আয়াত হত্যার পরিকল্পনা হয় দেড় মাস আগে

26

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর ইপিজেডে ৫ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় আরও এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকালে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে নগরের বন্দরটিলা নয়ারহাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার কিশোর আয়াতের বাসার কাছে একটি হোটেলে কাজ করতো।
আদালতে জবানবন্দিতে ওই কিশোর জানায়, সে আয়াতদের ভবনের পাশে একটি হোটেলে কাজ করে। সেই সুবাদে আবিরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। আবির বয়সে বড় হওয়ায় ভাই বলে ডাকতো। গত অক্টোবরের শুরুতে নগরের নেভী গেট এলাকার দেওয়ালে বসে আড্ডা দিচ্ছিল দুইজন। এ সময় আবির ওই কিশোরকে বলে, ভবন মালিক মনজুর হোসেনের নাতনি আয়াতকে অপহরণ করে হত্যা করবে। এরপর মুক্তিপণের টাকা নেবে মনজুরের কাছ থেকে। তাকেও সঙ্গে থাকতে বলে। কিন্তু সে রাজি না হলে তখন কাউকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করে আবির। গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে আয়াতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানতে পারে হোটেলে কাজ করার সময়। হোটেল থেকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বের হলে আয়াতদের ভবনের বিপরীতে আইয়ুব ভবনের সামনে আবীরের সঙ্গে তার দেখা হয়। দুইজনে মিলে কলোনির দিকে আয়াতকে খুঁজতে যায়। তখন আয়াতকে অপহরণের পরে হত্যা করে বলে ওই কিশোরকে জানায় আবির।
আবির তাকে জানায়, লাশ আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকায় তার মায়ের বাসায় আছে। আয়াতের দাদার কাছে দুয়েকদিন পর ২০ লাখ টাকা চাইবে। টাকা নেওয়ার সময় তাকেও থাকার প্রস্তাব দেয়। তাহলে তাকেও কিছু টাকা দেবে। ওই কিশোর তাতেও রাজী হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি।
জবানবন্দিতে ওই কিশোর আরও জানায়, আয়াতকে হত্যা করেছে শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। কারণ আমার মনে হয়েছিল এখন এসব বললে মানুষ আমাকেও সন্দেহ করবে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সময়মতো আয়াতকে মেরে ফেলার ঘটনা সবাইকে বলে দিলে তার মরদেহের টুকরো করার আগে পাওয়া যেতো।
আদালতে জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান জানান, শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত হত্যাকাÐের পরিকল্পনা হয় দেড়মাস আগে। অভিযুক্ত আবির আলী গ্রেপ্তার কিশোর বন্ধুকে সে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। অপহরণ করে হত্যাকাÐের পরও গ্রেপ্তার কিশোর বন্ধুর কাছে স্বীকার করেছিল সব।
শিশু আয়াতকে খুনের মামলায় আবির আলীর সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। শিশু আয়াতের হত্যার ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে নগরের ইপিজেড থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণের পর হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে আবির আলী। ওইদিন বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা যাবত ১৭ পৃষ্ঠার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আবির আলী। একই মামলায় গত ২ ডিসেম্বর আবিরের বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করা হয়।