আল কুহি মুসলিম স্বর্ণযুগের বিজ্ঞানী

29

মোহাম্মদ তৈয়ব হোসেন

তাঁর পুরো নাম আবু সহল ওয়াইজান ইবনে রুস্তম আল-কুহি। তাঁর নামের সঙ্গে ‘রুস্তম’ শব্দটি ইঙ্গিত করছে যে, তিনি পারস্যের বিখ্যাত বীর রুস্তমের বংশধর। আল কুহি ছিলেন তৎকালীন পারস্যের (বর্তমান ইরান) একজন গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ। তার গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেকগুলি লেখার জন্য তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম জ্যামিতিবিদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তাঁকে সর্বোত্তম জ্যামিত জ্ঞ মনে করতেন। বিখ্যাত কবি ও গণিতজ্ঞ ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১ খৃষ্টাব্দ) তাঁকে শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ হিসাবে বিবেচনা করতেন। আল কুহি তাঁর রচনাবলীতে অসংখ্য জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। তাঁর জ্যামিতিক সমাধান পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীদের দিকনির্দেশনা হিসাবে কাজ করে।
আল কুহির জন্ম: আল কুহি ৯৪০ খৃষ্টাব্দে ইরানের (তৎকালীন পারস্য) তাবারিস্তানের কুহ (ছঁয) নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামের নামানুসারে তিনি ইতিহাসে আল-কুহি নামে পরিচিত।
আল কুহির কর্মজীবন: ইরানে (তৎকালীন পারস্য) বুহাইয়া বংশের শাসন কায়েম হওয়ার সময় তিনি বড় হয়ে উঠেছিলেন। বুহাইয়া বংশ ৯৪৫ থেকে ১০৫৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত পশ্চিম ইরান ও ইরাক শাসন করে। ৯৪৫ খৃষ্টাব্দে আহমদ ইবনে বুহাইয়ী আব্বাসীয় খেলাফাতের রাজধানী বাগদাদ দখল করেন। ৯৪৯ থেকে ৯৮৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বুহাইয়া বংশের আদুদ আল-দৌলা (অফঁফ ধষ-উধষিধ)’র রাজত্বকালে বুহাইয়া বংশের শাসন উন্নতির শীর্ষ শিখরে আরোহন করে। বাগদাদ থেকে তিনি বর্তমান ইরানের পুরো দক্ষিণাঞ্চল এবং বর্তমান ইরাকের অধিকাংশ শাসন করতেন। বিজ্ঞান ও শিল্পকলার বিরাট পৃষ্ঠপোষক আদুদ-আল-দৌলা বাগদাদে তাঁর রাজদরবারে আল কুহি, আবুল ওয়াফা ও আল-সিজ্জিসহ বেশ কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞকে ঠাঁই দিয়েছিলেন। ৯৬৯ খৃষ্টাব্দে আদুদ-আল-দৌলা ইরানের সিরাজে তাঁদেরকে কর্কটক্রান্তি (গরফংঁসসবৎ) ও মকরক্রান্তি (গরফরিহঃবৎ) পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন। ৯৬৯/৯৭০ খৃষ্টাব্দে আল-কুহি, আল সিজ্জি (অষ ংরলুর) এবং অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞরা সিরাজে কর্কটক্রান্তি (গরফংঁসসবৎ)ও মকরক্রান্তি (গরফরিহঃবৎ) পর্যবেক্ষণ করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে আল কুহির অবদান: আদুদ আল-দৌলার পুত্র শারাফ আল-দৌলা (ঝযধৎধভ ধষ-উধষিধ) (শাসনকাল: ৯৮৩-৯৮৮/৯৮৯ খৃষ্টাব্দ) ৯৮৩ খৃষ্টাব্দে বাগদাদের শাসক হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখায় আল-কুহি বাগদাদের নতুন শাসকের জন্য কাজ করার সুযোগ পান। শারাফ আল-দৌলা জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল-কুহিকে ৭টি গ্রহ পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন। এজন্য বাগদাদের রাজদরবারে আল-কুহির জন্য একটি মানমন্দির (ড়নংবৎাধঃড়ৎু) নির্মাণ করা হয়।
