আয়ে এগিয়ে, শিক্ষায় পিছিয়ে রেজাউল করিম

22

রাহুল দাশ নয়ন

বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চার প্রার্থী। চার প্রার্থীর মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল করিম। আয় কিংবা অর্থের দিক থেকেও অন্য তিন প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। তবে লেখাপড়ায় পিছিয়ে আছেন। প্রার্থীদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ফাজিল, মিজানুর রহমান ও আয়শা ফারজানা এইচএসসি পাস হলেও রেজাউল করিমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তিন প্রার্থীর ঋণ না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) মিজানুর রহমানের নামে ঋণ আছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য মিলেছে।
হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী রেজাউল করিমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে দুটি মামলা হলেও একটিতে বেকসুর খালাস ও অন্যটি প্রত্যাহার করা হয়। রেজাউল করিম পেশাগতভাবে বোয়ালিয়া মেরিন সার্ভিস এন্ড কন্সট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। নির্ভরশীলদের কোনো আয় না থাকলেও নিজের কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় ২৬ হাজার ২০০ টাকা, ব্যবসায় ২৫ লক্ষ ২৮৭ টাকা ও এফডিআর সুদ বাবদ অন্যান্য আয় ৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭৭০টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে এক লক্ষ ৪১ হাজার ১৩২ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩০ টাকা, পোস্টাল, সেভিংসসহ সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দুই কোটি দুই লাখ ৫২ হাজার টাকা, বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ির মূল্য ২৭ লক্ষ ২৭ হাজার ৭২০ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য ধাতু আছে ৩০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র আছে ১০ হাজার টাকা। রেজাউল করিমের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো ঋণ নেই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) মনোনয়নপত্র জমা দেয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এসএম মিজানুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। পেশায় কৃষক এই প্রার্থী বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। নির্ভরশীলদের আয় না থাকলেও তার বাৎসরিক আয় কৃষিখাতে ৪৮ হাজার টাকা, পৌরসভার সম্মানি ভাতা এক লক্ষ ৮ হাজার টাকা ও কেন্দ্রীয় সমিতির সম্মানি ভাতা ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রার্থীর নিজ নামে নগদ আছে ২৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২০ হাজার টাকা। মোটরসাইকেল আছে একটি। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে একটি টিভি, একটি ফ্রিজ ও ফ্যান দুটি, আসবাবপত্রের মধ্যে খাট, সোফা, আলনা ও ডাইনিং টেবিল আছে। নিজ নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে স্বর্ণ আছে এক ভরি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে কিছুই নেই এই প্রার্থীর। স্ত্রীর নামে একটি দোকানগৃহ আছে। দায়-দেনামুক্ত থাকলেও বোয়ালখালী ইউসিসি লিমিটেডে ৫০ হাজার টাকা ঋণ আছে মিজানুর রহমানের।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে প্রার্থী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা ফাজিল। পেশাগতভাবে গ্রামীণ ডায়গনস্টিক সেন্টারে যৌথ ব্যবসায় যুক্ত আছেন। ব্যবসা থেকে বছরে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় করেন। প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আর কারও আয় নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের নগদ আছে দেড় লক্ষ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে ৩০ হাজার ও আসবাবপত্র আছে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত ১০ গন্ডা কৃষিজমি আছে। ঋণ কিংবা কোনো দায়-দেনা নেই এই প্রার্থীর।
সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আয়েশা ফারজানার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তার নামে কোনো মামলা নেই। চাকরি থেকে নিজের বাৎসরিক আয় ২৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ কোনো টাকা না থাকলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে এক লক্ষ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে ল্যাপটপ, ক্যামেরা, টিভি ও ফ্যানের মূল্যমান ৮০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৪০ হাজার টাকা। এই প্রার্থী নিজ নামে কোনো স্বর্ণালঙ্কার নেই বলে তথ্য দিয়েছেন। নিজ ও নির্ভরশীলদের নামে কোনোধরনের স্থাবর সম্পত্তি, দায়- দেনা এবং ঋণ নেই আয়েশা ফারজানার।
প্রসঙ্গত, আজ (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। আগামী ১৬ মার্চ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বোয়ালখালীর একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের ৮৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। ৫১৮টি কক্ষে এক লক্ষ ৯১ হাজার ৭২৮ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লক্ষ ৫৭৫ জন ও মহিলা ভোটার ৯১ হাজার ১৫৩ জন।