আশার আলো চট্টগ্রামে মেট্রোরেল ও চসিকের প্রকল্প অনুমোদন

46

 

গত সোমবার ছিল চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিবিধ সুসংবাদের দিন। দিনের ঝলমলে আলোয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীকে আশাবাদী করেছে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের। এর সাথে চট্টগ্রাম নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও সংস্কারের জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ২ হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে কৃতার্থ করেছেন। একদিকে মেট্রোরেল প্রকল্প অন্যদিকে ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, বিমানবন্দর সড়কে ৬শ মিটার ওভারপাস, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট, ১০টি গোলচত্তর, ২টি জিপ ও ১৫টি নির্মাণ যানযন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ৭৬৯ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃক প্রদত্ত প্রকল্পের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় শতভাগ জিওবি’র অর্থায়নে অনুমোদন নগরবাসীর জন্য বড় প্রাপ্তি। এর আগে একসাথে এত টাকার এবং তাও সম্পূর্ণ জিওবির অর্থায়নে বাস্তবায়নের সুযোগ মেলেনি। এবারই প্রথম এবং তা সম্ভব হয়েছে মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায়। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন হয়। একই সভায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেট্রোরেল শুধু ঢাকাতে থাকবে কেন, ‘চট্টগ্রামের জন্যও মেট্রোরেল প্রকল্প নিতে হবে। যেসব শহরের সঙ্গে এয়ারপোর্ট আছে, সেসব শহরে পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত করে প্রকল্প নিতে হবে।’ বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে আন্তরিক। এ জন্য সিডিএ ও চসিককে আগেও বিভিন্ন সময় বরাদ্দ দিয়েছেন। এবার জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়েও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান ও সতর্ক করেছেন। বিশেষকরে অতীতে চাকতাই খালের তলদেশে পাকাকরণ চট্টগ্রামকে ডুবিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। খালের তলা পাকাকরণের কাজ যখন চলছিল তখন আমরা দেখেছি, নগর পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুরূপ পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমরা জানি, ২০১৯ সালে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীতে সর্বপ্রথম মেট্রোরেল করার উদ্যোগ নেন। চসিকের উদ্যোগ মেট্রোরেল নিয়ে প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে ওই বছর ২৬ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। যেখানে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা নিয়ে আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়। ওই সময় বলা হয়, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ দ্রুত গণপরিবহন ব্যবস্থা হবে মেট্রো রেলের তিনটি লাইনে। যার মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার। তা বাস্তবায়ন করতে আনুমানিক ৮৪ হাজার ২০২ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টস লিমিটেড নামে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছিল।
ওই সময় সিটি কর্পোরেশনের এমন উদ্যোগে সিডিএকে অনাপত্তি দেওয়ার আহ্বান জানান সিটি মেয়র। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি সিডিএ চেয়ারম্যান। অনেকটা সিডিএ’র অনাগ্রহের কারণে প্রকল্পটি আর আলো দেখেনি। দেরিতে হলেও চট্টগ্রামে মেটোরেল নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের। আমরা আরো প্রত্যাশা করি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, তা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে। অতীতে চসিকের যোগাযোগ অবকাঠামোসহ স্থাপনা নির্মাণ, মশার ঔষধ ছিটানোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা না থাকলে কোন কাজই টেকসই হয়না। সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়না। এ অবস্থায় চসিক যে বরাদ্দ পেয়েছে তা সঠিকপথে ব্যবহার হবে যথাসময়ে প্রকল্পও বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য যে, প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেছেন, ‘প্রকল্পটি শতভাগ জিওবি অর্থায়ন করতে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। তারই বদৌলতে চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিনি অনুরোধ রেখেছেন। তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে নগরীর যাতায়াত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।’