আল কুহির ডিজাইন অনুযায়ী মানমন্দিরের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয় এবং ভবন নির্মাণ শেষ হলে সেখানে সেগুলো স্থাপন করা হয়। আল-কুহিকে মানমন্দিরের পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ৯৮৮ খৃষ্টাব্দের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে মানমন্দির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ ক’জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে আবুল ওয়াফা (অনঁষ ডধভধ) ছিলেন অন্যতম।
শারাফ আল-দৌলার রাজদরবারে তাঁকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। মানমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরেকজন যিনি উপস্থিত ছিলেন, তিনি হলেন আবু ইসহাক আল-সাবি (অনঁ ওংযধয়ঁব অষ ঝধনর)। আল-সাবি ছিলেন বাগদাদের দরবারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন গণিতে আগ্রহী।
৯৮৮ খৃষ্টাব্দে আল কুহি বাগদাদে শারাফ আল-দৌলার প্রাসাদের বাগানে গ্রহ, নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণকালে আরো কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন। ৯৮৯ খৃষ্টাব্দে শারাফ-আল-দৌলার মৃত্যু হলে বাগদাদের মানমন্দিরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বুহাইয়া সাম্রাজ্য পতনের দিকে এগিয়ে যায়। অর্থনীতিতে মন্দা ভাব দেখা দেয়ায় সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ শাসকের জীবনকে দুবির্ষহ করে তোলে। গ্রহ, নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় ভাটার টান পড়ে। অ্যারিস্টটলের মতো, আল-কুহিও প্রস্তাব করেছিলেন যে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে দেহের ওজন পরিবর্তিত হয়।
গণিতে অবদান: আল-কুহি হলেন জ্যামিতির অঙ্কন প্রণালীতে ব্যবহৃত কম্পাসের উদ্ভাবক। ‘রিসালা ফিল বারকার আল-তাম’ (ঙহ ঃযব ঢ়বৎভবপঃ ঈড়সঢ়ধংং)-নামে তাঁর রচিত গ্রন্হে তিনি প্রথম কণিক কম্পাসের বর্ণনা দেন।
আল কুহি প্রথম এক পা বিশিষ্ট এ কম্পাসের সাহায্যে সরল রেখা, বৃত্ত, উপবৃত্ত ও কোণ অঙ্কন করেন। গ্রন্থটিতে তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরির কলাকৌশল ব্যক্ত করেন। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, যে কেউ সহজে এস্ট্রোল্যাব, সূর্যঘড়ি ও অনুরূপ যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারে। আল-কুহি তাঁর রিসালা ফিল বারকার আল-তাম’-এর একটি অংশে এস্ট্রোল্যাব নির্মাণের সমস্যাবলী নিয়েও আলোচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখিত বইটি দু’টি অংশে বিভক্ত। প্রথমাংশে রয়েছে চারটি অধ্যায় এবং দ্বিতীয়াংশে সাতটি। আল-কুহি তাঁর গ্রন্থে মানচিত্র অঙ্কনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন।
