আলবেনিয়ান কবি ইসমাইল কাদারে’র দুটি কবিতা

68

অনুবাদ : আকিব শিকদার

ইসমাইল কাদারে; আলবেনিয়ান কবি, ঔপন্যাসিক, রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী। ২৮ জানুয়ারি, ১৯৩৬ সালে আলবেনিয়ার জিরোকাস্তারে জন্মগ্রহণ করেন এই মেধাবী লেখক। ইসমাইল কাদারের বাল্যকাল কাটে আলবেনিয়ার জিরোকাস্তারে। সেখানে স্কুলজীবন শেষ করে ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশুনা করেন তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন ফ্যাকাল্টিতে। এরপর ভর্তি হন মস্কোর গোর্কি ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার্ল্ড লিটারেচারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে পেশা হিশেবে গ্রহণ করেন সাংবাদিকতা। আলবেনিয়ান কম্যুনিস্ট, ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন ও শোষিত মানুষের চিত্র তাকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। ১৯৫৭ সালে লিখে ফেলেন প্রথম কবিতার বই “ড্রিমস” যা মস্কোতে প্রকাশিত হয়।
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো দ্য ওয়েডিং (১৯৬৪), দ্য ক্যাসেল (১৯৭০), ক্রোনিকল ইন স্টোন (১৯৭১), ব্রোকেন এপ্রিল (১৯৮০), দ্য পিরামিড (১৯৯২), ইত্যাদি। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক কারণে ও ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লেখার অভিযোগে তার বই প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এমনকি তার বিদেশ ভ্রমণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল বহুকাল। ১৯৯৬ সালে, তিনি ফ্রান্সের একাডেমি অব মোরাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের আজীবন সদস্য হিশেবে যোগদান করেন। ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ সহ অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেছেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের জন্যও তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল, কিন্তু শেষে দেওয়া হয় নি। তার বই পৃথিবীর পঁয়তাল্লিশটিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

জলপ্রপাত

খাড়া জলপ্রপাতের ধারাগুলো
তেজি সাদা ঘোড়ার মতো নেচে নেচে নামে নিচে
তাদের ফেনিল, বর্ণিল কেশরগুলো যেন রংধনু।
কিন্তু অকস্মাৎ, পাহাড়-প্রান্তে
সামনের পা গুলোর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল,
আহা, ভেঙে গেল তাদের শুভ্র সফেদ পা
এবং তারা পাথরের লাথি খেয়ে মারা গেল।
এখন তাদের পলকহীন মৃত চোখগুলোয়
তুষারশীতল আকাশের প্রতিবিম্ব।

ট্রেনের সময়সূচি

ছোটখাটো স্টেশনগুলোর ট্রেনের সময়সূচি ভালো লাগে আমার
স্যাঁতস্যাঁতে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে অসংখ্য, অসীম রেললাইন অধ্যয়ন করি।
হঠাৎ গর্জন, পায়চারি থামে। কেউ চমকে ওঠে মুহূর্তখানেক, কী হলো?
(যেন কেউ বুঝতে পারে না স্টিম ইঞ্জিনের অস্পষ্ট ভাষা)
যাত্রীবাহী ট্রেন আসে। মালগাড়ি চলে যায়। দামি আকরিকসহ কত
মালবাহী ট্রেন, যারা একে একে আসে, যায়, সমাপ্তিবিহীন।
এভাবেই কেটে যায়, আমাদের জীবনের দিন
যার যার স্টেশনে। চেঁচামেচি, কোলাহল ও সিগন্যালপূর্ণ স্টেশন
যেখানে চলাচল করে স্মৃতির আকরিক বোঝাই সব মালবাহী ট্রেন।