেই তালিকায় ১৬টি দেশের নাম ছিল। সব মিলে ‘কালো টাকা’র তালিকায় থাকা দেশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩টিতে। এদিকে ইউরোপীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে সৌদি আরব। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
নিজেদের অর্থ ব্যবস্থায় কালো টাকার উপস্থিতি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাছাড়া জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধ করতেও কালো টাকার জোগান বন্ধ করতে চায় ইউরোপীয় দেশগুলোর এই জোট। এ লক্ষ্য নিয়ে জোটটি ‘কালো টাকা’র দেশের তালিকা প্রস্তুত করে। তালিকায় এতোদিন ১৬টি দেশের নাম ছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি ব্যাংকে অর্থ পাচারজনিত কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে ইইউ’র তৎপরতা জোরালো হয়। এবার সে তালিকায় নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে সৌদি আরবসহ সাতটি দেশকে।
বুধবার এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন সংক্রান্ত কমিশনার ভেরা জোরোভা বলেন, ‘বিশ্বে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মজবুত মানদন্ড প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। তবে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে অন্য দেশের কারো টাকা যেন আমাদের অর্থ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে না পারে। কালো টাকা হলো সংগঠিত অপরাধ ও জঙ্গিবাদের জীবন সঞ্জিবনী।’
আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘কালো টাকা’র তালিকায় থাকা দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না। তবে এসব দেশের গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো কঠোরতা অবলম্বন করতে বাধ্য থাকবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে আসা অর্থের বিষয়ে কড়া যাচাই-বাছাইয়ের বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। ভুয়া লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হচ্ছে, এমন সন্দেহ হলেই আটকে দেওয়া হবে লেনদেন। এ বিষয়ে তথ্য জানাতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
তালিকার বিরুদ্ধে ভোট আহব্বান করা যেতে পারে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। ৩০ দিনের মধ্যে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে হবে। বিবেচনা সাপেক্ষে এর মেয়াদ বাড়িয়ে দুই মাসও করা হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো তালিকার বিরুদ্ধে ভোট দিলে,তালিকা বাতিল হয়ে যাবে। তবে তালিকার প্রস্তাবকারী জোরোভা স্ট্রসবার্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইইউভুক্ত দেশগুলো এ প্রচেষ্টা বন্ধ করবে না বলেই তার বিশ্বাস।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অর্থ পাচার ও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ঠেকানোর অঙ্গীকারকে কৌশলগতভাবেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে সৌদি আরব। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিয়ন্ত্রক ও আইনি রূপরেখাগুলোর উন্নয়ন ঘটাবো।’ ওই বিবৃতিতে সৌদি অর্থ মন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদানকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের ওই তালিকায় সৌদি আরব, পানামা ও নাইজেরিয়া ছাড়াও অন্য যে দেশগুলো আছে সেগুলো হলো- লিবিয়া, বতসোয়ানা, ঘানা, সামোয়া, বাহামাস, আমেরিকান সামোয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চারটি এলাকা, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, ইথিওপিয়া, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন। বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, গায়ানা, লাওস, উগান্ডা ও ভানুয়াতুকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।