আশার আলো খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়

27

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দফায় দফায় ছুটি থাকার পর এ মাসের ৩০ তারিখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে। অর্থাৎ টানা এক বছরেরও বেশি সময় পর দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মহামারির কারণে দেশের শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, আশা করা যায়, সরকারি নীতিমালা ও বিধি অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা সেই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সরকার টানা এক বছরেরও বেশি সময় পর আগামী ৩০ মার্চ দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর কিছু কিছু অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কিনা, এ নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীদের অভিভাবকের প্রশ্নের শেষ নেই। এমন অবস্থায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা এলো। যেহেতু এখনই শিশুদের টিকার আওতায় আনা যাচ্ছে না, এমন অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের আওতায় আনা কতটা যৌক্তিক, তা পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শিশু শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় বিমুখতা তাদের শিক্ষার প্রতি অনিহা করে তুলছে, তারা মানসিক অসুস্থতায় ভোগছে। এ অবস্থায় এখন কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সময় নয়, বরং শিক্ষাকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় এবং শিক্ষা কার্যক্রম কিভাবে সচল করা যায়, সেই প্রচেষ্টা সবার থাকা চাই। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে ২৪ মে। এর এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে খুলে দেওয়া হবে আবাসিক হলগুলো।
হলে অবস্থান নির্বিঘ্ন করতে এ সময়ের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদানের কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খোলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করারও কথা রয়েছে। এসব কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও এখন শুধু পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বা পিইসি পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাসে যাবে। এ ছাড়া দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বা এসএসসি-দাখিল এবং এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৬ দিনই স্কুলে যাবে। পুরো রমজানে শ্রেণি পাঠ অব্যাহত থাকবে। শুধু ছুটি থাকবে ঈদের।
পিইসি, এসএসসি, এইচএসসি-এসব পরীক্ষার্থী যাতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সরাসরি নিয়মিত শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে গুরুত্ব প্রদান করতে যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু এতে দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর যে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হবে তা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী? প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টির আওতায় থাকার পরও শিশুরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ভুল করে থাকে। প্রশ্ন হলো, এই বয়সি শিশুশিক্ষার্থীরা ঘরের বাইরে বের হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কতটা সক্ষম হবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকলেও কখন এ মহামারি কাক্সিক্ষত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে আসবে, বিশেষজ্ঞরা এখনই তা বলতে পারছেন না। জানা গেছে, কেবল ভারতেই করোনার সাত সহস্রাধিক মিউটেশনের সন্ধান মিলেছে। নতুন নতুন করোনার উৎস সন্ধান মিলছে। এতে আমরা এসব তথ্য বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঘাটতি হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আমরা আশা করছি, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পূর্বপ্রস্তুতিতে যে বিধিমালা দিয়েছে-তা যেন পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা বিভাগের তদারকি প্রয়োজন রয়েছে।