আল-আকসা ঘিরে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘর্ষ যে কারণে

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

ইসরায়েলের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের সাথে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারিদের আবারও সংঘর্ষ হয়েছে, এতে ২০ জন আহত হয়েছে বলে খবর দিচ্ছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
স্থানীয় সময় রোববার ফজরের নামাজের পর ইসরায়েলি পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেসময় ফিলিস্তিনিদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে শুক্রবার আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযানে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। তিনশর মতো ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার থেকে প্রতিদিন বিক্ষোভকারীরা মসজিদে জড়ো হচ্ছে এবং সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শুক্রবার মসজিদ চত্বরে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে এক ফোনালাপে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
আমাদের আলাপের সময় আমি মুসল্লিদের উপর ইসরাইলি হস্তক্ষেপের জোরালো নিন্দা জানিয়েছি। এই মসজিদের পবিত্রতার প্রতি যেকোনো উস্কানি এবং হুমকির বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো। তুরস্ক সবসময় ফিলিস্তিনের সাথে আছে। এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন তিনি।
ভ্যাটিকান নিউজ বলছে, ইস্টার সানডে’র বিশেষ বার্তায় মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান সবার জন্য সেখানে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করার আহবান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কামনা করেন।
পোপ বলেছেন, ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি এবং আর অন্য সকল মানুষ যারাই এই পবিত্র নগরীর বাসিন্দা, তীর্থযাত্রীদের সাথে তারা সকলে একত্রে মিলে যেন তার শান্তিপূর্ণ সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। একে অপরের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, সবার জন্য যেন এই পবিত্র যায়গাটি উন্মুক্ত হয়।
ইসরায়েলি পুলিশ বলছে, শুক্রবার তাদের উপর হামলা চালানোর পর তারা মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করেছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী শুক্রবার ভোর চারটার দিকে মিছিল নিয়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনি মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করে। যাদের অনেকেই হামাসের পতাকা বহন করছিলেন। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে।
জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করে অভিযান চালিয়ে সেখানে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের রাবার বুলেট ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ইসরায়েলি পুলিশ।
ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদের ভেতরেও প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আল-আকসা কেন বিবাদের ইস্যু মুসলিম এবং ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত আল আকসা মসজিদ ঐতিহাসিকভাবে বিবাদের ইস্যু। দুই ধর্মাবলম্বীরাই এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। আর সেটি নিয়ে বহু যুগ ধরে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বন্দ্ব।
মুসলিমদের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান এটি। মসজিদ চত্বর মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবে পরিচিত।
ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচাইতে পবিত্র স্থান।
বাড়েছে উত্তেজনা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের অভিযান সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই অপরাধ এবং এর পরিণতির জন্য তারাই (ইসরায়েল) সরাসরি এবং সম্পূর্ণরূপে দায়ী।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং তাদের পবিত্র মসজিদ রক্ষায়’ শুক্রবার সেখানে হাজারে হাজারে ফিলিস্তিনিদের জড়ো হওয়ার জন্য ডাক দেয়া কয়েকটি গোষ্ঠী। এরপরই সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সাম্প্রতিক সময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এবং সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরের জেনিন অঞ্চলে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ১৭ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিন কিশোর আহত হওয়ার পর শুক্রবার তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওইদিন তেল আভিভে একজন ফিলিস্তিনির হাতে তিনজন ইসরায়েলির মৃত্যুর পর পশ্চিম তীরের জেনিন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনিদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জেরে এ পর্যন্ত কুড়িজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বন্দুকধারী বলে উল্লেখ করছে।
দুই সপ্তাহের মধ্যে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি আরবরা এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ইসরায়েলিদের উপর হামলা চালিয়েছে। যাতে বারো জন ইসরায়েলি এবং দুইজন ইউক্রেনিয়ান নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। বলা হচ্ছে গত ১৫ বছরের মধ্যে ইসরায়েলিদের জন্য এটি ছিল সবচেয়ে সহিংস সময়। এতে ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্ক নেমে এসেছে এবং ফিলিস্তিনিদের উপর অভিযানও বাড়ছে।
গত বছর আল আকসা মসজিদকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস জেরুজালেমকে লক্ষ করে রকেট ছুঁড়েছিল। এরপর এগারো দিন ধরে যুদ্ধ চলে।
শুক্রবার ‘পাসওভার’ উৎসব পালনের অংশ হিসেবে ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও আল আকসা চত্বরে ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ হিসেবে পরিচিত অংশে প্রার্থনা করছিলেন।
মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাস, ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসব এবং খ্রিস্টানদের ইস্টার একই সাথে পড়ে যাওয়ায় সব ধর্মাবলম্বীরাই এসময় আল আকসা চত্বরে প্রবেশ করছেন।
নয়দিনব্যাপী চলা ‘পাসওভার’ উৎসবের সময় আল আকসায় ইহুদিদের প্রবেশ অনেক বেড়ে যায়। এই সময় এমনিতেই এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করে।
বার্তা সংস্থা এএফফি জানাচ্ছে উত্তেজিত পরিস্থিতিতে রোববার ইহুদিদের পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে আল আকসা চত্বর থেকে বের হতে দেখা গেছে।
নতুন করে ইসরায়েলিদের অভিযান বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরো সংঘাতময় হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূত্র : বিবিসির।