আল কুহি গ্রীকদের উচ্চতর জ্যামিতিকে ইসলামী বিশ্বে পুনরুজ্জীবিত এবং চালু করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি জ্যামিতিতে দ্বিঘাত ও ঘন সমীকরণের সমাধান দিয়েছেন। আল কুহি তাঁর গ্রন্থে জ্যামিতিক সমস্যাগুলোর যে সমাধান দিয়েছেন সেগুলোর একটি সম্পর্কে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ নাসির আল দীন আল তুসি (ঘধং̣রৎ ধষ উরহ ধষ ঞঁংর) (১২০১-১২৭৪ খৃষ্টাব্দে) তাঁর বিখ্যাত গ্রীক গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিসের (অৎপযরসবফবং: ২৮৭ ইঈ-২১২ ইঈ) গোলক এবং সিলিন্ডার (ঝঢ়যবৎব ধহফ ঈুষরহফবৎ) ‘এর সংস্করণে আল-কুহির নিম্নলিখিত নোটটি যোগ করেছেন;’ একটি প্রদত্ত গোলকের সমান আয়তনের একটি গোলক অংশ এবং দ্বিতীয় গোলকের অংশের সমান ক্ষেত্রফল তৈরি করতে- একটি সমস্যা অনুরূপ কিন্তু আর্কিমিডিস দ্বারা সমাধান করা এ সম্পর্কিত সমস্যার চেয়েও কঠিন- আল-কুহি ছেদ করে দুটি অজানা দৈর্ঘ্য তৈরি করেছিলেন একটি প্যারাবোলা সহ একটি সমবাহু হাইপারবোলা এবং ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছেন যে শর্তগুলির অধীনে সমস্যাটি সমাধানযোগ্য। (‘ঞড় পড়হংঃৎঁপঃ ধ ংঢ়যবৎব ংবমসবহঃ বয়ঁধষ রহ াড়ষঁসব ঃড় ধ মরাবহ ংঢ়যবৎব ংবমসবহঃ, ধহফ বয়ঁধষ রহ ংঁৎভধপব ধৎবধ ঃড় ধ ংবপড়হফ ংঢ়যবৎব ংবমসবহঃ-ধ ঢ়ৎড়নষবস ংরসরষধৎ ঃড় নঁঃ সড়ৎব ফরভভরপঁষঃ ঃযধহ ৎবষধঃবফ ঢ়ৎড়নষবসং ংড়ষাবফ নু অৎপযরসবফবং-অষ-ছঁযর পড়হংঃৎঁপঃবফ ঃযব ঃড়ি ঁহশহড়হি ষবহমঃযং নু রহঃবৎংবপঃরহম ধহ বয়ঁরষধঃবৎধষ যুঢ়বৎনড়ষধ রিঃয ধ ঢ়ধৎধনড়ষধ ধহফ ৎরমড়ৎড়ঁংষু ফরংপঁংংবফ ঃযব পড়হফরঃরড়হং ঁহফবৎ যিরপয ঃযব ঢ়ৎড়নষবস রং ংড়ষাধনষব.’)
গ্রীক গণিতজ্ঞ ইউক্লিডের (ঊঁপষরফ: ৩২৫ ইঈ-২৬৫ ইঈ) এলিমেন্টস (বষবসবহঃং)’, আরেক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এপোলনিয়াসের (অঢ়ড়ষষড়হরঁং: ২৬২ ইঈ-১৯০ ইঈ) ‘কনিক্স (পড়হরপং)’ এবং আর্কিমিডিসের ‘অন দ্য স্ফিয়ার এন্ড সিলিন্ডার (ড়হ ঃযব ংঢ়যবৎব ধহফ পুষরহফবৎ)’-এর ফলাফল ব্যবহার করে উল্লেখিত এ জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান বের করা ছিল একটি ক্লাসিক রীতি। আল-কুহি প্রমাণ করেছেন যে, কোনো সমাধানের অস্তিত্ব থেকে থাকলে তার স্থানাঙ্ক থাকতে হবে। স্থানাঙ্কগুলোর অবস্থান হবে কোনো নির্দিষ্ট অঙ্কিত আয়তাকার পরাবৃত্তের মধ্যে।
নিশ্চয়ই আল-কুহি আধুনিক শাব্দিক অর্থে তাঁর গাণিতিক ধারণা প্রকাশ করেননি। বরং তিনি প্রাচীন গ্রীক গণিতের প্রচলিত ক্লাসিক্যাল জ্যামিতিতে তাঁর ধারণা প্রকাশ করেছেন। আল কুহি তলের কোণ প্রবর্তন করেন। তাতে দেখানো হয় যে, অধিবৃত্তের স্থানাঙ্কের মধ্যে তার সমাধান নিহিত। পরবর্তীতে দু’টি বক্র রেখা দ্বিখÐিত করার মধ্য দিয়ে তিনি চমৎকারভাবে এই সমস্যার সমাধান দেন। বর্ণনাত্মক জ্যামিতিক পদ্ধতির সদৃশ পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি গোলকে বৃত্ত অঙ্কন করেন। আল কুহি তাঁর ‘রিসালা ফি কিসমত আল-জাবিয়ায় (ঙহ ঃযব ঞৎরংবপঃরড়হ ড়ভ ঃযব অহমষব) একটি অধিবৃত্তের সহায়তায় একটি কোণকে ত্রিখÐিত করার সমাধান দেন। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ আল-সিজ্জি তাঁর এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
