আল্লাহ নিজেই রোজাদারের পুরস্কার দেবেন

6

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

রমাদান অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া, আগুন যেমন স্বর্ণকে জ্বালিয়ে খাঁটি স্বর্ণে পরিণত করে, তেমনি রোজাও এ মাসের ইবাদত বন্দেগী দ্বারা মুসলমানদের গুনাহকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযোগী করে তোলে। রমজান আল্লাহর নাম সমূহের একটি নাম। তাই একে সম্মান করার নির্দেশ রয়েছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রমজান এসেছে, রমজান চলে গেছে এরূপ বলোনা, বরং বলো রমজানের মাস এসেছে, কেননা রমজান আল্লাহর নাম সমূহের একটি নাম। (রুহুল বয়ান) তাই একে আল্লাহর মাস বলা হয়ে থাকে।
সিয়াম-সাধনা আপাত দৃষ্টিতে একটু কষ্টকর মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত কল্যাণকর। রোজার সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রাত্যহিক নিয়মে একটু ছেদ পড়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে। যেহেতু ১১ মাস আমরা সকাল থেকে রাত অবধি খেয়ে থাকি, কতো পানীয় পান করে থাকি, তবুও ক্ষুধা-তৃঞ্চা পিছু ছাড়ে না। তবে এ একমাস সুবহে সাদেক (প্রকৃত ভোর) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছু খেতে বা পান করতে পারি না। তাই একটু কষ্ট হয় বৈকি। যত কষ্টই হোক না কেন- এর প্রতিদানও কিন্তু তত বড়। মুমিন বান্দারা সারাদিন ক্ষুধা পিপাসায় কষ্ট ভোগ করে এবং রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করে তবুও তার অন্তরে আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়, মনে প্রশান্তি এসে যায়। প্রকৃতপক্ষে রোজাদাররাই অনুভব করে রোজা আদায়ের আনন্দ। সর্বোপরি রোজার অন্যতম প্রতিদান আল্লাহর দর্শন লাভ।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আদম সন্তানদের সব পুণ্যকর্মের সওয়াব বর্ধিত করা হয়। একটি পুণ্যকর্মের সওয়াব ১০গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রদান করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয় ব্যতিক্রম। কেননা, রোজা আমারই জন্য, এর বদলা আমিই দেবো। রোজাদার নিজের নাফসের প্রবৃত্তি এবং খাবার পরিত্যাগ করে আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। রোজাদারের জন্য দুই প্রকারের আনন্দ রয়েছে- এক. ইফতারের সময়। দুই. আল্লাহ পাকের সাক্ষাৎ লাভের মুহূর্তে। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের চেয়েও বেশী সুগন্ধী। আর রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল স্বরূপ। (সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফ) কিয়ামত দিবসে রোজা ব্যতীত অন্যান্য ইবাদতের সওয়াব বদলা হিসেবে অন্য কেউ নিয়ে নিতে পারবে, অর্থাৎ কোন বান্দা যদি দুনিয়াতে অপরের হক নষ্ট করে তার পুণ্যকর্মের সওয়াব ওই বান্দার আমল নামায় যোগ হবে, যার হক নষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু এক্ষেত্রে রোজা ব্যতিক্রম। কারণ আল্লাহ বলেন, আমিই এর প্রতিদান বা বদলা হবো। সব ইবাদতের পরিবর্তে বেহেশত লাভ হয়। রোজার পরিবর্তে বেহেশতের স্রষ্টা আল্লাহকেই পাওয়া যাবে।
রোজা গোপন ইবাদত; একজন ব্যক্তি নিজে না বলা পর্যন্ত অন্য কেউ জানতে পারে না, তিনি রোজাদার কিনা। আল্লাহ গোপন ইবাদতকে বেশি পছন্দ করেন। যেহেতু সব মুমিন মুসলমান আল্লাহর যেসব ইবাদত করে থাকেন, তা সবাই দেখতে পায় কিন্তু রোজা দেখা যায় না।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি লোকচক্ষুর অন্তরালে চুপে-চুপে পানাহার করতে পারে অনায়াসে, কিন্তু একমাত্র আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর প্রেমে আল্লাহর দিদার-দর্শন লাভের উদ্দেশ্যে রোজা আদায় করে থাকেন। তাই আল্লাহ রব্বুল আলামীন রোজাদারের এ কঠোর ত্যাগ ও আত্মসংযমের পুরস্কার নিজেই দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শুদ্ধতার সাথে রোজা আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমীন।