আল বাগদাদি : ধূম্রজালে ঘেরা এক জিহাদি নেতার উত্থান-পতন

20

ঘৃণা প্রচারক, নৃশংস বর্বরতার প্ররোচক ও উস্কানিদাতা, দীর্ঘদিন ধরে পলাতক, যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল অসংখ্য ড্রোন, স্বঘোষিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার আগে-পরে যাকে মাত্র একবারই জনসম্মুখে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সেই শীর্ষনেতা আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুর খবর এখন ভেসে বেড়াচ্ছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে। বছর তিনেক আগেও যে ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’কে নিয়ে সারা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো ব্যস্ত থাকতো রবিবার তাকে নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছে সিএনএন।
মার্কিন এ সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বাগদাদিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ‘ইসলামের বিকৃতকারী’ হিসেব। বলা হচ্ছে, তার ‘দূষিত’ মতবাদ ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্মূলে এমন ভূমিকা রেখেছে ১৯৭০ এর পর বিশ্ব আর যা দেখেনি। ইরাকি নাগরিক, কট্টর রক্ষণশীল ধর্মপ্রচারক বাগদাদি জঙ্গি বিদ্রোহী দলগুলোর কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন গত দশকের শুরুর দিক থেকে। ২০০৩ সালে মার্কিন অভিযানে সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইরাক ও এর আশপাশের দেশগুলোতে তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী। আবু গারিব ও ক্যাম্প বুকাতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আটক থাকার সময়ই বাগদাদির দেখা হয় ভবিষ্যতে জিহাদি নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা অনেকের সঙ্গে। ইরাকে ফিরে এসে যোগ দেন আল-কায়েদায়; জঙ্গি এ গোষ্ঠীটি যখন আরো অনেকের সঙ্গে মিলে গঠন করে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক- বাগদাদির উত্থান তখন মধ্যগগনে। ২০১০ সালে মার্কিন-ইরাকি যৌথ অভিযানে ইসলামিক স্টেট অব ইরাকের শীর্ষ নেতার মৃত্যুর পর বাগদাদি সংগঠনটির শীর্ষ পদে আসীন হন। মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিরাট অংশের ইরাক ত্যাগের সুযোগে জঙ্গি এ গোষ্ঠীটি বিস্তার লাভ করতে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়ায় চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে সেখানকার কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উচ্চাকাক্সক্ষী বাগদাদি ২০১৩ সালে তার সংগঠনের নাম বদলে রাখেন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড আল শাম, সংক্ষেপে আইএসআইএস।
অল্প কিছুকালের মধ্যেই এ জঙ্গিগোষ্ঠীটি সিরিয়া ও ইরাকে অভাবনীয় সাফল্য পায়। ২০১৪ সালে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলের গ্র্যান্ড আল-নূরী মসজিদে বাগদাদি সিরিয়া ও ইরাকের দখলকৃত বিশাল অংশজুড়ে ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেন। আগে-পরে জনসম্মুখে এটাকেই তার একমাত্র উপস্থিতি বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আনুষ্ঠানিকভাবে তখন থেকেই আইএস নামে পরিচিত বাগদাদির এই বাহিনী তার নিয়ন্ত্রিত অংশ ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতে অকথ্য বর্বরতার নিদর্শন দেখানোর পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের ওপর বেশ কয়েকটি বড় বড় হামলা চালিয়ে বিশ্ব স¤প্রদায়ের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।