ইউপি ভবন ও সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

9

শহীদুল আলম, ফটিকছড়ি

ফটিকছড়িতে ইউপি ভবন ও সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যায়ে সমিতিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও ২৩ কোটি টাকা ব্যায়ে কাটিরহাট-যোগীরহাট সড়ক নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা। সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং যেনতেন ভাবে কাজ করে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ধসে পড়েছে সেতুর উইং ওয়াল। প্রকল্পের আওতায় থাকা একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। আরেকটি ব্রিজ এখনো অসম্পূর্ণ পড়ে থাকায় পারাপারে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, পরিষদ ভবন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ছে। পরিষদের হলরুমে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক কাজের কারণে বাতিসহ ফ্যানগুলো চলে না। এতে করে গ্রাম আদালতের সাপ্তাহিক বিচারকার্য ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন রুমের টাইলসের কাজও করা হয়েছে যেনতেন ভাবে। পানির পাইপ লাইনের কাজ সঠিকভাবে না করায় টয়লেটগুলো ব্যবহার অনুপযোগী। ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের সময় নির্মাণ কোড না মানায় বৃষ্টিতে ছাদে পানি জমে থাকে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় থাকা গভীর নলকূপ স্থাপন এবং পরিষদের মাঠ ভরাটের কাজসহ পরিষদ সংযোগ সড়কের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ঠিকাদার প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলজিইডি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতল ভবন ও সমিতিরহাট বাজার হতে ইউপির সংযোগ সড়কসহ ১ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হয়। মেসার্স মনির আহমদ কনস্ট্রাকশন এ প্রকল্পের ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে কার্যাদেশ পায়। তারও এক বছর পর ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে কাজ শুরু করে। এ ছাড়া কাটিরহাট-যোগীরহাট সড়কের হালদার ব্রিজ হতে যোগীরহাট পর্যন্ত ফটিকছড়ি অংশে ২৩ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পান একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দুটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময় নির্ধারিত থাকলেও তা যথাসময়ে শেষ করতে পারেনি তারা। এরইমধ্যে কাজ শুরু হলে নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করায় উল্টো চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে মামলা করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। পরে তা স্থানীয় সাংদের মধ্যস্ততায় প্রত্যাহার করা হয়। এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুহাম্মদ জামাল জানান, সড়ক ও ইউপি ভবনের নিম্মমানের কাজের প্রতিবাদ করায় ঠিকাদার উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। সড়কের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। অথচ সড়কটির বিভিন্নস্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ধসে পড়ছে ব্রিজের পাশের প্রতিরোধক দেয়াল। সড়ক নির্মাণে নিম্মমানের পাথর, খোয়া ও বিটুমিন ব্যবহার করায় ২-৩ মাসের মাথায় সড়কের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সমিতিরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আলম কুতুবী জানান, ভবনটি বুঝিয়ে দেয়ার আগেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ছে। সঠিকভাবে করা হয়নি টাইলসের কাজ। এ ছাড়া নিম্মমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী দিয়ে ওয়ারিং করার ফলে ভবনের হলরুমসহ বিভিন্ন রুমের ফ্যানগুলো অচল। মাঠ ভরাট করা হয়নি। স্থাপন করা হয়নি গভীর নলকূপও। দরজা-জানালাগুলোও খুবই নিম্নমানের। সঠিকভাবে পানির পাইপ লাইনের কাজ না করায় ব্যাঘাত হচ্ছে টয়লেটসহ বিভিন্ন রুমে পানি সরবরাহে। এসব বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। সমিতিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) য়োরম্যান মো. হারুনুর রশিদ ইমন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর নানা তদবির করে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। পরিষদের নিজস্ব ভবন না থাকায় দীর্ঘদিন ভাড়া ঘরে চলে আসছিল পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রম। তিনি বলেন, অনেক তদবির করে পরিষদের নতুন দ্বিতল ভবন বরাদ্দ হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু ভবনের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেন। নি¤œমানের কাজের প্রতিবাদ করায় উল্টো মামলার আসামি হতে হয় তাকে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অভিযোগ করার পরেও কাজের গুণগত মানের কোন পরিবর্তন হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক মো. আসাদুজ্জামান টিটু ­­­­, ইউপি ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বছর আগে। এখন অভিযোগ আনা নিতান্তই বোকামি। সড়কের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তার পরেও অনিয়ম হলে এলজিইডির কাছে আমার অর্থ জামানত আছে। প্রয়োজনে ঠিক করে দেব। তিনি বিষয়টি দুরভিসন্ধিমূলক বলে অবিহিত করেন। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আমিরুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। তবুও কোন ধরনের অনিয়ম হলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।