আলীকদমে অবাধে চলছে অবৈধ করাতকল

39

বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২ না মেনে বিনা লাইসেন্সে ৬টি করাত-কলে দিনে-রাতে শত শত ফুট কাঠ চিরাই হচ্ছে। করাতকল স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পালনীয় শর্তাদি’র কোনটির তোয়াক্কা করছেনা করাত-কল পরিচালনাকারীরা। জানা গেছে, করাত-কল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ এর ৭ ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত ও অন্য যে কোন ধরণের সরকারী বনভূমি ও আন্তর্জাতিক স্থল সীমানার ১০ কিলোমিটার এর মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যায় না। অথচ আলীকদম উপজেলার লাইসেন্সবিহীন করাত-কলসমুহ সরকারী বনভূমির একেবারে কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে। যা ১০ কিলোমিটারের কম। স্থানীয় আলী আকবর নামের এক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগে জানা গেছে, ‘লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকলে প্রতিদিনই চিরাই হচ্ছে গড়ে ২ হাজার ঘনফুট চোরাইকাঠ। যার বেশীরভাগ কাঠ সংগ্রহ করা হয় সংরক্ষিত বনভূমি মাতামুহুরী রিজার্ভ থেকে। বিনা রাজস্বে অবৈধভাবে সংগৃহিত চিরাই কাঠ স্থানীয় ফার্নিচার দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় বনবিভাগ ও প্রশাসনের এ ব্যাপারে উদাসীন রয়েছে। জানা যায়, ইতোপূর্বে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা করাতকল বিধি অনুসরণ না করে করাত-কল স্থাপন করা হয়েছে মর্মে জেলা প্রশাসনকে পত্র দেন। জেলা প্রশাসন থেকে জারী করা এক পত্রে অবৈধ করাতকলগুলো সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশের দেড়যুগ পরও করাত-কলগুলো অপসারণ হয়নি। বন্ধ হয়নি করাতকলের ধ্বংসলীলা। বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, মে ২৭, ২০১২ তারিখ প্রকাশিত ‘করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২’ এর ৭ ধারায় করাত-কল স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে পালনীয় শর্তাদি হিসেবে বলা হয়েছে, ‘সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বন ভূমির সীমানা হইতে ন্যূনতম ১০ (দশ) কিলোমিটারের মধ্যে এবং কোন সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিঘ্ন সৃষ্টি করে এইরূপ কোন স্থানের ন্যূনতম ২০০ (দুইশত) মিটার এর মধ্যে করাতকল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না। সরেজমিন দেখা যায়, করাতকল বিধি মালা ২০১২ এর ৭নং ধারার পুরোপুরি লঙ্ঘন করে স্থাপিত ও পরিচালিত হচ্ছে বেশীরভাগ করাত-কল। করাত-কলের কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে লামা বন বিভাগের আওতাধীন মাতামুহুরী রিজার্ভের। প্রতিটি করাতকলে রাতদিন যেসব গাছ চিরাই হচ্ছে তার ৯০% ভাগ রিজার্ভ ফরেস্টের। করাত-কলে চিরাই করা গাছের সবটুকই উপজেলা শতাধিক ফার্নিচার দোকানে অবৈধভাবে ফার্নিচার তৈরীর কাজে হজম করা হয়। এ ব্যাপারে লামা বিভাগের তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আলীকদমের সব ক’টি করাতকল এই আইন না মেনে অতীতে স্থাপিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন চাইলে অভিযান হতে পরে।