আল কুহির ‘রিসালা ফি ইসতিখারাজ দিল আল-মুসাব্বা আল-মুতাসাবিল-আদলা’য় (ঙহ ঃযব পড়হংঃৎঁপঃরড়হ ড়ভ ঃযব জবমঁষধৎ ঐবঢ়ঃধমড়হ) কোণ ত্রিখÐিত করার অঙ্কন পদ্ধতি ছিল আর্কিমিডিসের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। ১:২:৪ অনুপাতের একটি কোণের সহায়তায় তিনি একটি ত্রিভুজ অঙ্কন করেন। কুহি একটি অধিবৃত্ত ও পরাবৃত্ত দ্বিখÐিত করে সমান প্যারামিটারে উল্লেখিত অনুপাতের বাহুগুলো অঙ্কন করেন।
আল-সিজ্জি তাঁর এই পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ করেন। আল কুহি তাঁর ‘রিসালা ফি আমল মুখামাস মুসাবিল আল-আদলা ফি মুরাব্বা মালুম’ (ঙহ ঃযব পড়হংঃৎঁপঃরড়হ ড়ভ ধহ বয়ঁরষধঃবৎধষ ঢ়বহঃধমড়হ রহ ধ শহড়হি ংয়ঁধৎব) এ দু’টি কোণ দ্বিখÐিত করার মধ্য দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট বর্গক্ষেত্রে একটি সমকোণী পঞ্চভুজ অঙ্কনের সমস্যা সমাধান করেন। এবার তিনি সহায়তা নেন দুটি অধিবৃত্তের। আল কুহি ইউক্লিডের এলিমেন্টসের প্রথম থেকে পঞ্চম অধ্যায়, ইউক্লিডের ডাটা এবং এপোলনিয়াসের কনিক্সের প্রথম থেকে তৃতীয় অধ্যায়ের অংশবিশেষের সহায়তায় পঞ্চভুজ অঙ্কনের সমাধান বের করেন। অধিবৃত্তের মূল ডাইরেক্ট্রিজ (উরৎবপঃৎরী) ধর্ম প্রমাণ করায় কুহির এ অঙ্কন তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি স্বাধীনভাবে অধিবৃত্তের ডাইরেক্ট্রিজের (উরৎবপঃৎরী) ধর্ম উদ্ভাবন ও প্রমাণ করেন এবং এপোলনিয়াসের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যান। আল কুহি তাঁর ‘রিসালা ফি ইসতিখরাজ মিসাহাত আল-মুজাসসাম আল-মুকাফি’তে (ঙহ সবধংঁৎরহম ঃযব চধৎধনড়ষরপ ইড়ফু) আর্কিমিডিসের চেয়ে সহজ ও স্পষ্ট সমাধান দিয়েছেন।
একটি বর্গক্ষেত্রে একটি পঞ্চভুজ অঙ্কন করা অসম্ভব হলেও দু’টি উপায়ে সমকোণী পঞ্চভুজ অঙ্কন করা যেতে পারে। প্রথম উপায়টি হলো ‘দ্বিঘাত সমীকরণ’। নবম শতাব্দীতে আবু কামিল সুজা (অনঁ শধসরষ ংযঁলধ-একজন বিখ্যাত মুসলিম গণিতজ্ঞ, ৮৫০ খৃষ্টাব্দ-৯৩০ খৃষ্টাব্দ) এই উপায়ে সমাধান করতেন। দ্বিতীয় উপায়টি হলো ‘ঘন সমীকরণ। আল-কুহি দ্বিতীয় পন্থাটি অবলম্বন করেছিলেন। আল কুহির ‘রিসালা ফি ইসতিখরাজ মিসাহাত আল- মুজাসসাম আল-মুকাফি’ ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দে ভারতের হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া ওরিয়েন্টাল পাবলিশিং থেকে প্রকাশ করা হয়। আল-কুহি এবং গণিতে আগ্রহী উচ্চ সরকারী কর্মচারী আবু ইসহাক আল সাবির মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। আল-কুহি ও আল-সাবির মধ্যে পত্র যোগাযোগে হতো। তাঁদের মধ্যে ৬টি পত্র বিনিময় হলেও চারটির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। গাণিতিক সমস্যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে পত্র বিনিময় হয়। একটি পত্রে আল কুহি লিখেছিলেন, ‘ধরুন আমাদেরকে একটি বৃত্ত এবং দুটি পরস্পর ছেদকারী সরল রেখা ষ এবং স দেওয়া হয়েছে। ধরুন ঞ একটি বিন্দুতে বৃত্তের স্পর্শকটি ষ-এ খএর সাথে এবং স-এ গ-এর সাথে মিলিত হয়। কীভাবে একজন ঞ বেছে নিতে পারেন যাতে ঞখ: ঞগ একটি প্রদত্ত অনুপাতের সমান হয়?’
