আশ্রয়ণের কল্যাণে বদলে যাচ্ছে বেদে জীবন

25

 

যাদের সারাজীবন কেটে যায় জল এবং নৌকায় তাদের কথা এপর্যন্ত কেউ ভাবেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশে বেদে স¤প্রদায়কে নিয়ে হয়তো সামান্য গবেষণা হয়েছে কিন্তু তাদের জীবনমানের উন্নয়নের কথা কেউ ভাবেনি। বেদে স¤প্রদায়রা দলবদ্ধ হয়ে বজরা নৌকায় বসবাস করতে ভালোবাসে। এরা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় বিরামহীনভাবে ছুটে চলে। জীবন ধারণের জন্য এরা অনক সময় কোনো একজায়গায় তাবু খাটিয়ে কিছুদিনের জন্য বসবাস করে এবং পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে দাঁতের পোকা ফেলানোসহ বিভিন্ন শেকড়বাকর বিক্রি করে। তাছাড়া তাদের আর কোনো অবলম্বন নেই বললে চলে। এরা নৌকা থেকে ডাঙ্গায় আসে শুধুমাত্র জীবিকা নির্বাহের সামান্য অর্থ জোগাড় করার জন্য। এবার বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব অবহেলিত বেদে স¤প্রদায়ের দিকে নজর দিয়েছেন এবং এদের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ অধীনে বাড়ি বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেদে স¤প্রদায়ের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাঁওড় এলাকায়। সর্ববৃহ আবাসনের এই নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। শীঘ্রই ৫৯টি বেদে পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহার একটি করে সুদৃশ্য এবং টেকসই বাড়ি এবং বাড়িসহ জায়গার দলিল। বেদে স¤প্রদায়ের লোকজন বলছেন, আগামীকাল কি খাব, সেই চিন্তা মাথায় নিয়েই প্রতি রাতে ঘুমাতে যেতে হয়। সকাল হতেই বেরিয়ে যেতে হয় দিনের আহারের সন্ধানে। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকাই যেখানে দুষ্কর, সেখানে নিজে ঘর করবো, সেই ঘরে থাকব- এমন স্বপ্ন থাকলেও দৃশ্যমান বাস্তবতায় সেই স্বপ্ন লালন করা ও বাস্তবায়ন করার সাহস কখনই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিলে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে, রোদ-বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সন্তানদের পড়ালেখা করিয়ে মানুষ করত পারবো,তাছাড়া জলের মধ্যে নৌকায় তাদের আর কাউকে বসবাস করতে হবেনা। প্রকৃতপক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধিনে নির্মিত প্রতিটি ঘরই অত্যন্ত মজবুত এবং টেকসই এখানে বেদে জনগোষ্ঠীদের জন্য রাখা হয়েছে গবাদিপশু পালনের জন্য খোলা জায়গা চাইলে বেদে স¤প্রদায়ের লোকজন এখানে গবাদিপশু লালনপালন করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। মুলতঃ উত্তরবঙ্গের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে এখানে ছাত্রীরা স্কুলে যাওয়ার জন্য এদের প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাইসাইকেল দেয়া হয়েছে এবং এদের অনেকেই বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুুলে যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে আশ্রয়ণগুলোতে সহায় সম্বলহীন দরিদ্র পরিবারের প্রায় আঠারো শ ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া করছে যাদের খরচ চালাচ্ছে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান ঝিনাইদহে বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়ণ
প্রকল্প-২ এর অধিনে যে ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো তাদের হস্তগত হলে আশা করা যায় তাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন আসবে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেদেরাও এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদের জীবনধারা পাল্টানোর জন্য এগিয়ে আসবেন। অবশ্য ইতিমধ্যে ঝিনাইদহে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন কালীগঞ্জে ২ একর খাস জমিতে গৃহহীনদের জম্য ঘরগুলো নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে বারবাজার ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে জগন্নাথপুর গ্রামে ‘মাজদিয়া বাঁওড়’ এলাকায় বেদেপল্লীর জন্য ঘর তৈরির কাজ দ্রæতগতিতে চলছে। ঘর পাওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে উক্ত এলাকার বেদেদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এসমস্ত অবহেলিত বেদেদের নিকট থেকে ঘর প্রদানের জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন কাগজপত্রও নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ঝিনাইদহের বেদে স¤প্রদায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত উপহার একটি করে বাড়ি এবং দলিল পাবেন এর ফলে উক্ত এলাকার বেদে স¤প্রদায়ের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক