ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী পাহাড়ের তিন নারী

11

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নে কুসুমছড়ি গ্রাম। সকাল ৭টায় বসত ঘরের বান্দায় মাশরুম তুলছে মিকো চাকমা। অনেকেই উঠানে অপেক্ষা করে আছে মাশরুম কেনার জন্য। এ দৃশ্য প্রতিদিনের। উপজেলা সদর থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে মোটরসাইকেল করে মাশরুমের জন্য যান ক্রেতারা। এখন গ্রামের সবাই তাদেরকে মাশরুম আপা বলে ডাকে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জুরাছড়ি ইউনিয়নে কুসুমছড়ি গ্রামে অধিকাংশ জনগোষ্ঠী জুম চাষী। ওই গ্রামের মিকো চাকমার (৩০) স্বামী আপত চাকমা একজন কৃষক। পরিবারে এক সন্তান ও বৃদ্ধি বাবা-মা মিলে পরিবারে সদস্য পাঁচ জন।
মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে লেখা পড়া করে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরার অবস্থা তাদের। শুধুই মিকো চাকমা নয়, রিপনা চাকমার অবস্থা আরো করুণ। অভাবের ধাক্কায় এন্টিনা চাকমার কলেজ যাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে যৌথভাবে মাশরুমের চাষ শুরু করে তারা।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সরকারি ও বেসরকারি কোন প্রশিক্ষণ পাননি। তবে তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইউটিউব দেখে দেখে মাশরুম চাষ শিখেছেন তারা। প্রথমেই লোকসান গুণতে হয়, তাতে হতাশা না হয়ে হাল ধরে রাখে। এখন লাভের মুখ দেখছেন। এই লাভ দিয়ে মিকো, রিপনা পরিবারকে সহায়তা করেও ব্যাংকে সঞ্চয় করেন। এন্টি কলেজে পড়াশোনা করছে নির্বিঘেœ। ইউটিউবের কল্যাণে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে তারা। দৈনিক ৩-৪ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান তারা। বাজারে মাশরুমের বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক আয়ের ৩০ ভাগ জমা রাখেন তারা। মিকো, রিপনা ও এন্টি চাকমা বলেন, ইউটিউব থেকে দেখে মাশরুম চাষ শিখেছি। প্রথমে লোকসান হলেও, বর্তমানে লাভের মুখ দেখছি। লভ্যাংশ দিয়েই পরিবারের হাল ধরতে পেরে সত্যি নিজেদেরকে গর্বিত মনে করি।
চাষাবাদের পরিধি বাড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের সহায়তা কামনা করেন তারা। তাদের স্বপ্ন এই চাষের পরিধি বাড়ানো।
এজন্য প্রয়োজন আলাদা ২-৩শ’ ধারণ ক্ষমতার কাঁচা ঘর, পর্যাপ্ত বীজ। আর্থিক সংকটে তাদের স্বপ্ন ধ্বসে পাড়ার আশংকা করছে তারা।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোঃ আবুল খায়ের বলেন, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাঁড়ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক এসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আহমেদ সরকার বলেন,বাজারে মাশরুমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করা হলে বহু বেকার যুবক-যুবতী আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারবে। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তরুণ চাকমা বলেন, নারীদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাদের স্বপ্ন চাষাবাদের পরিধি বাড়াতে সকলের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, এমন উদ্যোগীদের সহায়তা প্রদান করা দরকার। আগামী অর্থ বছরে বরাদ্দ পাওয়া গেলে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।