পত্রগুলার মধ্যে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই পত্রে আল কুহি বিভিন্ন ফিগারের কেন্দ্রবিন্দু সংক্রান্ত ৬টি স্বতঃসিদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন। ৬টির মধ্যে পাঁচটির ফল সঠিক। তবে ষষ্ঠটি ভুল। এতে বলা হয়েছিল, একটি অর্ধবৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু ৩:৭ অনুপাতে একটি ব্যাসার্ধকে বিভক্ত করেছে। এ ভুল ফল থেকে আল-কুহি একই ভুল সিদ্ধান্তে পৌছান যে, π = ২৮/৯। একারনে একথা প্রমাণিত হচ্ছে শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞরাও ভুল করতে পারেন।
আল কুহির রচনাসামগ্রী: আল-কুহী গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধে বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। জ্যামিতির উপর তাঁর অনুরাগ বেশি ছিল। জ্যামিতির উপর তিনি প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা করেন। আর্কিমিডিস ও এপোলেনিয়াসের জ্যামিতিক সমস্যাবলীকে কেন্দ্র করেই তিনি তাঁর জ্যামিতিক গবেষণায় নিমগ্ন হন। এই গবেষণা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রা সমীকরণের সমাধানের সমস্যা দেখা দেয়। এর অনেকগুলোরই সমাধানে তিনি সাফল্য লাভ করেন এবং সমাধানের পদ্ধতি বের করেন। এর একটি হলো কোন নির্দিষ্ট গোলকের কোন অংশের সমান আয়তনের (ঠড়ষঁসব) অন্য একটি অংশ অঙ্কন করার পদ্ধতি। বিখ্যাত আমেরিকান গণিতজ্ঞ মারটনের মতে, আল-কুহীর জ্যামিতিই আরব জ্যামিতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আল কুহির বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে নিম্নের উল্লেখিত গ্রন্থগুলো অন্যতম:- ১. ‘রিসালা ফিল বারকার আল-তাম’ (ঙহ ঃযব ঢ়বৎভবপঃ ঈড়সঢ়ধংং)
২. ‘রিসালা ফি কিসমত আল-জাবিয়া (ঙহ ঃযব ঞৎরংবপঃরড়হ ড়ভ ঃযব অহমষব)
৩. ‘রিসালা ফি ইসতিখারাজ দিল আল-মুসাব্বা আল-মুতাসাবিল-আদলা’ (ঙহ ঃযব পড়হংঃৎঁপঃরড়হ ড়ভ ঃযব জবমঁষধৎ ঐবঢ়ঃধমড়হ)
৪. ‘রিসালা ফি আমল মুখামাস মুসাবিল আল-আদলা ফি মুরাব্বা মালুম’ (ঙহ ঃযব পড়হংঃৎঁপঃরড়হ ড়ভ ধহ বয়ঁরষধঃবৎধষ ঢ়বহঃধমড়হ রহ ধ শহড়হি ংয়ঁধৎব)
৫. ‘রিসালা ফি ইসতিখরাজ মিসাহাত আল-মুজাসসাম আল-মুকাফি’ (ঙহ সবধংঁৎরহম ঃযব চধৎধনড়ষরপ ইড়ফু)
৬. রিসালা ফিল দাওয়া ইরআস-সুমুত ফি আল আস্তুরলসিব (জরংধষধ ভও ফধধি রৎ ধং-ংঁসঁঃ ভঃ ধষ-ধংঃঁৎষপরন) (অুরসঁঃয ঈরৎপষবং ড়হ ঃযব অংঃৎড়ষধনব).
ইন্তেকাল: বিশ্ববিখ্যাত গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আল কুহি ১০০০ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন পারস্যে (বর্তমান ইরান ও ইরাক) ইন্তেকাল করেন। পৃথিবীর গণিত-জ্যোতির্বিদ্যা-পদার্থবিজ্ঞান তথা সামগ্রিক বিজ্ঞানজগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
লেখক : গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী