আসামির ফাঁসির রায়

10

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

সীতাকুন্ডে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আবুল হোসেন (২৯) নামে এক আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আলীম উল্ল্যাহ এ রায় দেন। আবুল হোসেন সীতাকুন্ড পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ইসমাইল হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র। একই মামলার অপর আসামি ওমর হায়াত মানিককে খালাস দেয়া হয়। নিহত দুই কিশোরী হলেন ত্রিপুরা পল্লীর পুনেল কুমার ত্রিপুরার মেয়ে সুকুলতি ত্রিপুরা (১৫) ও সুমন কুমার ত্রিপুরার মেয়ে ছবি রানী ত্রিপুরা (১১)।
মামলার তখনকার নথিসূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ মে সীতাকুন্ড পৌরসদর জঙ্গল মহাদেবপুর পাহাড়ের পাদদেশে ত্রিপুরা পাড়া এলাকা থেকে ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় দুই আদিবাসী সুকলতি ত্রিপুরা ও ছবি রানী ত্রিপুরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরদিন ১৯ মে ছবি রানী ত্রিপুরার বাবা সুমন ত্রিপুরা বাদী হয়ে আবুল হোসেনকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত তিনজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকালীন অভিযুক্ত দ্বিতীয় আসামি রাজীব দুষ্কৃতকারীর গুলিতে নিহত হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী অশোক কুমার দাশ বলেন, ত্রিপুরা পাড়ায় দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধে আসামি আবুল হোসেনকে মৃত্যুদন্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ওমর হায়াত মানিক নামে অপর এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি আবুল হোসেন ও মানিক উপস্থিত ছিলেন। আসামি আবুল হোসেনকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইভাবে তিনি আরো বলেন, মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার অবহেলা, তদন্তে গাফিলতির কারণে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও কিশোরীদের পরিবার সন্তুষ্ট। তবে মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
নিহত সুকুলতি ত্রিপুরার বাবা মামলার বাদী পুনেল কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘ঐ সময় স্থানীয় চৌধুরী পাড়ার ইসমাইল হোসেনের পুত্র আবুল হোসেন তার বখাটে সঙ্গীদের সাথে নিয়ে ত্রিপুরা পল্লীতে গিয়ে আমার মেয়ে সুকুলতি ত্রিপুরাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে সুকুলতি অসম্মতি জানালে আবুল হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে সুকুলতিকে আবুল হোসেনের হাতে তুলে দিতে আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে। বিষয়টির প্রতিবাদ জানালে আবুল হোসেন আমার মেয়েকে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে আমাদের অনুপস্থিতিতে আমার মেয়ে সুকুলতি ও তার বান্ধবীকে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে এবং পরবর্তীতে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজায় আবুল হোসেন। আমি আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট। তবে এই রায় দ্রুত কার্যকর করতে আদালতের প্রতি জোর প্রার্থনা করছি।’
সীতাকুন্ড পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল আলম মুরাদ বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করা দরকার। রায় কার্যকর হলে সমাজে এসব বখাটে ও নেশাগ্রস্তরা অপরাধমূলক অপকর্ম করতে চিন্তা করবে।’