ইউপি নির্বাচন পঞ্চম ধাপেও সহিংসতা

15

 

গত ৫ জানুয়ারি বুধবার। দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন পরিষদের পঞ্চম ধাপের নির্বাচন। আশা করা হয়েছিল এ নির্বাচন সহিংস মুক্ত হবে। শান্তিপুর্ণ পরিবেশে ভোট হবে। কিন্তু আশায় ধূলোবালি। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিনসহ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে, তাতে রীতিমত আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। অতীতের চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত নির্বাচনে যেভাবে সহিংসতা হয়েছে, সেই আলোকে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় স্তবকে বারবার নির্বাচনের সব অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানালেও এ ধাপের নির্বাচনও সহিংসতামুক্ত থাকতে পারেনি, এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, হতাহত, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা ধরনের অনিয়মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ও বগুড়ার গাবতলীতে নির্বাচন চলাকালীন দুইজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একটি কেন্দ্রে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে দায়িত্বশীলরা গড়িমসি করলে বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা কেন্দ্র ভাঙচুরসহ বিজিবি, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার জন্য স্থানীয়রা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়ি করেছেন। এছাড়া আরও চার জেলায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন। দেশের প্রধান বিরোধীদলসহ কোন রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন না করা সত্বেও প্রতিদ্বন্ধির সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা দুঃখজনক। ঘটনার বিচার বিশ্লেষণে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের অধিকাংশই সরকারি দলের। এরমধ্যে কেউ দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে আর কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে (কথিত বিদ্রোহী) নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী করছেন। সহিংসতায় হতাহতের অধিকাংশই সরকারি দলের কর্মী-সমর্থক। এ যেন নিজ ভাইয়ের রক্ত পানের ন্যায়! এছাড়া, চলমান ইউপি নির্বাচনে একদিকে সহিংসতা অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা লক্ষ করা যাচ্ছে বেশি। বলা বাহুল্য, এ দুই প্রবণতাই গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। সূত্র জানায়, পঞ্চম ধাপে ৪৮ জন চেয়ারম্যান, ৩৩ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য ও ১১২ জন সাধারণ সদস্য ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। আর নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ধাপে সহিংসতায় মারা গেছেন ৮৫ জন। ওদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৪২টি। এ সবকিছুর প্রেক্ষাপটে একটি বড় প্রশ্ন উঠতেই পারে-আগামী দিনগুলোয় অনুষ্ঠেয় স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনেও কি সহিংসতার ঘটনা প্রত্যক্ষ করব আমরা? আমরা এ প্রসঙ্গে বলতে চাই-যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। আমরা মনে করি, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা, জনগণের ভোটে কে জিতল আর কে হারল তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো, ভোটাররা তাদের বিবেচনায় যোগ্য প্রার্থীকে নির্বিঘেœ ভোট দেবে এবং এর ফলাফল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে মেনে নিতে হবে। পরিতাপের বিষয়, নির্বাচনে যে কোনো প্রকারে নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা দিনদিন প্রকট হচ্ছে। আর এ প্রবণতার ফলে, জনপ্রতিনিধির গুরুত্ব এবং দায়বদ্ধতা যেমন লোপ পাচ্ছে, অন্যদিকে যেনতেনভাবে নির্বাচন করতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। আমরা আবারও আশা করব, আগামী নির্বাচগুলো সহিংসতামুক্ত অবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতায়ও জড়াবে না কোন কর্মী-সমর্থক। এক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সদা সতর্কাবস্থায় থাকতে হবে, যাতে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সূত্রপাত না হয়। আমরা মনে করি, যে কোনো নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও সহিংসতামুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচকমন্ডলী তথা ভোটার শ্রেণির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি গণতান্ত্রিক চেতনায় ভোট প্রদানে অংশ নেয়, তাহলেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।